অথবা,
আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি
লিখন পদ্ধতির ধারনা/নীতি/বৈশিষ্ট্য
উপসংহার
আধুনিক ইতিহাস চর্চার ধারণা সম্পর্কে
সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
অথবা,
আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতির
নীতিগুলি সংক্ষেপে লেখ।
অথবা,
আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতির
বৈশিষ্ঠ্যগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করো।
আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি
সর্বপ্রথম যথার্থ ইতিহাস লেখার সূত্রপাত
করেন প্রাচীন গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস (ইতিহাসের জনক)। এরপর থুকিডিডিস (বৈজ্ঞানিক
ইতিহাসের জনক), ইবন খালদুন (আধুনিক ইতিহাস চর্চার জনক)
ইতিহাস রচনায় যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেন। ঊনবিংশ শতকে আধুনিক ইতিহাস চর্চার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে। এই শতকে ভন র্যাঙ্কে
আধুনিক ইতিহাস চর্চার বিজ্ঞানসম্মত পথ দেখান। এই পথ অনুসরণ করে বিশ শতকে
ব্রদেল, ই.এইচ.কার, ফিশার, লাদুরি, মার্কব্লক প্রমুখ ইতিহাসবিদ যথার্থ
ইতিহাসের যে লিখন পদ্ধতি গড়ে তুলেছেন তা আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি (নীতি) নামে
পরিচিত।
লিখন পদ্ধতির ধারনা/নীতি/বৈশিষ্ট্য
যথার্থ ইতিহাস লেখার জন্য
সুসংবদ্ধ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি (পদ্ধতির যেসব নীতি) অনুসরণ করতে হয় তা হল –
1)
উৎসের অনুসন্ধান। ইতিহাস লিখন পদ্ধতির
ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হল ঐতিহাসিক ঘটনার উৎসের অনুসন্ধান করা। কারণ, উৎস ছাড়া ইতিহাস হয় না। এই উৎস বিভিন্ন রকম হতে পারে,
যেমন- ক) প্রত্নতাত্ত্বিক, খ) মৌখিক,
গ) ছবিভিত্তিক, ঘ) লিখিত বিবরণমূলক ইত্যাদি। ঐতিহাসিক এই সব
উৎসের সাহায্যে ইতিহাস রচনা করেন।
2)
উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ। উৎসের অনুসন্ধান শেষে ঐতিহাসিক তার প্রয়োজনীয় উৎসটি চিহ্নিত করেন। চিহ্নিত উৎস থেকে প্রয়োজনীয়
তথ্যাবলি সংগ্রহ করেন। এক্ষেত্রে ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুযায়ী তথ্যগুলির শ্রেণিবিভাগ করে থাকেন। এবং শ্রেণিবিভাগের
পর তথ্যের বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভের চেষ্টা করেন।
3)
তথ্যের যাচাইকরণ। তথ্য সংগ্রহের পর ঐতিহাসিক সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে সেগুলির যাচাই করে
থাকেন।
এক্ষেত্রে তাকে দুটি কাজ করতে হয়- ১) বাহ্যিক সমালোভনার দ্বারা তথ্যের জালিয়াতি বা
প্রকৃত রূপ ও মৌলিকত্ব যাচাই। ২) অভ্যন্তরীণ সমালোচনার দ্বারা তার গৃহীত তথ্যের অন্তর্নিহিত ভাবাদর্শ ও
প্রেরণা (Motivation) সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া।
4)
তথ্য সংরক্ষণ। উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং যাচাই করার পর ইতিহাসবিদ সেগুলিকে যথাযথভাবে
সংরক্ষণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে তিনি তার ব্যক্তিগত নোট বুকে লিখে রাখেন। তারপর ইতিহাস লেখার কাজে
ব্যবহার করেন।
5)
তথ্যের বিশ্লেষণ। ইতিহাসবিদ প্রয়োজনীয়
তথ্য যাচাই করার পর সেগুলি নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে হয়। বিশ্লেষণে কোনো
বক্তব্য প্রামাণ্য তথ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে বিবেচিত হলে সেই তথ্যকে সত্য বলে
গ্রহণ করা যায় এবং ইতিহাস লেখায় ব্যবহার করা হয়।
6)
ঘটনা ও বক্তব্যের মধ্যে
সম্পর্ক স্থাপন। দুটি ঘটনা বা বক্তব্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের
মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক তার লেখাকে এগিয়ে নিয়ে যান। এই সম্পর্ক স্থাপনের
প্রচেষ্টা আসলে ঐতিহাসিকের সত্য রক্ষার নীতি বলা চলে যা মূলত চারটি উপাদানের মিলিত
রূপ।
এগুলি হল – ১) করেসপন্ডেস থিয়োরি, ২) কোহেরেন্স থিয়োরি, ৩) অথরিটি ও ৪) মেমোরি। এই চার ধরনের ঐতিহাসিক সত্যের আলোকে ইতিহাসবিদ তার
লেখা এগিয়ে নিয়ে যান।
7)
ধারাবাহিকতা ও কালানুক্রম। ধারাবাহিক
কালানুক্রম ইতিহাস রচনা পদ্ধতির এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যে-কোনো ঘটনা বর্ননার
ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক তিনটি পর্বে ভাগ করে আলোচনা করেন। যথা,
১) প্রাথমিক অবস্থা সূচনাপর্ব, ২) মধ্যাবস্থা বা গতিপ্রকৃতি, ৩) শেষ অবস্থা বা পরিণতি। এই তিন পর্বের ধারাবাহিক ইতিহাস
লেখার সময় ইতিহাসবিদরা কোন পর্বটি কোন সময়ে ঘটেছিল তা উল্লেখ করে থাকেন।
8)
ভৌগোলিক অবস্থানের উল্লেখ। যথাযথ ইতিহাস রচনায় ভৌগোলিক অবস্থানের উল্লেখ করার বিষয়টিও ভীষণ জরুরি। কারণ, ঘটনার স্থানের উল্লেখ না থাকলে ইতিহাস মূল্যহীন হয়ে পড়বে।
9)
কার্যকারণ পদ্ধতি। ইতিহাসবিদ ই.এইচ.কার
লিখেছেন, The study of History is a study of causes.”
এক্ষেত্রে শুধুমাত্র দৃশ্যমান বা সহজে বোঝা যায় এমন কারণ অনুসন্ধানই
নয়, ঘটার গভীরে লুকিয়ে থাকা কারণ খুঁজে বার করার জন্য
কার্যকারণ সম্পর্কের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে আসতে হয়।
উপসংহার
তবে একথা মনে রাখতে হবে যে, শুধু সুসংবদ্ধ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করলেই হবে না, ইতিহাস-পাঠকে সকল স্তরের মানুষের কাছে মনোগ্রাহী করে তোলার জন্য ‘আপন মনের মাধুরী’ মিশিয়ে ইতিহাস লিখতে হবে। রচনার ভাষা মধুর ও
শজ-সরল হওয়ার বিষয়েও নজর দিতে হবে।
*************
Super
উত্তরমুছুনVery good
উত্তরমুছুনthank you soo much such a modified note....
উত্তরমুছুনplz allow us to copy the the text... so that we can print the note for reading.
উত্তরমুছুনThank ❤🌹
উত্তরমুছুন