সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইতিহাস কী? পেশাদারি ইতিহাস বলতে কী বোঝ? অপেশাদারি ইতিহাসের সঙ্গে পেশাদারি ইতিহাসের পার্থক্য কী? পেশাদারি শাখা হিসাবে ইতিহাসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।

ইতিহাস কী :

সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল ইতিহাস। ঐতিহাসিক ই. এইছ. কার-এর মতে, ইতিহাস থেকে যে সমস্ত সাধারণ সূত্র গড়ে ওঠে সেগুলি মানুষের খুব কাজে লাগে। তাই বলা হয়, ইতিহাস হল মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারাবাহিক বিবরণ।

পেশাদারি ইতিহাস কী

পেশাদারি ইতিহাস হল ইতিহাসের সেই শাখা যা ঘটনার সত্যতা ও বাস্তবতা বজায় রেখে, পক্ষপাতহীন ভাবে, সুসংবদ্ধ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রচনা করা হয়।
                     I.        এই ইতিহাস প্রাথমিক উপাদানের উপর নির্ভর করে যথেষ্ট যাচাই ও বিশ্লেষণ করে লেখা হয়। তাই এর গ্রহণযোগ্যতা বেশি
                   II.        মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ও ধর্মীয়জীবনসহ মানব সভ্যতার সমগ্র বিষয়ই পেশাদারি ইতিহাসের আলোচনার বিষয় হয়ে থাকে।

পেশাদারি ও অপেশাদারি ইতিহাসের পার্থক্য


বিষয়
অপেশাদারি ইতিহাস
পেশাদারি ইতিহাস
১)
লিখন পদ্ধতি
এই ধরণের ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ভাবাবেগ ও পক্ষপাতিত্বের প্রভাব থাকে
যুক্তিনিষ্ঠ, ভাবাবেগ বর্জিত, নিরপেক্ষ, সুসংবদ্ধ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এই ইতিহাস লেখা হয়।
২)
ইতিহাসগত চেতনা
বুদ্ধিজীবীদের ইতিহাসগত ভাবনা-চেতনা পুরণে এই ইতিহাসের উপাদানগুলি অক্ষম।
এক্ষেত্রে পেশাদারি ইতিহাস খুবই কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।
৩)
যুগোত্তীর্ণ
এই ইতিহাসের উপাদানগুলি ইতিহাসের আকর হিসাবে কাজ করে। কিন্তু যুগোত্তীর্ণ হতে পারে না।
এই ধরণের ইতিহাস শুধুমাত্র বর্তমানের জ্ঞানভান্ডারকেই সমৃদ্ধ করে না, ভবিষ্যতের চলার পথের দিশা দেখায়
৪)
সৃষ্ঠির রীতিনীতি
ইতিহাসের সৃষ্ঠি, সৃষ্ঠির রীতিনীতি জানার ক্ষেত্রে এই ইতিহাসের বিশেষ কোন গুরুত্ব নেই।
এক্ষেত্রে এই ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
৫)
বিশ্বাসযোগ্যতা
এই ইতিহাসের নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা খুবই কম।
বৃত্তিমূলক শাখা হিসাবে এই ইতিহাসের নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি।
৬)
যাচাই ও বিশ্লেষণ
এখনে ঐতিহাসিক তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণ না করেই ইতিহাসে স্থান দেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে যাচাই ও বিশ্লেষণ করেই ইতিহাসে স্থান দেওয়া হয়।
৭)
ধারাবাহিকতা ও কালানুক্রম
ধারাবাহিকতা ও কালানুক্রম এখনে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
এখানে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা যে-কোনো ঘটনার বর্ননার ক্ষেত্রে সেই ঘটনার সময়কাল উল্লেখ করা।
৮)
অর্থনীতি
এই ধরণের ইতিহাসে অর্থনীতি নিতান্তই গৌণ ব্যাপার।
মানবসমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অর্থনীতি। তাই পেশাদারি ইতিহাস একে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়।

ইতিহাসের গুরুত্ব

প্রাচীন গ্রিক ঐতিহাসিক থুকিডিডিস ইতিহাসের গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলেছেন, অতীত কালে যা ঘটেছে তাঁর সঠিক জ্ঞান ভবিষ্যতে প্রয়োজন আসবে, কারণ মানুষের কর্মকান্ডের সম্ভাব্যতার নিরিখে ভবিষ্যতেও একই ধরণের ঘটনা পুনরায় সংঘটিত হবে। তাই, সমাজবিজ্ঞানের শাখা হিসাবে ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
                     I.        অতীতের আয়না। ইতিহাস হল অতীতের আয়না। পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব, তাদের বন্য বা অসভ্য জীবন, তা থেকে ক্রমে সভ্যতায় পদার্পণ, সভ্যতার ধারাবাহিক অগ্রগতি সবকিছুই আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি। ঐতিহাসিক বিউরি এবং র‍্যাংকের মত হল, “ঐতিহাসিকের কাজ হল শুধুমাত্র অতীত পুনর্গঠন করা এবং অতীত ঘটনাগুলিকে পরিবর্তিত বা বিকৃত না করে উপস্থাপিত করা।
                   II.        জ্ঞানের বিকাশ। আমরা সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা থেকে জ্ঞান সঞ্চয় করে থাকি। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় জ্ঞানের ভাণ্ডার হল ইতিহাস। মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের বা সমগ্র কর্মকান্ডের আলোচনা ইতিহাস থেকে জানতে পারি। ইতিহাসবিদ কলিংউড তাঁর The Idea of History’ গ্রন্থে লিখেছেন, ইতিহাসের সর্বপ্রধান গুরুত্ব হল তা আমাদের জ্ঞানে৪র ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে তোলে।
                 III.        ধারাবাহিকতা। সুদূর অতীত থেকে মানব সভ্যতা নানা পর্ব অতিক্রম করে বর্তমান সময়ে এসে পৌঁছেছে। ইতিহাস এই পর্বগুলির (যুগের) মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে যুগ ও ঘটনাকে ধারাবাহিক করে তোলে। আমারা প্রাগৈতিহাসিক, প্রায়-ঐতিহাসিক ও ঐতিহাসিক যুগের বিভিন্ন পর্ব অতিক্রম করে কিভাবে আধুনিক যুগে পৌঁছালাম তার ধারাবাহিক বিবরণ ইতিহাস থেকেই জানা যায়।
                IV.        ইতিহাস বর্তমান যুগের ভিত্তি। অতীতের সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মানুষ বর্তমান সময়ে এসেছে। (তাই বলা যায়, বর্তমান মানবজাতির মূল শিকড় ইতিহাসের সুদূর গভীরে গাথা রয়েছে।) সুতরাং বর্তমানকে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে একমাত্র ইতিহাসই সাহায্য করতে পারে। যেমন, বর্তমান ভারত নানা ভাষা ও ধর্মের দেশ। ভাষা ও ধর্মের এই বিভিন্নতার ভিত্তি যে লুকিয়ে আছে ভারতের সুপ্রাচীন অতীতে তা আমরা ইতিহাস থেকেই জানতে পারি।
                  V.        স্থিতিলীলতার গুরুত্ব। যে জাতির জীবন যত বেশি স্থিতিশীল তারা তত বেশি উন্নত। এই স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির এই যে কার্যকারণ সম্পর্ক তা কোনো জাতির ইতিহাস ঘাঁটলেই জানা যায়।
                VI.        রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উন্নয়ন। কোনো শাসকের রাজনৈতিক কিম্বা প্রশাসনিক পদক্ষেপগুলির বিশ্লেষণের মধ্যেই আছে তার সাফল্য কিম্বা ব্যর্থতার অন্তর্নিহিত কারণ। বর্তমান শাসকরা ইতিহাস থেকে নেওয়া বিশ্লেষণকে কাজে লাগিয়ে দেশের অগ্রগতিকে নিশ্চিত করতে পারেন। (যেমন, আকবরের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ পরবর্তীকালের শাসকদের সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে।)
              VII.        অর্থনৈতিক উন্নয়ন। মানব সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অর্থনীতি। কী ধরণের অর্থনীতি রাষ্ট্র বা সমাজের কল্যাণ সাধন করতে পারে সে বিষয়ে ইতিহাস সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারে। যেমন, ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব ইত্যাদির পিছনে অর্থনৈতিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল যা অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে।
            VIII.        ধর্মসহিষ্ণুতা। ইতিহাস মানুষের ধর্ম-জীবন নিয়েও আলোচনা করে। ইতিহাস থেকেই আমরা জানতে পারি যে, স্ম্রাট অশোকের ধর্মবিজয় নীতি ও আকবরের ধর্মসহিষ্ণুতার নীতি জাতি ও রাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী হতে সাহায্য করেছিল।
                IX.        সাংস্কৃতিক অগ্রগতি। ইতিহাস জানতে সাহায্য করে যে, আমাদের বর্তমান সংস্কৃতি অতীতের সংস্কৃতির ধারাবাহিক বিবর্তনের পরিণাম।
                  X.        জাতিয়তাবোধের বিকাশ। নিজের দেশ ও জাতির প্রতি কোনো জনগোষ্ঠীর ভালোবাসার প্রকাশকে জাতীয়তাবাদ বলে। ইতিহাস কোনো জাতিকে তার অতীত ঐতিহ্য ও মহত্ত্ব কিম্বা অন্য কোন দেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের জাতীয়তাবোধে উদবুদ্ধ করতে পারে। আমেরিকার স্বাধীনতার যুদ্ধ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এভাবেই প্রভাবিত করেছে।
                XI.        আত্মপ্রত্য্যের বিকাশ। ইতিহাস কোনো জাতির জীবনে আত্মপ্রত্যয়ের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। অতীতের বিভিন্ন মানব জাতির যুগান্তকারী কর্মকান্ডের কথা মানুষ ইতিহাস থেকেই জানতে পারে। ফলে তারা উপলব্ধি করে বর্তমান ও ভবিষ্যতের মানুষও চেষ্টা করলে তেমন কাজ করা সম্ভব। যেমন, মারাঠা জাতির অতীত কর্মকান্ড ও বিপুল শক্তির কথাই শিবাজীর নেতৃত্বে মারাঠাদের মোঘলদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে সাহস যুগিয়েছিল।
              XII.        দুর্যোগ সম্পর্কে সতর্কতা। বিভিন্ন দুর্যোগের ফলে অতীতকালে বহু জনজাতির সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে। যেমন ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। পরবর্তীকালে বিভিন্ন ঐতিহাসিক গবেষণা করে দেখিয়েছেন, কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যেত। ইতিহাসের এই তথ্য পরবর্তী প্রজন্মের দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
            XIII.        পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে জ্ঞানলাভ। ইতিহাস বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা করে। এই নীতির বিশ্লেষণ কোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে সাহায্য করে থাকে। ভারতের পঞ্চশীল নীতি পরবর্তী সময়ে তৃতীয় বিশ্বের পররাষ্ট্রনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।

মূল্যায়ন

মানবজাতির সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, সংস্কৃতি প্রভৃতি সবকিছুই ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়। তাই এসব বিষয় সম্পর্কে সার্বিক জ্ঞানলাভের জন্য ইতিহাস পাঠ অত্যন্ত জরুরি। প্রকৃতপক্ষে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে মানব সমাজ আরও সুন্দর ও নিরাপদ হয়ে উঠতে পারে। যদিও মানুষ তা সবসময় নেয় না। তাই হেগেল আক্ষেপ করে বলেছেন, “ইতিহাসের দূর্ভাগ্য যে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না”।
---------*******---------

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন



বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই বন্দোবস্তই ‘ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ’ -এ পরিণত হবে

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়ায়

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢা

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি। (১)

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিবাদ করলে কুয়োমি

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে ১৮৯৯ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিন সম্পর্কে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা মুক্তদ্বার নীতি নামে পরিচিত। এই নীতিতে বলা হয়, বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা অধিকৃত চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার সমান বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে হবে।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু বর্ণহিন্দুদের এই বর্নবিদ্বেষী প্রথার বিরুদ্ধে এবং মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের হাঁটার দাবিতে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা ভাইকম সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। আন্দোলনের ব্যাপকতায় মুগধ হয়ে গান্ধিজি একে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন জয়যুক্ত হয়।