সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অসম চুক্তি কী? চিনের উপর আরোপিত অসম চুক্তির বৈশিষ্ট্য। এপ্রসঙ্গে সঙ্গে শিমোনোশেকির চুক্তি ও বক্সার প্রোটোকলের শর্ত।

অসম চুক্তি বা বৈষম্যমূলক চুক্তি কী? চিনের উপর আরোপিত অসম চুক্তির বৈশিষ্ট্য লেখো। এপ্রসঙ্গে শিমোনোশেকির চুক্তি ও বক্সার প্রোটোকলের  শর্ত বর্ণনা কর।

What-is-an-unequal-contract-or-a-discriminatory-contract-Characteristics-of-Unequal-Treaties-Imposed-on-China-In-this-context-the-terms-of-Shimonosekis-contract-and-Boxer-Protocol-are-discussed

অসম চুক্তি কী?

উনিশ ও বিশ শতকের শুরুতে চিনে কিং বা চিং বংশের শাসকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান প্রভৃতি বহিরাগত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো চিনকে বিভিন্ন যুদ্ধে পরাজিত করে। প্রায় প্রত্যেকটি যুদ্ধের শেষে এই সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো চিনের উপর বিভিন্ন শোষণমূলক সন্ধি বা চুক্তি চাপিয়ে দেয়। এই চুক্তিগুলো চিনের ইতিহাসে সাধারণভাবে ‘অসম চুক্তি’ বা ‘বৈষম্যক চুক্তি’ নামে পরিচিত।

অসম চুক্তির বৈশিষ্ট্য :

চিনের উপর আরোপিত এই সমস্ত অসম চুক্তিগুলোর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।

১) একতরফা চুক্তি :

এই সমস্ত অসম চুক্তিগুলো চিনের সরকারের সঙ্গে পশ্চিমী শক্তিগুলোর পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে স্বাক্ষরিত হয়নি। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো একতরফাভাবে চিনের উপর এগুলো চাপিয়ে দিয়েছিল।

২) চিনা ভূখণ্ডে একাধিপত্ত প্রতিষ্ঠা :

এইসব চুক্তির মধ্য দিয়ে বিদেশী শক্তিগুলো চিনের ওপর নিজেদের একাধিপত্ত কায়েম করে। ফলে চিনা সরকার ও প্রশাসনের অধিকার ও ক্ষমতা কখনও লুপ্ত হয়, আবার কখনও হ্রাস পায়।

৩) চিনের সার্বভৌমত্বের আঘাত :

সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা-শক্তিগুলো এই সমস্ত অসম চুক্তি চিনের উপর চাপিয়ে দেওয়ার ফলে চিনের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হয়। চিন প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমী শক্তিগুলোর ‘আধা উপনিবেশে’ পরিণত হয়।

৪) আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায় :

চিন ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের জন্য একমাত্র চিনকেই দায়ী করা হয়। এই অজুহাতে পশ্চিমা শক্তিগুলো বল প্রয়োগের মাধ্যমে চিনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ ক্ষতিপূরণ আদায় করে।

৫) বাণিজ্যিক সুবিধা দেয় :

সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমী শক্তিগুলো চিনের ওপর এই সমস্ত অসম চুক্তি চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের বাণিজ্যে শুল্ক ছাড় দিতে বাধ্য করে। একারণে চিনা বণিকদের বিদেশি বণিকদের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় পড়তে হয়। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৬) খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর দখলদারি :

চিনের ওপর এই সমস্ত অসম চুক্তি আরোপ করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তাদের যাবতীয় খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদকেও কুক্ষিগত করার ব্যবস্থা করে।

৭) গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও অঞ্চলের দখলদারি :

এই সমস্ত অসম চুক্তির মাধ্যমে চিনকে বহিরাগত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কাছে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর খুলে দিতে এবং বিভিন্ন অঞ্চল লিজ দিতে বাধ্য করা হয়। এভাবেই চিন হংকং বন্দর ব্রিটেনকে এবং ম্যাকাও বন্দর পর্তুগালকে দিতে বাধ্য হয়।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, চিনের সঙ্গে এশিয়া ও পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর যে অসম চুক্তি সংঘটিত হয়েছিল তা চিনকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে ফেলেছিল এবং তার সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হয়েছিল।

দুটি অসম চুক্তির বিবরণ

যে সমস্ত অসম চুক্তির মাধ্যমে চিনের এই ভয়ংকর অবনমন ঘটানো হয়েছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি চুক্তি হলো ১) শিমোনোশেকির চুক্তি ও ২) বক্সার প্রটোকল।

শিমোনোশেকির চুক্তি ও তার শর্ত :

শিমোনোশেকির চুক্তির পটভূমি :

১৮৮১ সালে চিনের প্রতিবেশী দেশ জাপান কোরিয়ার লু-চু দ্বীপপুঞ্জ দখল করে নেয়। জাপান কর্তৃক এই দ্বীপপুঞ্জ দখল এবং সেখানে আগ্রাসন চালাতে থাকলে চীন এর প্রতিবাদ করে। ফলে ১৮৯৪ সালে চীন-জাপান যুদ্ধ শুরু হয়।

শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে চীন পরাজিত হলে জাপান চিনের উপর শিমোনোশেকির সন্ধি (১৮৯৫) চাপিয়ে দেয়।

শিমোনোশেকির চুক্তির শর্ত :

এই সন্ধির শর্ত অনুযায়ী :
১) চিন কোরিয়াকে স্বাধীনতা দানে বাধ্য হয়।
২) চিনের কাছ থেকে জাপান পেসকাডোরেস,  তাইওয়ান, লিয়াও টুং উপরদ্বীপ এবং পোর্ট আর্থার লাভ করে।
৩) জাপানকে চিন ২০০ মিলিয়ন কিউপিং টেল ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়।
৪) চিন তার বেশ কয়েকটি বন্দর জাপানের জন্য খুলে দিতে বাধ্য হয়।

শিমোনোশেকির চুক্তি ও ইউরোপীয়দের প্রতিক্রিয়া - চিনা তরমুজের খন্ডিকরন:

চিনের সঙ্গে জাপানের এই চুক্তির ফলে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সের চাপে জাপান লিয়াও টুং উপরদ্বীপ ও পোর্ট আর্থার চিনকে ফেরত দিতে বাধ্য হয়।

এর বিনিময়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলি চিনের কাছ থেকে চিনের বিভিন্ন অংশে নিজ নিজ প্রভাবাধীন অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। ফলে : ১) ইয়াংসি কিইয়াং উপত্যকা ও দক্ষিণ চিনে ইংল্যান্ড, ২) শাং টুং, হ্যাং কাও এবং টিয়েনসিনে জার্মানি, ৩) মাঞ্চুরিয়া ও বহির্মঙ্গোলিয়া রাশিয়া, ৪) ইউনান, কোয়াংসি এবং কোয়াং টু্ং অঞ্চলে ফ্রান্স এবং ৫) ফু-কিয়েন অঞ্চলে জাপান আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
ঐতিহাসিক হ্যারল্ড ভিনাক চিনের বিভিন্ন অঞ্চলকে এভাবে জাপান ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়ার অবস্থাকে ‘চিনা তরমুজের খন্ডিকরণ’ বলে অভিহিত করেছেন।

বক্সার প্রোটোকল ও তার শর্তাবলী :

বক্সার প্রোটোকলের পটভূমি :

চিন রাজবংশের শাসনকালে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর শোষণ, নির্যাতন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে ‘আই হো চুয়ান’ নামে একটি গুপ্ত সমিতি বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ ‘বক্সার বিদ্রোহ’ (১৮৯৯) নামে পরিচিত।

দীর্ঘ ছয় সপ্তাহ বিদ্রোহীদের দ্বারা অবরুদ্ধ থাকার পর ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া, জাপান, ইতালি প্রভৃতি আটটি দেশ সম্মিলিতভাবে এই বিদ্রোহ দমন করে। শেষপর্যন্ত আলোচনার পর ১৯০১ সালে ১১ টি বিদেশী শক্তির সঙ্গে চিনের আরও একটি অসম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি ‘বক্সার প্রটোকল’ নামে পরিচিত।

বক্সার প্রোটোকলের শর্ত :

বক্সার প্রোটোকলের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো চিনের ওপর বিভিন্ন কঠোর শর্ত চাপিয়ে দেয়।
১) বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত বারো জন রাজ পুরুষের প্রাণদণ্ড দেওয়া হয় এবং শতাধিক রাজপুরুষকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হয়।
২) চিনের ওপর বিরাট অংকের ক্ষতিপূরণ চাপানো হয়।
৩) পিকিং এর বিদেশি দূতাবাসগুলো রক্ষার জন্য সেখানে স্থায়ীভাবে বিদেশি সেনা মোতায়েন করা হয়।
৪) চিনের ২৫ টি দুর্গ ভেঙে ফেলা হয় এবং ১২৫ টি রেলস্টেশন ইউরোপীয় সেনাদের দখলে রাখা হয়।
৫) পরবর্তী দু'বছরের জন্য চিনে অস্ত্র নির্মাণ ও আমদানি নিষিদ্ধ হয়।
৬) চিন সরকার প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হয় যে, বিদেশী বণিকদের কাছ থেকে পাঁচ শতাংশের বেশি শুল্ক আদায় করবে না

এভাবে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো চিনের ওপর অসম চুক্তি চাপিয়ে দিয়ে চিনকে আর্থিকভাবে শোষণ ও রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর রাশিয়া এই নিয়ন্ত্রণ তুলে নিলেও ব্রিটেন এবং পর্তুগাল যথাক্রমে ১৯৯৭ (হংকং) ও ১৯৯৯ (ম্যাকাও) সাল পর্যন্ত তাদের এই আধিপত্য বজায় রাখে।
------xx-----

মন্তব্যসমূহ



বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই বন্দোবস্তই ‘ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ’ -এ পরিণত হবে

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়ায়

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢা

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যার মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি। (১) 

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিবাদ করলে কুয়োমি

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে ১৮৯৯ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিন সম্পর্কে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা মুক্তদ্বার নীতি নামে পরিচিত। এই নীতিতে বলা হয়, বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা অধিকৃত চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার সমান বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে হবে।

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু বর্ণহিন্দুদের এই বর্নবিদ্বেষী প্রথার বিরুদ্ধে এবং মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের হাঁটার দাবিতে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা ভাইকম সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। আন্দোলনের ব্যাপকতায় মুগধ হয়ে গান্ধিজি একে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন জয়যুক্ত হয়।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা