অথবা,
বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা,
ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর।
অথবা,
উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।
বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন :
ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল।
মাইকেল মধুসূদনের মতে, 'যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। '
বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা :
বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক. শিক্ষা সংস্কার, দুই. সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি।
(১) শিক্ষাসংস্কার :
(১) শিক্ষাসংস্কার :
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫১ সালে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হয়ে শিক্ষাসংস্করে মনোনিবেশ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ হল :
ক) সংস্কৃত কলেজ সংস্কার :
- বর্ণ-বৈষম্য দূর : পূর্বে কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য সন্তানরাই সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হতে পারত। তিনি এই প্রথা বাতিল করে সকল বর্ণের হিন্দু ছাত্রদের জন্য ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
- অধ্যাপকদের হাজিরা : এ বিষয়ে বিদ্যাসাগর কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা চালু করেন। পূর্বে এ বিষয়ে কোন নিয়মকানুন ছিল না।
- ছুটির নিয়ম : পূর্বে সংস্কৃত কলেজে হিন্দু তিথি ও শুভদিন অনুসারে ছুটি দেওয়া হাত। তিনি এই প্রথা বাতিল করে রবিবার ছুটির নিয়ম চালু করেন।
- পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন : তিনি সংস্কৃত কলেজে ইংরেজি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন। সাংখ্য ও বেদান্তকে ভ্রান্ত দর্শন বলে তা পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিয়ে মিলের তর্কশাস্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করেন। ভারতীয় গণিত শাস্ত্র ( লীলাবতী ও বীজগণিত ) বাদ দিয়ে পাশ্চাত্য গণিতশাস্ত্র চর্চার ব্যবস্থা করেন। সংস্কৃত ব্যাকরণ 'মুগ্ধবোধ' অসম্পূর্ন ও ভ্রান্ত বলে বাতিল করেন।
খ) শিক্ষার প্রসার :
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলার জনশিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও নারীশিক্ষার প্রসারে এবং বাংলা গদ্যের বিকাশে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়।
- গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন : একমাত্র শিক্ষাই মানুষের মন থেকে অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তুলতে পারে। তাই শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে লর্ড হার্ডিঞ্জের সহায়তায় গ্রাম-বাংলায় বহু বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এর মধ্যে ৩৩ টি স্থায়ী হয়।
- মডেল স্কুল স্থাপন : বাংলার বিভিন্ন জেলায় ২০ টি মডেল স্কুল স্থাপন করেন যার কয়েকটি নিজ ব্যয়ে চালাতেন। তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হল 'মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন' ( বিদ্যাসাগর কলেজ )।
- নারী শিক্ষার প্রসার : নারীমুক্তির জন্য নারীশিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। তাই ১৮৪৯ সালে কলকাতায় ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের সহযোগিতায় 'হিন্দু ফিমেল স্কুল' ( বেথুন স্কুল ) প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রাম-বাংলায় প্রতিষ্ঠা করেন ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয়।
- পাঠ্যপুস্তক রচনা : তিনি শিশু ও জনশিক্ষার প্রসারের জন্য বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। এদের মধ্যে বর্ণ পরিচয়, কথামালা, বোধোদয়, নীতিবোধ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
- গদ্য লেখা সূচনা : এছাড়া 'শকুন্তলা', 'সীতার বনবাস' প্রভৃতি গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তিনি বাংলা গদ্য লেখার নতুন পথ দেখান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, 'বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী ছিলেন। '
"এ বিশ্বের যা কিছু মহান চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। "
কবি নজরুল ইসলামের বহু পূর্বেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বুঝেছিলেন এই সত্য। তাই নারী মুক্তির জন্য নারীশিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি সামাজিক সংস্কার আন্দোলনেও হাত দিয়েছিলেন।
ক) বিধবা বিবাহ প্রবর্তন :
- শাস্ত্র থেকে প্রমাণ : ১৮৫০ সালে পরাশর সংহিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি প্রমাণ করেন বিধবা বিবাহ শাস্ত্র সম্মত। এজন্য তিনি 'সর্বশুভকরী পত্রিকা'র প্রথম সংখ্যায় লেখেন 'বাল্যবিবাহের দোষ' নামে প্রবন্ধ।
- বিধবা বিবাহ আইন : ১৮৫৫ সালে লেখেন দুটি পুস্তিকা। লক্ষ্য বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে জনমত তৈরি করা। এবিষয়ে তিনি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার দত্ত, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু সহ এক হাজার ব্যক্তির স্বাক্ষর নিয়ে আইন সভার কাছে আবেদন করেন আইন তৈরির জন্য। অবশেষে ১৮৫৬ সালে লর্ড ডালহৌসি পাশ করেন বিধবা বিবাহ আইন।
- বিধবা বিবাহের বাস্তবায়ন : এই আইনের বিরুদ্ধে রাধাকান্ত দেব ৩৬৭৬৩ জন রক্ষণশীল হিন্দুর স্বাক্ষর নিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেন। তবে এই সব বাধা অতিক্রম করে ১৮৫৬ সালে সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের সঙ্গে বিধবা কালীমতি দেবীর বিবাহ দেন। এ বিষয়ে আর্থিক সাহায্যের জন্য ১৮৭২ সালে 'হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুইটি ফান্ড' স্থাপন করেন।
- আইন করার আবেদন : ১৮৫৫ সালে ৫০ হাজার মানুষের স্বাক্ষর নিয়ে তিনি বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করার আবেদন করেন। কিন্তু ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি গ্রহণ করলে তা বাস্তবায়িত হয় নি।
- পুস্তক প্রকাশ ও প্রচার : তবে বিদ্যাসাগরের প্রচার ও শিক্ষার প্রসারের ফলে বহু বিবাহের প্রকোপ বহুলাংশে হ্রাস পায়। এ বিষয়ে বিদ্যাসাগর ১৮৭১ সালে দুটি পুস্তক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এখানে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেন বহুবিবাহ অশাস্ত্রীয়।
রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের জোরদার বিরোধী আন্দোলন এবং ঔপনিবেশিক শাসনের অসহযোগিতার কারণে বিদ্যাসাগরের সকল আধুনিক ও প্রগতিশীল সংস্কারই ব্যর্থ হয় বলে মনে করেন ড. অশোক সেন। তা সত্ত্বেও বিদ্যাসাগরের কৃতিত্বকে অস্বীকার করা যাবে না। কারণ তাঁর এই আন্দোলনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব লক্ষ্য করা যায় বাংলার ঘরে ঘরে তাঁর ছবির উপস্থিতি থেকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সিংহ পুরুষ' ও অমলেশ ত্রিপাঠীর 'একজন ঐতিহ্যবাহী আধুনিকতাবাদের প্রবক্তা' বলে অভিহিত করার মধ্যেও তার প্রমাণ মেলে।
------------------//--------------------
এখন এমন মহান মানুষ দেখা যায় না
উত্তরমুছুনআমরা গাছের ডাল পালা ফুল ফল নিয়ে আলোচনা করি, আঘ্রাণে আগ্রহী হই;গাছটির বীজ কে বপন করেছেন মনে রাখতে চাই না ।স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ নবজাগরন এটাই ভুলে যাই ।
উত্তরমুছুনOssm. It helps me a lot for my better performance.
উত্তরমুছুনA very helpful essay for my son
উত্তরমুছুনGood one
উত্তরমুছুনবাল্যবিবাহ আইন
উত্তরমুছুনDarun
উত্তরমুছুনVery good rachana
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লিখেছেন, এখন এরুপ লেখা সচরাচর পাওয়া যায় না।খুব ভাল লাগল পড়ে
উত্তরমুছুনIt waa seriously very informative
উত্তরমুছুনDarun
উত্তরমুছুনঅসাধারণ বিদ্যাসাগর🌮🌯🥙🥚🍳🥘🍲🥣🥗🍿🥫🍱🍘🍘🍙🍚🍛🍜🍝🍠🍢🍣।।।।
উত্তরমুছুনদারুন উত্তর
উত্তরমুছুনএকটা পড়ে নিয়ে আমার খুব ভালো লেগেছে স্যার এই জন্য আমি আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই
উত্তরমুছুনThank you sir
উত্তরমুছুনGreat
উত্তরমুছুনThanks
উত্তরমুছুনdarun sir
উত্তরমুছুনWho did strike in Maharashtra for bidhaba bibaha?
উত্তরমুছুনIt is so help full👍
উত্তরমুছুনদারুন স্যার অসাধারণ নোট, আপনার এই প্রশ্নটিই এবং উত্তর দুটোই অসাধারণ অভিনব পদ্ধতি আপনি উপস্থাপন করেছেন।
উত্তরমুছুনthank you very much for this
উত্তরমুছুনIt was very helpful for my school assignment
উত্তরমুছুনReally helpful for doing home assignment. Thanks a lot!
উত্তরমুছুনWow sir....
উত্তরমুছুনSir bolchi je akta question er answer bole den. 'Usha Mehta bikkhata keno'?
উত্তরমুছুনSir এই প্রশ্নের উত্তর একটুখানি ছোট্ট করে দিলে ভালো হয় ৮ mark ar
উত্তরমুছুনআচ্ছা উনি কি সংস্কৃত কলেজে সকল বর্ণের আলাউ করেছিলেন? আমার মত তো ভিন্ন।
উত্তরমুছুনউনি কি সকল বর্ণের অ্যালান করেছিলেন? আমি তো অন্য জানি.
উত্তরমুছুন