সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিভাজন ও শাসন নীতি কী? ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির জন্য ব্রিটিশ সরকার এই নীতি কোন প্রেক্ষাপটে কীভাবে কার্যকর করেছিল?

অথবা,
কীভাবে 'বিভেদ ও শাসন' নীতি প্রয়োগ করে ব্রিটিশ সরকার ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতাকে খর্ব করতে চেষ্টা করেছিল?
অথবা,
ভারতে 'বিভেদ ও শাসন' নীতিপ্রয়োগের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে  এর চরিত্র (বৈশিষ্ট্য) ব্যাখ্যা কর।
অথবা,
'বিভাজন ও শাসন নীতি' বলতে কী বোঝ? ব্রিটিশরা কী কারণে ভারতে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক বিভেদ বৃদ্ধির চেষ্টা করে?

উত্তর :

বিভাজন ও শাসন নীতি' কী 
জাতি, ধর্ম, ভাষা ইত্যাদির মাধ্যমে বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে একটি দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল করে সাম্রাজ্যবাদী শাসক তাদের শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার কৌশল গ্রহণ করে। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে এই নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। এই নীতি বা কৌশল 'বিভাজন ও শাসন নীতি' নামে পরিচিত। ভারত শাসনে ব্রিটিশ সরকার এই নীতি গ্রহণ করেছিল।

বিভাজন ও শাসননীতির প্রেক্ষাপট
ভারতে এই নীতি প্রয়োগের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করলে এর চরিত্র (বৈশিষ্ট্য) স্পষ্ট হয়ে ওঠে
১) মাউন্টস্টুয়ার্ট এলফিনস্টোনের পরামর্শ অনুযায়ী ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ধর্ম ও জাতি-ভিত্তিক বিভাজন ঘটিয়ে ভারত শাসনে একই নীতি গ্রহণ করেছিল। 
২) মহাবিদ্রোহ ও হিন্দু-মুসলিম ঐক্য। ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের সময় মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের নেতৃত্বে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যবদ্ধভাবে যে লড়াই করেছিল তা ব্রিটিশ সরকারের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল।
৩) জাতীয় কংগ্রেসের উদ্ভব। ১৮৮৫ সালে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় মিলিতভাবে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করলে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয় চেতনা বৃদ্ধির আশঙ্খায় ব্রিটিশ সরকার উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।
৪) ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ্যবাদের দাপট লক্ষ্য করা যায়। জাতীয় আন্দোলনে এই সম্প্রদায় অগ্রণী ভূমিকা নিলে ব্রিটিশ সরকার ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ক্ষোভকে উস্কে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করে।

বিভাজন নীতির বিভিন্ন পর্যায়
ব্রিটিশ শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য সরকার বিভাজন নীতিকে তিনটি পর্যায়ে কার্যকর করেছিল।
১) হিন্দু তোষণ (প্রথম পর্যায়)।
ব্রিটিশরা প্রথমে মুসলমানদের আধিপত্য ধ্বংস করে ক্ষমতা দখল করেছিল। তাই মুসলিমরা প্রথম থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী ছিল। এই পর্বে ব্রিটিশরা তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাত দেখায়। এপ্রসঙ্গে লর্ড এলেনবরার বক্তব্য উল্লেখ্য, 'মুসলিম জনসমাজ মৌলিকভাবে আমাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। তাই আমাদের আসল লক্ষ্য হবে হিন্দুদের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো।
২) মুসলিম তোষণ (দ্বিতীয় পর্যায়)।
উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ কর্তা স্যার উইলিয়াম লি-র মতে, ১৮৬৯ থেকে ১৮৯৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে শিক্ষা ও প্রশাসনে ব্রাহ্মণদের আধিপত্য অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কংগ্রেস থেকে হোমরুল লীগ সব ক্ষেত্রেই একই চিত্র চোখে পড়ে। আর এরাই তখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্ররোচনা দিচ্ছে। তাই এই পর্যায়ে ব্রিটিশ সরকার হিন্দুদের দুর্বল করার জন্য মুসলিম তোষণ শুরু করে।
৩) নিম্নবর্ণের তোষণ (তৃতীয় পর্যায়)।
তৃতীয় পর্যায়ে সরকার উচ্চবর্ণের হিন্দুদের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়কে তোষণ শুরু করে। এপ্রসঙ্গে জর্জ হ্যামিল্টন বড়লাট কার্জনকে লেখেন, 'আমরা যদি হিন্দুদের দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত করতে পারি তবে আমাদের শক্তি আরও সুদৃঢ় হবে।'

বিভাজন নীতির প্ৰয়োগ।
এইভাবে ধর্ম, বর্ণ ও জাতিভিত্তিক বিভাজন ঘটিয়ে ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য চেষ্টা করে ব্রিটিশরা। এক্ষেত্রে যে যে পদক্ষেপ তারা গ্রহণ করে তা হল -
১) আর্থিক সহায়তা ও চাকরি প্রদান।
সরকার ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে আর্থিক সহায়তা করে এবং শিক্ষা ও চাকরি নিয়োগের ব্যবস্থা করে।
২) মুসলিম তোষণ।
১৮৫৭ পূর্ববর্তী সময়ে মুসলিমরা ছিল ব্রিটিশের প্রধান শত্রু।  মহাবিদ্রোহ পরবর্তী সময়ে তারাই হয়ে গেল ব্রিটিশের পরম বন্ধ। প্রশাসনে হিন্দু সম্প্রদায়ের আধিপত্যের বিরুদ্ধে মুসলিমদের সচেতন করার নতুন সাম্রদায়িক বিভাজনের খেলা শুরু করলো তারা। থিওডোর বেক, মরিসনকে দিয়ে স্যার সৈয়দ আহম্মদকে সামনে রেখে তার সফল প্ৰয়োগ ঘটালো।
৩) অনগ্রসর শ্রেণির প্রতি তোষণ।
মুসলিম সম্প্রদায়ের আনুগত্য পাওয়ার পর বৃটিশ সরকার অব্রাহ্মণ ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের তোষণ শুরু করে। ১৯২১ সালে মাদ্রাজ ও ১৯২৫ সালে বোম্বাইয়ে অনগ্রসরদের সংরক্ষণ চালু করে। কোন কোন ইতিহাসবিদ বলেছেন এক্ষেত্রে লক্ষ্য সাম্য প্ৰতিষ্ঠা হলেও ব্রিটিশের উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িক। ১৯২০ দশকে ড. আম্বেদকরের আন্দোলন ব্রিটিশের এই বিভাজন নীতি কার্ষকর করতে সাহায্য করেছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন।

মূল্যায়ন।
এইভাবে ব্রিটিশ সরকার সাম্রদায়িক বিভাজন নীতি প্ৰয়োগ করে এদেশে তাদের অনৈতিক শাসন কায়েম রাখার চেষ্টা করেছিল। পন্ডিত লালবাহাদুর শাস্ত্রী সরকারের এই বিভেদনীতকে 'ভারতের জাতীয় ইতিহাসের ক্ষেত্রে একটি নির্লজ্জ ঘটনা' বলে অভিহিত করেছেন। মর্লে-মিন্টো সংস্কার দিয়ে যার সূচনা করেছিল ভারত বিভাজনের মাধ্যমে তার চূড়ান্ত রূপ দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। দুর্ভাগ্যের বিষয় দেশ থেকে ব্রিটিশ বিদায় নিলেও বিভেদনীতি বিদায় হয়নি।

--------------//----------------



মন্তব্যসমূহ



বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই বন্দোবস্তই ‘ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ’ -এ পরিণত হবে

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়ায়

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢা

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যার মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি। (১) 

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিবাদ করলে কুয়োমি

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে ১৮৯৯ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিন সম্পর্কে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা মুক্তদ্বার নীতি নামে পরিচিত। এই নীতিতে বলা হয়, বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা অধিকৃত চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার সমান বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে হবে।

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু বর্ণহিন্দুদের এই বর্নবিদ্বেষী প্রথার বিরুদ্ধে এবং মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের হাঁটার দাবিতে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা ভাইকম সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। আন্দোলনের ব্যাপকতায় মুগধ হয়ে গান্ধিজি একে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন জয়যুক্ত হয়।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা