সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা,

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর

উত্তর

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন পরবর্তীকালে বারাণসী, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি

কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে প্রথম চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন এরপর হেনরি পাত্তুলো, ড্যাক্রিস, টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান

১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন তিন বছর ধরে তিনি বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা দশসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই বন্দোবস্তই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত-এ পরিণত হবে

এই প্রসঙ্গে, কর্ণওয়ালিসের সঙ্গে তাঁর পরিষদের সদস্য জন শোর-এর মতপার্থক্য দেখা দেয় তিনি বলেন, এবিষয়ে আরও বিশদ তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন দশসালাকে স্থায়ী বন্দোবস্তে পরিবর্তন না করে, ধীরে ধীরে এ'কাজে এগোনো উচিত

কিন্তু কর্ণওয়ালিস দাবি করেন, সরকারের হাতে যথেষ্ট তথ্য আছে তিনি যুক্তি দেন, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হলে জমিদাররা কৃষকদের স্বার্থের দিকে আরও বেশি নজর দেবে ইংল্যান্ডের কতৃপক্ষ কর্ণওয়ালিসের অভিমতকে সমর্থন করেন ফলে ১৭৯৩ সালে দশসালা বন্দোবস্ত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসাবে ঘোষিত হয়

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উদ্দেশ্য

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল –
A.  সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি এই বন্দোবস্তের মাধ্যমে ভারতে ইংরেজদের অনুগ্রহপুষ্ট একটি নতুন অভিজাত শ্রেণি তৈরি করা, যারা তাদের সমর্থক হিসাবে কাজ করবে
B.  আয় সুনিশ্চিত করা কোম্পানি আশা করেছিল, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ফলে তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়োমিতভাবে সঠিক হারে রাজস্ব পাবে ফলে তাদের আয়ের অনিশ্চয়তা দূর হবে
C.  বাজেট তৈরির সুবিধা আয় সুনিশ্চিত হলে বার্ষিক আয়ব্যয়ের বাজেট তৈরির কাজ সহজ হবে
D.  দেশের সমৃদ্ধি জমিদার জমির ওপর স্থায়ী অধিকার পেলে কৃষির উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বিনিয়োগ করবেন এতে দেশের সমৃদ্ধি বাড়বে এবং পরোক্ষে কোম্পানির লাভ হবে

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তাবলি (বৈশিষ্ট্য)

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি লক্ষ্য করলে এর কিছু বৈশিষ্ট্য নজরে আসবে –
  I. জমিদার-তালুকদাররা বংশানুক্রমিকভাবে জমি ভোগদখল করতে পারবে
II. জমিদার ইচ্ছামত জমি দান, বিক্রি বা বন্ধক রাখতে পারবে
III. ভূমিরাজস্বের পরিমাণ ১৭৯৩ সালের হারেই নির্ধারিত হবে
IV. নির্ধারিত রাজস্বের শতকরা ৯০ ভাগ সরকার ও ১০ ভাগ জমিদার পাবেন
V. সূর্যাস্ত আইন অনুসারে, জমিদাররা সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের মধ্যে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে
VI. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজস্ব মেটাতে ব্যর্থ হলে জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হবে
VII. ভবিষ্যতে খরা, বন্যা, মহামারি বা অন্য কোনো প্রকৃতিক বিপর্যয়েও রাজস্ব মকুব করা হবে না

ফলাফল / সুফল-কুফল / গুরুত্ব

বাংলার (ভারতের) ইতিহাসে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা কেননা, এই ব্যবস্থা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার ভূমি ও আর্থ-সমাজিক ব্যবস্থায় এক বিরাট পরিবর্তন আনে এই পরিবর্তনকে ঐতিহাসিকগণ সুফল ও কুফল - এই দুভাগে বিভক্ত করেছেন

সুফল (কোম্পানি ও জমিদার)

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল সম্পর্কে ঐতিহাসিক মার্শম্যান বলেছেন, It was a bold, brave and wise measure. এই ব্যবস্থার সুফলগুলি হল –
A.  সুনির্দিষ্ট আয় এই বন্দোবস্তের ফলে জমিদারদের অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয় সরকারের নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি সুনিশ্চিত হয় ফলে, সরকারের পক্ষে বার্ষিক আয়ব্যয়ের বাজেট তৈরি সহজ হয়
B.  উৎখাতের আশঙ্কার অবসান কৃষকের রাজস্বের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হয় ফলে, তারা ইজারাদারদের শোষণ এবং জমি থেকে উৎখাতের আশঙ্কা থেকে মুক্তি পায়
C.  কৃষির উন্নতি জমির উপর জমিদারের স্বত্ব বা অধিকার সুনিশ্চিত হওয়ায়, তারা জমি ও কৃষির উন্নতিতে যত্নবান হন
D.  অনুগত গোষ্ঠির উদ্ভব এই বন্দোবস্তের ফলে সরকারের অনুগত একটি জমিদার শ্রেণির উদ্ভব হয় ফলে, তাদের সমর্থনে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হয়

এপ্রসঙ্গে জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র দত্ত বলেন, ১৭৯৩ সালে প্রবর্তিত লর্ড কর্ণওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল ভারতে ব্রিটিশ জাতির গৃহীত পদক্ষেপগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাজ্ঞ ও সফল পদক্ষেপ

কুফল (কৃষকদের ওপর)

ঐতিহাসিক হোমস বলেছেন, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল একটি দুঃখজনক ভুল (The permanent settlement was a sad blunder) প্রকৃতপক্ষে, এই বন্দোবস্তের সুফল অপেক্ষা কুফলই বেশি ছিল
1)  কৃষকদের উচ্ছেদ এই বন্দোবস্তে জমিদার জমির মালিকানা পায়, কৃষকরা নয় ফলে, বেশি রাজস্বের আশায় জমিদার চাষিকে ঘন ঘন জমি থেকে উৎখাত করতে থাকে এজন্য পার্সিভ্যাল স্পিয়ার বলেছেন, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দ্বারা কৃষকরা জমিদারের ভাড়াটে মজুরে পরিণত হয়
2)  রাজস্বের হার বেশি জমি জরিপ (জমির গুণাগুণ) না করেই রাজস্বের পরিমাণ ধার্য করা হয় ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজস্বের হার বেশি হয়ে যায়
3)  জমির উন্নতি ব্যহত চাষিরা জমির মালিকানা না পাওয়ায় তারা জমির উন্নতির জন্য বিশেষ চেষ্টা করত না। জমিদাররাও জমির উন্নতির চেয়ে নিজেদের বিলাসব্যসনে বেশি অর্থ ব্যয় করত বলে কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন।
4)   কৃষকের দুরাবস্থাজমিদাররা কৃষকদের ওপর প্রবল অত্যাচার চালিয়ে নির্ধারিত রাজস্বের চেয়ে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় করত পরিসংখ্যান বলছে, ১৭৯৩ সালে জমিদাররা নির্ধারিত ৩৫ লক্ষ পাউন্ডের জায়গায় ১ কোটি ৩৫ পাউন্ড রাজস্ব আদায় করে ফলে, কৃষকদের অবস্থা করুণ হয়ে ওঠে
5)  মহাজনী শোষণ অতিরিক্ত রাজস্বের চাপে কৃষকশ্রেণী মহাজনের কাছে ঋণ নিতে বাধ্য হয় ঋণ ফেরৎ নিশ্চিত করার জন্য মহাজনরা কৃষকদের অর্থকরী ফসল, যেমন – নীল, পাট, ইত্যাদি চাষে বাধ্য করে ফলে কৃষির বাণিজ্যকরণ ঘটে এবং কৃষকদের খাদ্যাভাব প্রকট হয়
6)  পুরোনো জমিদারদের উচ্ছেদ সূর্যাস্ত আইন অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে রাজস্ব জমা না দিতে পারায় বহু পুরোনো জমিদার তাদের জমি হারান প্রথম কুড়ি বছরের মধ্যে বাংলার প্রায় অর্ধেক জমিদার জমি হারান
7)  নতুন জমিদারের উত্থান পুরোনো জমিদারদের জমিদারি নিলামে উঠলে শহুরে ধনী বনিকরা সেই জমিদারি কিনে নেয় এইসব ভুঁইফোড় জমিদারদের জমি কিম্বা কৃষকদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না প্রজা শোষণ করে প্রচুর অর্থ উপার্জনই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য
8)  মধ্যস্বত্বভোগীর উত্থান চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বিভিন্ন মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির উদ্ভব ঘটে এরা পত্তনিদার, দর-পত্তনিদার, ইত্যাদি নামে পরিচিত এদের সীমাহীন শোষণ চাষ ও চাষিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়
9)  শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষতি শহুরে বণিকরা শিল্প-বাণিজ্য ছেড়ে জমিদারি ক্রয়ে মনোযোগ দিলে বাংলার দেশীয় শিল্প-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে কুটিরশিল্পের কাজেও মানুষ আগ্রহ হারায়
10) সরকারের ক্ষতি সরকারের রাজস্ব নির্ধারণ সুনির্দিষ্ট হওয়ার ফলে ভবিষ্যতে রাজস্ব থেকে আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যায় পরে পতিত জমি উদ্ধার, কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে জমিদারের আয় বাড়লেও সরকার সেই আয়ের কোনো অংশ পেত না

মূল্যায়ন

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বাংলা তথা ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসের উপর, বিশেষত কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্তের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়েছিল এপ্রসঙ্গে ঐতিহাসিক তারা চাঁদ যথার্থই বলেছেন, ‘The settlement destroyed the old village community, changed the property relations, created new social classes and caused a social revolution in the Indian countryside.’


বিকল্প প্রশ্ন :

👉 সূর্যাস্ত আইন কী? এই আইন যে ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কীত বৈশিষ্ট্য লেখ এই ভূমি-ব্যবস্থার গুণাগুণ বিশ্লেষণ কর

মন্তব্যসমূহ

  1. যুদ্ধ ব্যয়ের কথাটা নেই কেন।

    উত্তরমুছুন
  2. অনেক ভালো হইসে পরে অনেক তথ্য পাইছি

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন



বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়ায়

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢা

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যার মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি। (১) 

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিবাদ করলে কুয়োমি

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে ১৮৯৯ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিন সম্পর্কে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা মুক্তদ্বার নীতি নামে পরিচিত। এই নীতিতে বলা হয়, বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা অধিকৃত চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার সমান বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে হবে।

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু বর্ণহিন্দুদের এই বর্নবিদ্বেষী প্রথার বিরুদ্ধে এবং মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের হাঁটার দাবিতে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা ভাইকম সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। আন্দোলনের ব্যাপকতায় মুগধ হয়ে গান্ধিজি একে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন জয়যুক্ত হয়।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা