উঃ লোককথার
কাহিনিগুলি ইতিহাস-নির্ভর না হলেও ইতিহাস জানার জন্য এর বিশেষ গুরুত্ব আছে। যেমন –
1)
সমাজ-সংস্কৃতির পরিচয়। অতীতকালের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য
সম্পর্কে মোটামুটি আভাস পাওয়া যায়।
2)
কোন কোন কাহিনি থেকে তৎকালীন সময়ের অর্থনৈতিক
কাঠামো সম্পর্কে ধারণা করা যায়। যেমন, চাঁদ সদাগরের কাহিনি থেকে
মধ্যযুগের বনিকদের দূরদেশে বানিজ্য করার কথা জানা যায়।
3)
বিনোদনের মাধ্যম। লোককাহিনিগুলি যুগ
যুগ ধরে মানুষের আনন্দ-বিনোদনের কাজে লেগেছে। বর্তমান যুগেও এই কাহিনিগুলি
সিনেমা, টিভি সিরিয়ালের মোড়কে একই কাজ করে চলেছে। যেমন, ‘বেদের মেয়ে জোৎস্না’, ‘রূপবান কন্যা’, ‘সাত-ভাই-চম্পা’ ইত্যাদি।
4)
শিশু-শিক্ষায় অবদান। এই কাহিনিগুলি
শিশুশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ন প্রভাব ফেলে। নীতি-শিক্ষার ক্ষেত্রে শিশুমনের ওপর এই কাহিনিগুলি
সহজে প্রভাব ফেলে। যেমন, ‘আলীবাবা ও চল্লিশ চোর’ চুরি করার বিরুদ্ধে নীতিশিক্ষা দেয়।
5)
লোকশিক্ষার মাধ্যম। লোকশিক্ষার মাধ্যম
হিসাবে লোকগাথা বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে। এপ্রসঙ্গে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেন, ‘সন্তানকে বুদ্ধিমান করতে চাইলে তাদের লোককথার গল্প
পড়তে দাও। যদি তাদের আরও বুদ্ধিমান করতে চাও তাহলে আরও বেশি করে লোককথার গল্প পড়তে
দাও।
6)
অতীত ঐতিহ্য বহন। লোককথা অতীত ঐতিহ্য বহন করে। তাই কোন সমাজের অতীত ঐতিহ্য জানার জন্য লোককথা পড়া
জরুরী।
লোককথার এই গুরুত্বের কারণে একে ‘সজীব জীবাশ্ম’ বলা হয়।
মূল্যায়ন –
তবে মনে রাখতে
হবে যে,
লোককথার গল্পগুলির অধিকাংশই হয় সম্পূর্ন কাল্পনিক।
তাই এদের কোন ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকেনা।
যেমন, বেহুলার প্রার্থনায়
লখিন্দরের প্রাণ ফিরে পাওয়ার ঘটনা। তাই এর উপর ভিত্তি
করে গড়ে ওঠা ইতিহাস ভুল পথে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন