সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় হিউমের ভূমিকা কী ছিল?

জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় হিউমের ভূমিকা কী ছিল?

জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় হিউমের ভূমিকা,ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ও হিউম,Humes-role-in-the-establishment-of-the-Indian-National-Congress
জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় হিউমের ভূমিকা কী ছিল?
১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর বোম্বাইতে ৭২ জন জনপ্রতিনিধি নিয়ে সংঘটিত একটি অধিবেশনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় । কংগ্রেসের উৎপত্তি ও তার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে মতপার্থক্য থাকলেও একথা অনস্বীকার্য যে এ ব্যাপারে হিউম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় হিউমের ভূমিকা :

জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় হিউমের ভূমিকা সম্পর্কে দুটি তত্ত্ব লক্ষ্য করা যায়। প্রথমটি ‘সেফটি ভালভ তত্ত্ব’ এবং দ্বিতীয়টি ‘হিউম-ড্যাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’।

ক) সেফটি ভালভ তত্ত্ব :

জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় সেফটি ভালভ তত্ত্বের উল্লেখ পাওয়া যায় দুটি সূত্র থেকে।

১) উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন ও সেফটি ভালভ তত্ত্ব :

হিউমের জীবনী গ্রন্থের লেখক উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন ‘সেফটি ভালভ তত্ত্বে’র প্রবক্তা। তিনি এই জীবনে গ্রন্থে (Alan Octavian Hume : father of Indian National Congress) লিখেছেন, “হিউমী ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের পরিকল্পনাকারী ও প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা।”

উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন-এর মতে, সরকারি দমননীতির ফলে সমগ্র ভারতে বিশেষ করে নিম্নশ্রেণির মানুষেরা যেকোনো সময় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারে —স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কাছে আসা গোপন রিপোর্ট থেকে হিউম এমন আশঙ্কার কথা জানতে পারেন। উপলব্ধি করেন, এরফলে ভারতে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির সমর্থন আদায় এবং তাদের দিয়ে জনসাধারণের ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব দূর করার লক্ষ্য নিয়ে এলেন অক্টোভিয়ান হিউম কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। উইলিয়াম ওয়েডার বার্ন-এর লেখা এই ব্যাখ্যা ‘সেফটি ভালভ তত্ত্ব’ নামে পরিচিত।

২) উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেফটি ভাল্ব তত্ত্ব :

জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা গ্রন্থ (Introduction to Indian Politics) থেকে হিউম ও ড্যাফরিনের মধ্যে একটি সাক্ষাৎকারের কথা জানা যায়। ১৮৮৪ সালে সিমলা শহরে সংঘটিত এই সাক্ষাৎকারে হিউম বড়লাট জাফরিনের কাছে তাঁর কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানালে বড়লাট তাতে সম্মতি জানান এবং কিছু পরামর্শ প্রদান করেন। উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, লট ডাফরিন তাঁর পরামর্শে উল্লেখ করেন, সরকারের কাজের ত্রুটি বিচ্যুতি সম্পর্কে জনসাধারণের মতামত, শিক্ষিত ভারতবাসীর অভিমত জানতে পারলে তার কাজের সুবিধা হবে। সরকারকে মৃদু ধরনের সমালোচনা করার অধিকার পেলে ভারতীয় নেতারা সন্তুষ্ট থাকবেন। জাতীয় কংগ্রেস একটি ‘সেফটি ভালভ’ হিসেবে কাজ করবে।”

খ) হিউম-ড্যাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব :

এই তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন মার্কসবাদী ঐতিহাসিক রজনীপাম দত্ত। একথা অনস্বীকার্য যে, উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক (অস্ত্র আইন, মাতৃভাষায় সংবাদপত্র আইন, ইলবার্ট বিল, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা) কারণে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রবলভাবে ক্ষুব্ধ হয়। মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, দাক্ষিণ ভারতসহ বাংলা প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষক অশান্তোষ তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে সারা ভারতে এক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে, রজনী পাম দত্তের মতে, দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায় যাতে কৃষকদের সঙ্গে মিলে কোন গণবিদ্রোহ সৃষ্টি না করেন সে কথা মাথায় রেখেই হিউম জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন।”

ঐতিহাসিক রজনীপম দত্তের এই ব্যাখ্যা ‘হিউম-ডাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ নামে পরিচিত। রজনীপাম দত্তের কথায়, “বড়লাট লর্ড ডাফরিন ও অবসরপ্রাপ্ত আইসিএস হিউমের মধ্যে এক গোপন চক্রান্তের ফলেই কংগ্রেস স্থাপিত হয়। এই দুই ব্রিটিশ রাজপুরুষ ভারতীয় জনগণের অসন্তোষের বাষ্পকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির দ্বারা গঠিত কংগ্রেসের মাধ্যমে নিরাপদে নির্গত করার জন্য ‘সেফটি ভালভ’ হিসেবে ‘কংগ্রেস’ স্থাপন করেন।”

হিউমের ভূমিকার সমালোচনা :

তবে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে হিউমের ভূমিকার দাবিকে অনেক ঐতিহাসিক অতিরঞ্জন বলে দাবি করেছেন।

ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার, ড. এস আর মেহেরোত্রা-সহ অনেক ঐতিহাসিক হিউমের ভূমিকাকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন।
  1. ড. সুমিত সরকারের মতে, কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে হিউমের ভূমিকাকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। 
  2. এবিষয়ে ড. অমলেশ ত্রিপাঠীর ভাবনা হল, “তখন ভারতবাসীর রাজনৈতিক চেতনা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছিল, তাতে হিউম না থাকলেও কোনো-না-কোনো সর্বভারতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হত।” এক্ষেত্রে তিনি সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জাতীয় সম্মেলন (১৮৮৩) আহ্বানের প্রতি আলোকপাত করেছেন।
  3. ড. অনিল শীলের মতে, “জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা কোন আকস্মিক, চমকপ্রদ, অলৌকিক ঘটনা নয়। এরকম একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ক্ষেত্র কিছুকাল ধরে প্রস্তুত হয়েছিল।
অন্যদিকে, জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা গোপালকৃষ্ণ গোখলে মনে করতেন, “যেকোনো ভারতীয়ের পক্ষে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা সম্ভব ছিল না।... কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা যদি একজন বিখ্যাত এবং সম্ভ্রান্ত প্রাক্তন উচ্চপদস্থ ইংরেজ কর্মচারী না হতেন, তাহলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে যে কোন উপায়ে এই উদ্যোগ দমন করতেন।”

সুতরাং এ কথা বলা যায়, একটি সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ চলছিল অনেক আগে থেকেই। হিউমের উদ্যোগে এই কাজটি ত্বরান্বিত হয় মাত্র। ড. বিপান চন্দ্রের ভাষায়, “১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার কোন আকস্মিক ঘটনা কিংবা ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা ছিল না। এটি একটি রাজনৈতিক জাগরণের পরিণতি।” আর হিউমের উদ্দেশ্য ছিলো, ভারতীয়দের মতামত তুলে ধরার জন্য এবং বিরোধীপক্ষ হিসেবে সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য ভারতে একটি সর্বভারতীয় সংস্থা গড়ে উঠুক, যেখানে উদারপন্থী রাজনীতিক হিসাবে তাঁর নিজের অংশগ্রহণ থাকবে।
------------xx-----------

এই প্রশ্নটি অন্য যেভাবে আসতে পারে :

  1. অ্যালেন অক্টোভিয়ান হিউম কে ছিলেন? জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান ব্যাখ্যা করো।
  2. হিউমকে কী ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জনক’ বলা যায়? যুক্তি দেখাও। 
  3. সেফটি ভালভ তত্ত্ব’ ও ‘হিউম-ডাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ বলতে কী বোঝো? জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় এই তত্ত্বের গুরুত্ব কতটা?
  4. জাতীয় কংগ্রেস গড়ে তোলায় হিউমের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি ছিল?

এই বিভাগের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন :

  1. স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো।
  2. নরমপন্থী আন্দোলনের দুটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো।
  3. নাসিক ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
  4. ‘ড্রেন অফ ওয়েলথ’ তত্ত্ব কী?

মন্তব্যসমূহ

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)
OUR BOOKS fOR WBBSE & WBCHSE


বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই...

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক...

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়...

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশীর মূল ষড়যন্ত্র :👉  তথ্য তালাশে পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্...

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও ...

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন...

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থি...

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা...

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু ...