সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আলীগড় আন্দোলনে স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের ভূমিকা

 আলিগড় আন্দোলনে স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের ভূমিকা

আলীগড় আন্দোলন ও সৈয়দ আহমেদ খানের ভূমিকা,Sir Syed Ahmed Khan's role in the Aligarh Movement, মুসলমান সমাজের রামমোহন, নবজাগরণের অগ্রদূত
আলীগড় আন্দোলনে স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের ভূমিকা

আলিগড় আন্দোলন কী?

স্যার সৈয়দ আহমেদ খান ছিলেন মূলত একজন সমাজ ও শিক্ষা সংস্কারক। উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম সমাজকে কুসংস্কার ও অশিক্ষা থেকে মুক্ত করা এবং সেই লক্ষ্যে সমাজে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো। এছাড়া আধুনিক রাজনৈতিক চিন্তা ও দর্শন সম্পর্কে মুসলিম সমাজকে সচেতন করে তোলা। মূলত এই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য তিনি যে শিক্ষা ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা আলিগড় আন্দোলন নামে পরিচিত।

আলিগড় আন্দোলনে সৈয়দ আহমেদের ভূমিকা :

১৮৬৯ থেকে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত সৈয়দ আহমেদ খান ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন। ভ্রমণ কালে তিনি উপলব্ধি করেন পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার গুরুত্বের কথা। উপলব্ধি করেন মুসলিম সমাজের মধ্যে থাকা কুসংস্কার ও অজ্ঞতা দূর করতে না পারলে মুসলিম সমাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়।

১) ধর্ম সংস্কার ও সৈয়দ আহমেদ খান : 

কিন্তু সমাজ সংস্কারের আগে দরকার ছিল সমাজে প্রচলিত ধর্মীয় চিন্তাভাবনার পরিবর্তন। কারণ ধর্মীয় আদর্শ ও রীতিনীতি সমাজকে গভীরভাবে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে। সে কারণে প্রথমেই তিনি ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে হাত দেন। 

এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি কোরআনের উপর একটি ভাষ্য রচনা করেন এবং বলেন কোরআনই একমাত্র প্রামাণ্য গ্রন্থ যেখানে বর্ণিত আদর্শই মুসলমানদের একমাত্র পালনীয়। কোরআনের এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে মুসলিম সমাজের মধ্যে থাকা গোড়ামী ও রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন।

২) সমাজ সংস্কার ও সৈয়দ আহমেদ খান :

ধর্মীয় সংস্কারের সূত্র ধরেই শুরু হয় সমাজ সংস্কার আন্দোলন। রাজা রামমোহন রায়ইয়ং বেঙ্গল দলের মতো করে তিনি সমাজের রক্ষণশীলতা দূর করার চেষ্টা করেন। সমাজে প্রচলিত পর্দা প্রথা, তালাক প্রথা, পুরুষদের বহুবিবাহ, পীর মুরিদি প্রথার নিন্দা করেন। নারী শিক্ষার পক্ষে প্রচার শুরু করেন। কারণ, তিনি মনে করতেন, নারী জাতির মধ্যে শিক্ষার আলো প্রবেশ না করলে মুসলিম সমাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়।

শেখ চিরাগ আলি, আলতাব হোসেন আলী, মৌলানা শিবলী নোমানি, নাজির আহমেদ প্রমূখ সহকর্মী ও সহযোগীদের মাধ্যমে তিনি এই সংস্কার আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যান।

৩) শিক্ষা সংস্কার ও সৈয়দ আহমেদ খান :

সৈয়দ আহমেদ উপলব্ধি করেছিলেন, ধর্ম এবং সমাজ সংস্কারকে এগিয়ে নিতে হলে মুসলিম সমাজের মধ্যে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার প্রসার ঘটানো দরকার। মূলত এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি শুরু করেছিলেন শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন। এই উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি একের পর এক স্কুল কলেজ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তাঁর উদ্যোগেই একে একে গড়ে ওঠে গুলশান স্কুল (১৮৫৯), ভিক্টোরিয়া স্কুল (১৮৬২), মাদ্রাসাতুল উলুম মুসলমান-এ-হিন্দ (১৮৭৫), মহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ বা আলিগড় কলেজ (১৮৭৭) ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মনে রাখা দরকার, তাঁর মৃত্যুর (১৮৯৪) পর এই কলেজে ১৯২০ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিতি লাভ করে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষার আলোয় আনা মূল লক্ষ্য হলেও আলিগড় কলেজে ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে সব সম্প্রদায়ের মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল। এমনকি সংস্কৃত পড়ানোর ব্যবস্থাও ছিল এই কলেজে।

৪) আধুনিকীকরণ ও সৈয়দ আহমেদ খান:

এ সমস্ত স্কুল এবং কলেজের মাধ্যমে তিনি মুসলিম সমাজকে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে আধুনিকীকরণের চেষ্টা করেন। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি গড়ে তোলেন—
  1. ট্রান্সলেশন সোসাইটি (১৮৬৪) : যা পরবর্তীকালে সাইন্টিফিক সোসাইটি নামে পরিচিতি পায়। এই সোসাইটির প্রধান কাজ ছিল বিজ্ঞান বিষয়ক ইংরেজি গ্রন্থের উর্দু ভাষায় অনুবাদ করা।
  2. বিহার সাইন্টিফিক সোসাইটি (১৮৬৪) : এই সোসাইটি ১৮৯৯ সালে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে লাঙ্গত সিং কলেজ নামে পরিচিত। এছাড়া এখান থেকে আখ্বারুল আখিয়ার নামে একটি উর্দু পত্রিকা প্রকাশিত হতো।
  3. আঞ্জুমান-ই-আল-ফারজ (১৮৮৯) : এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৈয়দ আহমেদ কলেজের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
  4. আঞ্জুমান-ই-তারাক্কি-ই-উর্দু (১৯০৩) : উর্দু ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতির জন্য এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

৫) রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ও সৈয়দ আহমেদ খান :

ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে আধুনিক রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষেও স্যার সৈয়দ আহমেদ খান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। 

ক) রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা :

এই উদ্দেশ্যে তিনি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।
  1. মহামেডান এডুকেশনাল কংগ্রেস (১৮৮৬) : এর কাজ ছিল ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের সংগঠিত করা। 
  2. ইউনাইটেড পেট্রিওটিক অ্যাসোসিয়েশন (১৮৮৮) : এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সরকারের মুসলিমদের অংশগ্রহণে পথ উন্মুক্ত করা।
  3. উর্দু ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন (১৮৯০) ও মহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন (১৮৯৩) : মূলত ব্রিটিশ সরকারের কাছে মুসলিমদের রাজনৈতিক স্বার্থ তুলে ধরার উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

খ) রাজনৈতিক দর্শন :

স্যার সৈয়দ আহমেদ খান ছিলেন উদারপন্থী ও যুক্তিবাদী চিন্তা চেতনার অধিকারী। তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের মূল কথা ছিল সমন্বয়বাদী ভারতীয় জাতীয়তাবাদ। সৈয়দ আহমেদ খান মনে করতেন, “হিন্দু মুসলমান একই মায়ের দুই সন্তান। ভারতমাতার দুই চোখ হল হিন্দু ও মুসলমান। এর একটি আঘাতপ্রাপ্ত হলে অন্যটি রোগ ক্ষতি হবে।”

গ) রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন :

কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। মূলত
  1.  ১৮৭০ এর দশকে পাঞ্জাব উত্তর-পশ্চিম ভারতসহ রোহিলা খন্ড অযোধ্যা প্রভৃতি অঞ্চলে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি সংহত রূপ ধারণ করলে এবং ১৮৭৫ স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর নেতৃত্বে আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের সর্বভারতীয় চেহারা লাভ করলে। কারণ, এই আন্দোলনগুলো তো গড়ে উঠেছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে; ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নয়। স্বাভাবিকভাবেই এই আন্দোলন এক সাম্প্রদায়িক রূপ ধারণ করে।
  2. এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ট থিওডোর বেক সার সৈয়দ আহমেদ খানকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, “ভারতে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং শিক্ষায় অগ্রসর হিন্দুরাই শাসন ক্ষমতা হস্তগত করবে এবং মুসলিম সম্প্রদায় দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক এ পরিণত হবে।”

সৈয়দ আহমেদ খানের ভূমিকার মূল্যায়ন :

মূলত, মুসলিম সমাজের অনগ্রসরতা দূর করার লক্ষ্য নিয়ে স্যার সৈয়দ আহমেদ খান তাঁর সংস্কার আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন।

সমালোচনা :

  1. তবে, অধ্যাপক সুমিত সরকারের মতে, শ্রেণিভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এই আন্দোলন সমগ্র মুসলিম জনগণকে স্পর্শ করেনি। তা ছিল মূলত উচ্চবৃত্ত মানুষের দ্বারা পরিচালিত।
  2. অন্যদিকে, ফ্রান্সিস রবিনসন, ডেভিড লেলিভেল্ট প্রমুখ ও সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিক তাঁকে ‘দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রথম প্রবর্তক’ বলে অভিহিত করেছেন।

গুরুত্ব :

  1. কিন্তু অনেক জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক এই মতের সঙ্গে একমত নয়। ডঃ শচীন সেন বলেছেন, “সৈয়দ আহমেদ হিন্দু বিরোধী ছিলেন না, কিন্তু তিনি ছিলেন মুসলিমদের পক্ষে এবং কংগ্রেস বিরোধী।”
  2. বস্তুত, হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত মুসলমান সমাজের জন্য তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
  3. প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, “উনিশ শতকের নবজাগরণ ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হিন্দুদের কাছে যা ছিল, আলীগড় আন্দোলন মুসলিমদের কাছে ছিল ঠিক একই।” আর এ কারণেই তাঁকে ভারতের ‘মুসলিম সমাজে নবজাগরণের অগ্রদূত’ বা ‘মুসলিম সমাজের রামমোহন’ বলে অভিহিত করা হয়। 
------------xx-----------

প্রশ্নটি অন্য যেভাবে আসতে পারে :

  1. স্যার সৈয়দ আহমেদ খান কে ছিলেন? ভারতীয় মুসলিম সমাজের অগ্রগতিতে তাঁর অবদান উল্লেখ করো।
  2. কাকে কেন ‘মুসলমান সমাজের নবজাগরণের অগ্রদূত’ বলা হয়? 
  3. ভারতীয় ‘মুসলিম সমাজের রামমোহন’ কাকে বলা হয়? শিক্ষা সমাজ ও ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে তার ভূমিকা কেমন ছিল? 
  4. আলীগড় আন্দোলন বলতে কী বোঝো? ভারতের ইতিহাসে আলীগড় আন্দোলনের গুরুত্ব কী ছিল?
  5. ভারতীয় মুসলিম সমাজের আধুনিকীকরণে স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের অবদান কতটা? 

এই অধ্যায়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর :

মন্তব্যসমূহ

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)
OUR BOOKS fOR WBBSE & WBCHSE


বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই...

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক...

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়...

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশীর মূল ষড়যন্ত্র :👉  তথ্য তালাশে পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্...

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও ...

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন...

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থি...

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা...

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু ...