সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হিন্দু মহাসভা প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা করো।

‘হিন্দু মহাসভা’ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা করো।

Background to the establishment of the Hindu Mahasabha,হিন্দু মহাসভা প্রতিষ্ঠার পটভূমি
হিন্দু মহাসভা প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা করো।
১৯১৫ সালে উত্তরপ্রদেশের হরিদ্বারে কুম্ভমেলা চলাকালে মদনমোহন মালব্যের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা’ যা সংক্ষেপে ‘হিন্দু মহাসভা’ নামে পরিচিত। মুসলিম লীগের মতো হিন্দু মহাসভাও ভারতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

হিন্দু মহাসভা প্রতিষ্ঠার পটভূমি :

ভারতে হিন্দু মহাসভা ও হিন্দু সম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ও প্রসারের পিছনে যে সমস্ত ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তা হল—

১) সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিকদের ইতিহাস বিকৃতি :

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা ভ্রান্ত ইতিহাস চেতনার জন্ম দেয় এবং ভারতের ইতিহাসকে সচেতন ভাবে বিকৃত করে। উদ্দেশ্য ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ নীতি প্রয়োগ করে ব্রিটিশ শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করা।
  1. ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের ভূমিকা : ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জেমস মিল ভারতের ইতিহাসকে হিন্দু যুগ, মুসলিম যুগ এবং ব্রিটিশ যুগ— হিসেবে ভাগ করেন এবং ব্রিটিশ শাসনের  সুবিধার্থে মধ্যযুগে হিন্দুদের উপর মুসলমান শাসকদের অত্যাচারের বিকৃত ইতিহাস রচনা করেন। 
  2. মুসলমান বিরোধী প্রচারাভিযান : ১৮৭০ এর দশকে এই বিকৃত ইতিহাসের প্রভাবে এবং নিজেদের শ্রেণিগত স্বার্থে হিন্দু জমিদার, মহাজন, ব্যবসায়ী ও ব্রিটিশ সরকারের কিছু ভারতীয় কর্মচারী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গঠন করে মুসলমান বিরোধী প্রচার অভিযানে লিপ্ত হয়। এরা সুলতানি ও মুঘল শাসকদের অত্যাচারী এবং ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতি ধ্বংসকারী হিসেবে হিন্দু সমাজের কাছে তুলে ধরে।
স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ হিন্দু জনমানসে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভীষণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

২) ভাষা বিষয়ক বিতর্ক :

এই সময় থেকেই উত্তর প্রদেশ ও বিহারে এই ধরণের সংগঠনগুলি হিন্দি ভাষাকে অবলম্বন করে সাম্প্রদায়িক প্রচার শুরু করে। এরা প্রচার করে হিন্দি হল হিন্দুদের ভাষা আর উর্দু মুসলমানদের ভাষা। এই বিতর্ক উত্তর ভারতে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার প্রসার ঘটায়। 
[যদিও এই দাবিটি সম্পূর্ণ অনৈতিহাসিক। কারণ, হিন্দি হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের ভাষা আর উর্দু ও সংস্কৃত ছিল যথাক্রমে মুসলিম ও হিন্দু উচ্চবর্গের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ভাষা। দুটি ভাষারই জন্ম মধ্যযুগে মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায়।]

৩) গোহত্যা বিরোধী আন্দোলন :

প্রাচীন যুগে নয়, মধ্যযুগে গরু ভারতীয় হিন্দু সমাজে পবিত্রতা ও দেবত্বের প্রতীক্ষ হয়ে ওঠে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি মুসলমানদের ঈদের সময় গরু জবাই করার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম ভারত সহ রোহিলা খন্ড অযোধ্যা প্রভৃতি অঞ্চলে এই আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। 
[লক্ষণীয় বিষয় হল, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জন্য নির্বিচারে গোহত্যা হলেও এই আন্দোলন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নয়, শুধুমাত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই আন্দোলন সাম্প্রদায়িক রূপ ধারণ করে।]

৪) আর্য সমাজের ভূমিকা :

আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর ‘শুদ্ধি আন্দোলনে’র মাধ্যমে হিন্দুদের হিত গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।
  1. ধর্মত্যাগী হিন্দুদের পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন।
  2. ১৮৮২ সালে ‘গো-রক্ষিণী সভা’ প্রতিষ্ঠা করে গো-হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। 
  3. এবং ‘গো-করুণানিধি’ গ্রন্থের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে অত্যন্ত আক্রমাত্মক করে তোলেন।
ফলে অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে আর্য সমাজের সদস্যদের সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। 

৫) সহবাস সম্মতি বিল ও তার প্রতিক্রিয়া :

১৮৯১ সালে বড়লাট ল্যান্স ডাউন ‘সহবাস সম্মতি বিল’ পাস করেন। এই বিলের মাধ্যমে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১০ থেকে বাড়িয়ে ১২ করা হয়। প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠাতা মহাদেব গোবিন্দ রানাডে এই আইনকে সমর্থন করলেও কংগ্রেসের চরমপন্থী নেতা বালগঙ্গাধার তিলক এর তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং প্রচার করেন এই আইনের মাধ্যমে সরকার হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। 

৬) সরকারের মুসলিম তোষণ নীতি :

ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে আসছিল। অন্যদিকে মুসলিমদের সঙ্গে ছিল বৈরিতার সম্পর্ক। কিন্তু ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর পরিস্থিতি উল্টো খাতে বইতে শুরু করে। স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের নেতৃত্বে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ব্রিটিশের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করতে থাকে। হিন্দুত্ববাদীরা এই ঘটনাকে মুসলিম তোষণ নীতি বলে আখ্যায়িত করেন। ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে মুসলিম-ভীতি তৈরি হয়। 

৭) জাতীয় কংগ্রেসের ব্যর্থতা :

জাতীয় কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির উপর হিন্দুত্ববাদী নেতারা আস্থা রাখতে পারেননি। ‘মর্লে মিন্টো সংস্কার আইনে’র মাধ্যমে আইনসভার নির্বাচনে মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে সরকারের মুসলিম তোষণ নীতি আটকানোর ক্ষেত্রে কংগ্রেসের দুর্বলতা প্রকাশ পায় বলে অভিযোগ করেন হিন্দুত্ববাদী নেতারা।

৮) চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের প্রসার :

এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের চরমপন্থী নেতারা ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও হিন্দুধর্মের পুনরুজ্জীবনকে অভিন্ন বলে প্রচার শুরু করে। বালগঙ্গাধর তিলকের গণপতি উৎসব, শিবাজী উৎসব ইত্যাদির প্রচলন এবং বিপিনচন্দ্র পাল, লালা লাজপত রায়, অরবিন্দ ঘোষ প্রমূখ রাজনীতিকদের বক্তৃতার মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে হিন্দুত্ববাদী সংগ্রামী মনোভাব জেগে ওঠে।

৯) বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের প্রভাব :

১৯০১ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘হিন্দু সম্মেলন’, ১৯০২ সালে মথুরায় গড়ে ওঠা ‘ভারত ধর্ম মহামন্ডল’, ‘শুদ্ধি সভা’, ‘সনাতন ধর্মসভা’ সহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘হিন্দ-হিন্দি-হিন্দু’র আদর্শ প্রচার করে হিন্দু সম্প্রদায়িকতাকে আরও গভীরে প্রোথিত করেন। এই সময়ে ভারত ধর্ম মহামন্ডলের অধীনে সারা ভারত জুড়ে প্রায় ৬০০টি শাখা সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়।

১০) পাঞ্জাব হিন্দুসভার প্রভাব :

১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘পাঞ্জাব হিন্দুসভা’। ১৯০৯ সালে পাঞ্জাব প্রাদেশিক হিন্দু সম্মেলনে লালা লাজপত রায় বলেন, “There can be no doubt that Hindus are a nation in themselves, because they represented type of civilization of their own.” এই সংগঠনের প্রধান উদ্যোক্তা লালচাঁদ স্পষ্ট ভাষায় দাবি করেন, বর্তমানে হিন্দুদের উচিত কংগ্রেস ত্যাগ করা এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করা।” এই সভায় তিনি স্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেন, “আমি প্রথমে একজন হিন্দু, তারপর ভারতীয়।

১৯০৯ সালে পাঞ্জাব হিন্দু সভার আন্দোলনের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গোপালকৃষ্ণ গোখলে লেখেন, “এই আন্দোলন খোলাখুল মুসলমান বিরোধী, যেমন মুসলিম লীগ খোলাখুলি হিন্দু বিরোধী এবং উভয়ই জাতীয়তাবাদ বিরোধী।

উপসংহার :

এইভাবে ১৮৫৭ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের মুসলিমবিরোধী ও কংগ্রেস বিরোধী অবস্থান এবং প্রচার হিন্দু মহাসভা গড়ে ওঠার পটভূমি তৈরি করে। ১৯১০ সালের ডিসেম্বর মাসে এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত এক সভায় ‘সর্বভারতীয় হিন্দু মহাসভা’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শেষমেষ ১৯১৫ সালে হরিদ্বারে কুম্ভ মেলার সময় ‘পাঞ্জাব হিন্দুসভা’র উদ্যোগে, মদনমোহন মালব্যের নেতৃত্বে ‘সারা ভারত হিন্দু মহাসভা’ বা ‘হিন্দু মহাসভা’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
------------xx-----------
🔯 [তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে থাকা অংশগুলো ঐচ্ছিক। উত্তর লেখার সময় পরীক্ষার খাতায় এই অংশগুলি ইচ্ছা করলে বাদ দিতেও পারো]

🔯 [মনে রাখতে হবে :

  • ১) মুসলিম লীগ এবং হিন্দু মহাসভা উভয় সংগঠনই উচ্চবর্ণের এবং উচ্চবর্গের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সাধারণ হিন্দু এবং মুসলিম মানুষের কোন স্বার্থই এরা তাদের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করেনি।
  • ২) ধর্মকে এই দুই সম্প্রদায়ের অল্প সংখ্যক মানুষ তাদের শ্রেণিগত স্বার্থের কাজে ব্যবহার করেছেন ধর্ম রক্ষার অজুহাতে
  • ৩) এই দুই সম্প্রদায়ের অল্প সংখ্যক উচ্চবর্গের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে ভয়ংকর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উভয় সম্প্রদায়ের নিম্নবর্গের খেটে খাওয়া মানুষ। দেশভাগের কারণে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ অসহায় ভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং গৃহহীন হয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন।]

এই প্রশ্নটি অন্য যেভাবে আসতে পারে :

  1. হিন্দু সম্প্রদায়িকতাবাদের পটভূমি ব্যাখ্যা করো।
  2. কে কী উদ্দেশ্যে হিন্দু মহাসভা গড়ে তোলেন? হিন্দু মহাসভা গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করো। 
  3. হিন্দু মহাসভা কী? হিন্দু মহাসভা গড়ে ওঠার কারণ কি ছিল? 
  4. বিংশ শতাব্দীতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি গড়ে ওঠার পটভূমি ব্যাখ্যা করো।
  5. অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা গড়ে ওঠার সম্ভাব্য কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
  6. কত সালে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা গড়ে ওঠে? এই সংগঠন গড়ে ওঠার পেছনে কোন্ কোন্ ঘটনাবলী সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল?

এই বিভাগের অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর :

মন্তব্যসমূহ

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)
OUR BOOKS fOR WBBSE & WBCHSE


বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই...

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক...

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়...

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশীর মূল ষড়যন্ত্র :👉  তথ্য তালাশে পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্...

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও ...

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন...

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থি...

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা...

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু ...