সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা,
বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা,
ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর।
অথবা,
উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর। 

বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন :
ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল।
মাইকেল মধুসূদনের মতে, 'যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। '
বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা :
বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক. শিক্ষা সংস্কার, দুই. সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি।
(১) শিক্ষাসংস্কার :
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫১ সালে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হয়ে শিক্ষাসংস্করে মনোনিবেশ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ হল :
ক) সংস্কৃত কলেজ সংস্কার :
  1. বর্ণ-বৈষম্য দূর : পূর্বে কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য সন্তানরাই সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হতে পারত। তিনি এই প্রথা বাতিল করে সকল বর্ণের হিন্দু ছাত্রদের জন্য ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
  2. অধ্যাপকদের হাজিরা : এ বিষয়ে বিদ্যাসাগর কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা চালু করেন। পূর্বে এ বিষয়ে কোন নিয়মকানুন ছিল না। 
  3. ছুটির নিয়ম : পূর্বে সংস্কৃত কলেজে হিন্দু তিথি ও শুভদিন অনুসারে ছুটি দেওয়া হাত। তিনি এই প্রথা বাতিল করে রবিবার ছুটির নিয়ম চালু করেন। 
  4. পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন : তিনি সংস্কৃত কলেজে ইংরেজি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন। সাংখ্য ও বেদান্তকে ভ্রান্ত দর্শন বলে তা পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিয়ে মিলের তর্কশাস্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করেন। ভারতীয় গণিত শাস্ত্র ( লীলাবতী ও বীজগণিত ) বাদ দিয়ে পাশ্চাত্য গণিতশাস্ত্র চর্চার ব্যবস্থা করেন। সংস্কৃত ব্যাকরণ 'মুগ্ধবোধ' অসম্পূর্ন ও ভ্রান্ত বলে বাতিল করেন।
খ) শিক্ষার প্রসার :
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলার জনশিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও নারীশিক্ষার প্রসারে এবং বাংলা গদ্যের বিকাশে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়।
  1. গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন : একমাত্র শিক্ষাই মানুষের মন থেকে অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তুলতে পারে। তাই শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে লর্ড হার্ডিঞ্জের সহায়তায় গ্রাম-বাংলায় বহু বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এর মধ্যে ৩৩ টি স্থায়ী হয়। 
  2. মডেল স্কুল স্থাপন : বাংলার বিভিন্ন জেলায় ২০ টি মডেল স্কুল স্থাপন করেন যার কয়েকটি নিজ ব্যয়ে চালাতেন। তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হল 'মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন' ( বিদ্যাসাগর কলেজ )।
  3. নারী শিক্ষার প্রসার : নারীমুক্তির জন্য নারীশিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। তাই ১৮৪৯ সালে কলকাতায় ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের সহযোগিতায় 'হিন্দু ফিমেল স্কুল' ( বেথুন স্কুল ) প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রাম-বাংলায় প্রতিষ্ঠা করেন ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয়।
  4. পাঠ্যপুস্তক রচনা : তিনি শিশু ও জনশিক্ষার প্রসারের জন্য বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। এদের মধ্যে বর্ণ পরিচয়, কথামালা, বোধোদয়, নীতিবোধ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
  5. গদ্য লেখা সূচনা : এছাড়া 'শকুন্তলা', 'সীতার বনবাস' প্রভৃতি গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তিনি বাংলা গদ্য লেখার নতুন পথ দেখান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, 'বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী ছিলেন। '
(২) সমাজ সংস্কার :
"এ বিশ্বের যা কিছু মহান চির কল্যাণকর 
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। "
কবি নজরুল ইসলামের বহু পূর্বেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বুঝেছিলেন এই সত্য। তাই নারী মুক্তির জন্য নারীশিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি সামাজিক সংস্কার আন্দোলনেও হাত দিয়েছিলেন।
ক) বিধবা বিবাহ প্রবর্তন :
  1. শাস্ত্র থেকে প্রমাণ : ১৮৫০ সালে পরাশর সংহিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি প্রমাণ করেন বিধবা বিবাহ শাস্ত্র সম্মত। এজন্য তিনি 'সর্বশুভকরী পত্রিকা'র প্রথম সংখ্যায় লেখেন 'বাল্যবিবাহের দোষ' নামে প্রবন্ধ।
  2. বিধবা বিবাহ আইন : ১৮৫৫ সালে লেখেন দুটি পুস্তিকা। লক্ষ্য বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে জনমত তৈরি করা। এবিষয়ে তিনি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার দত্ত, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু সহ এক হাজার ব্যক্তির স্বাক্ষর নিয়ে আইন সভার কাছে আবেদন করেন আইন তৈরির জন্য। অবশেষে ১৮৫৬ সালে লর্ড ডালহৌসি পাশ করেন বিধবা বিবাহ আইন।
  3. বিধবা বিবাহের বাস্তবায়ন : এই আইনের বিরুদ্ধে রাধাকান্ত দেব ৩৬৭৬৩ জন রক্ষণশীল হিন্দুর স্বাক্ষর নিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেন। তবে এই সব বাধা অতিক্রম করে ১৮৫৬ সালে সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের সঙ্গে বিধবা কালীমতি দেবীর বিবাহ দেন। এ বিষয়ে আর্থিক সাহায্যের জন্য ১৮৭২ সালে 'হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুইটি ফান্ড' স্থাপন করেন।
খ) বহুবিবাহের বিরোধিতা : 
  1. আইন করার আবেদন : ১৮৫৫ সালে ৫০ হাজার মানুষের স্বাক্ষর নিয়ে তিনি বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করার আবেদন করেন। কিন্তু ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি গ্রহণ করলে তা বাস্তবায়িত হয় নি।
  2. পুস্তক প্রকাশ ও প্রচার : তবে বিদ্যাসাগরের প্রচার ও শিক্ষার প্রসারের ফলে বহু বিবাহের প্রকোপ বহুলাংশে হ্রাস পায়। এ বিষয়ে বিদ্যাসাগর ১৮৭১ সালে দুটি পুস্তক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এখানে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেন বহুবিবাহ অশাস্ত্রীয়। 
মূল্যায়ন :
রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের জোরদার বিরোধী আন্দোলন এবং ঔপনিবেশিক শাসনের অসহযোগিতার কারণে বিদ্যাসাগরের সকল আধুনিক ও প্রগতিশীল সংস্কারই ব্যর্থ হয় বলে মনে করেন ড. অশোক সেন। তা সত্ত্বেও বিদ্যাসাগরের কৃতিত্বকে অস্বীকার করা যাবে না। কারণ তাঁর এই আন্দোলনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব লক্ষ্য করা যায় বাংলার ঘরে ঘরে তাঁর ছবির উপস্থিতি থেকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সিংহ পুরুষ' ও অমলেশ ত্রিপাঠীর 'একজন ঐতিহ্যবাহী আধুনিকতাবাদের প্রবক্তা' বলে অভিহিত করার মধ্যেও তার প্রমাণ মেলে।
------------------//--------------------

মন্তব্যসমূহ

  1. এখন এমন মহান মানুষ দেখা যায় না

    উত্তরমুছুন
  2. আমরা গাছের ডাল পালা ফুল ফল নিয়ে আলোচনা করি, আঘ্রাণে আগ্রহী হই;গাছটির বীজ কে বপন করেছেন মনে রাখতে চাই না ।স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ নবজাগরন এটাই ভুলে যাই ।

    উত্তরমুছুন
  3. খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লিখেছেন, এখন এরুপ লেখা সচরাচর পাওয়া যায় না।খুব ভাল লাগল পড়ে

    উত্তরমুছুন
  4. অসাধারণ বিদ্যাসাগর🌮🌯🥙🥚🍳🥘🍲🥣🥗🍿🥫🍱🍘🍘🍙🍚🍛🍜🍝🍠🍢🍣।।।।

    উত্তরমুছুন
  5. একটা পড়ে নিয়ে আমার খুব ভালো লেগেছে স্যার এই জন্য আমি আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই

    উত্তরমুছুন
  6. দারুন স্যার অসাধারণ নোট, আপনার এই প্রশ্নটিই এবং উত্তর দুটোই অসাধারণ অভিনব পদ্ধতি আপনি উপস্থাপন করেছেন।

    উত্তরমুছুন
  7. Sir bolchi je akta question er answer bole den. 'Usha Mehta bikkhata keno'?

    উত্তরমুছুন
  8. Sir এই প্রশ্নের উত্তর একটুখানি ছোট্ট করে দিলে ভালো হয় ৮ mark ar

    উত্তরমুছুন
  9. আচ্ছা উনি কি সংস্কৃত কলেজে সকল বর্ণের আলাউ করেছিলেন? আমার মত তো ভিন্ন।

    উত্তরমুছুন
  10. উনি কি সকল বর্ণের অ্যালান করেছিলেন? আমি তো অন্য জানি.

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)
OUR BOOKS fOR WBBSE & WBCHSE


বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই...

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক...

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়...

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি ব...

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন...

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থি...

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা...

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু ...