সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কিংবদন্তির বৈশিষ্ট্য। কিংবদন্তি ও লোককথার পার্থক্য।

কিংবদন্তির বৈশিষ্ট্য। কিংবদন্তি ও লোককথার পার্থক্য। 

Features of the legend. Difference Between Legend and Folktale

কিংবদন্তির বৈশিষ্ট্য।

প্রাচীন কিংবদন্তিগুলোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

১) কিংবদন্তের উদ্ভব :

অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন, পৌরাণিক কাহিনী সৃষ্টির বহু যুগ পর মানব সমাজে যখন ইতিহাসবোধ জন্ম নিতে শুরু করে তখনই কিংবদন্তি গুলির পথ চলা শুরু হয়।

২) কিংবদন্তির উদ্দেশ্য :

কোন ঘটনাকে প্রচার করা এবং জনমানসে তাকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্য নিয়েই কিংবদন্তি বা বিরগাথা গুলি সৃষ্টি করা হয়।

৩) বিষয়বস্তুর বিভিন্নতা :

কিংবদন্তির বিষয়বস্তু বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন, ইতিহাস নির্ভর কাহিনি, প্রেম বিরহের কাহিনি, ভূত-প্রেত এর কাহিনি কিম্বা সন্ন্যাসী ফকির পীর দরবেশদের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন কাহিনি।

৪) লোকসংস্কৃতির অংশ :

প্রজন্মের পর প্রজন্ম লোকমুখে প্রচলিত হওয়ার কারণে কিংবদন্তিগুলির মধ্যে লোকসংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য ( লোকবিশ্বাস ও সংস্কার) যুক্ত হয়েছে। তাই কিংবদন্তিগুলো লোকসমাজের দর্পণে পরিণত হয়।

৫) চরিত্রের বাস্তবতা :

কিংবদন্তির চরিত্রগুলোর ঐতিহাসিক সত্যতা সব সময় না থাকলেও জনমানসে এই বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে থাকে যে অতীত কালে তাদের অস্তিত্ব ছিল এই পৃথিবীতে। যেমন হারকিউলিস, প্রমিথিউস, রামচন্দ্র প্রমূখ

৬) বিস্ময় ও কল্পনার প্রেক্ষাপট :

বিস্ময় ও কল্পনা কিংবদন্তির প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সক্রিয় থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় কিংবদন্তির চরিত্রগুলোতে ঐতিহাসিক সত্যের ইঙ্গিত থাকলেও পরবর্তীকালে কল্পনার পল্লবীত পাতায় আচ্ছাদিত হয়ে প্রকৃত ইতিহাস প্রায় মুছে যায়। ফলে কিংবদন্তি থেকে সঠিক ইতিহাস উদ্ধার করার কাজ খুবই জটিল ও কঠিন হয়ে পড়ে।

৭) ভিত্তিহীন ঘটনার অস্তিত্ব :

অতীতের কোন ব্যক্তির বাস্তব জীবনের সঙ্গে বিভিন্ন অতি মানবীয়, অবিশ্বাস্য ও অতিরঞ্জিত ঘটনা যুক্ত হয়ে কিংবদন্তির চরিত্রগুলো  হয়। তাই কিংবদন্তির মধ্যে বিভিন্ন ভিত্তিহীন ঘটনার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।

৮) নৈতিক শিক্ষার উৎস :

কিংবদন্তির কাহিনী গুলোতে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে অতীত সময়ের নৈতিকতা সততা বীরত্ব ও ত্যাগের মহিমা কীর্তন করা হয়। ফলে এগুলো থেকে বর্তমান কালের মানুষেরা নৈতিক শিক্ষার রসদ খুঁজে পায়।

কিংবদন্তি ও লোককথার পার্থক্য

লোককথা ও কিংবদন্তীর বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করলে উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় :

১) শিশু কেন্দ্রিকতা :

কিংবদন্তির কাহিনীগুলিতে যে সকল বিষয় থাকে তাতে সকল বয়সি মানুষদের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ থাকে।

কিন্তু লোককথায় সাধারণত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ থাকে।

২) রচয়িতার পরিচয়হীনতা :

লোককথার মূল রচিতাদের পরিচয় সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। জানা যায় সংকলকদের কথা।

অন্যদিকে কিংবদন্তের চরিত্রগুলির সৃষ্টিকর্তা বা রচয়িতাদের সম্পর্কে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তথ্য পাওয়া যায়। যেমন, রামচন্দ্র  বাল্মিকি এবং শ্রীকৃষ্ণ ব্যাসদের দ্বারা রচিত।

৩) ধর্মীয় বিষয়ের গুরুত্বহীনতা :

লোককথার কাহিনীগুলিতে ধর্মীয় বিষয়বস্তু বিশেষ গুরুত্ব পায় না।

কিন্তু কিংবদন্তির চরিত্রগুলি যেসব কাহিনীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, সেখানে কখনও কখনও ধর্মীয় অনুসঙ্গ যুক্ত থাকে। রামচন্দ্র ও শ্রীকৃষ্ণ কিংবদন্তির এই চরিত্র দুটোই এমনই ধর্মীয় অনুষঙ্গ যুক্ত।

৪) মানবকেন্দ্রিক বিষয়বস্তু :

লোককথার বর্ণনায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখের বিষয়গুলি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।

অন্যদিকে, কিংবদন্তির বিষয়বস্তু নানামুখী। সেখানে ইতিহাস নির্ভর, প্রেম বিরহ নির্ভর, আধ্যাত্মিক ঘটনা নির্ভর, এমনকি ধর্মীয় অনুষঙ্গ নির্ভর বিষয়গুলি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।

৫) ইতর প্রাণে ব্যক্তিত্ব আরোপ :

লোককথার গল্পগুলিতে বিভিন্ন পশু পাখি ও কীট পতঙ্গের মধ্যে মানুষের মতো ব্যক্তিত্ব আলোকিত হতে দেখা যায়। তারা মানুষের মতো কথা বলে এবং নিজেদের চিন্তার প্রকাশ ঘটায়।

কিন্তু কিংবদন্তির কাহিনীগুলোতে এই ধরনের ইতর প্রাণে ব্যক্তিত্ব আরপের ঘটনা সাধারণত লক্ষ্য করা যায় না

৬) অনির্দিষ্ট স্থান কাল পাত্র :

লোককথার গল্পে ঘটনার স্থান-কাল পাত্রের সুনির্দিষ্ট উল্লেখ থাকে না। একতা এক দেশে এক রাজা ছিল - এভাবে গল্পগুলো শুরু হয়।

কিন্তু কিংবদন্তের কাহিনীগুলির মোটামুটি স্থান-কাল পাত্রের হদিশ পাওয়া যায়। হারকিউলিস গ্রিসের, গোপাল ভার বাংলাদেশের কিংবদন্তি চরিত্র।

৭) কাল্পনিক চরিত্রের উপস্থিতি :

লোকোকথার চরিত্রগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে তার তেমন মিল নেই বললেই চলে। সাত ভাই চম্পা, আলিবাবা, লখিন্দর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বুড়ো আংলা’র আংলা - এমনি সাপ কাল্পনিক চরিত্র।

অন্যদিকে কিংবদন্তির চরিত্রগুলি বাস্তব রূপ আছে বলে বলা হয়। গোপাল ভাঁড়, হারকিউলিস, বিক্রমাদিত্য, রবিনহুড ইত্যাদি চরিত্রগুলো রক্তমাংসের চরিত্র ছিল বলেই প্রমাণ পাওয়া যায়।


এ বিষয়ে আরো প্রশ্ন পড় :

১) কিংবদন্তি কী? কিংবদন্তির গুরুত্ব লেখো।

মন্তব্যসমূহ



বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই বন্দোবস্তই ‘ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ’ -এ পরিণত হবে

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়ায়

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢা

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যার মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি। (১) 

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিবাদ করলে কুয়োমি

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে ১৮৯৯ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিন সম্পর্কে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা মুক্তদ্বার নীতি নামে পরিচিত। এই নীতিতে বলা হয়, বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা অধিকৃত চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার সমান বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে হবে।

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু বর্ণহিন্দুদের এই বর্নবিদ্বেষী প্রথার বিরুদ্ধে এবং মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের হাঁটার দাবিতে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা ভাইকম সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। আন্দোলনের ব্যাপকতায় মুগধ হয়ে গান্ধিজি একে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন জয়যুক্ত হয়।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা