ক্যন্টন বাণিজ্যের শর্তাবলি উল্লেখ কর। এই শর্তারোপের পরিণতি কী হয়েছিল?
কোন কোন শর্তে বিদেশী বণিকরা ক্যান্টন বন্দরে বাণিজ্য করার অধিকার পেত? এই শর্ত আরোপের ফলাফল কী হয়েছিল?
What are the terms of Canton trade. Consequences of the terms of the Canton trade
ক্যান্টন বাণিজ্য :
সালে চিনা আদালত একমাত্র ক্যান্টন বন্দরকেই বিদেশি বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত বলে ঘোষণা করে। এভাবে ক্যান্টন বন্দরকে কেন্দ্র করে চিনে বিদেশীদের এক-বন্দরকেন্দ্রিক যে বাণিজ্য প্রথার সূচনা হয় তা-ই ‘ক্যান্টন বাণিজ্য’ নামে পরিচিত।
ক্যন্টন বাণিজ্যের শর্তাবলি :
বিদেশিদের চিনের ক্যান্টন বাণিজ্যে অংশ নিতে গেলে নিম্নলিখিত শর্ত মেনে চলতে হতো।
১) বনিক সংঘের নিয়ন্ত্রনাধীন বাণিজ্য :
ক্যান্টন বাণিজ্য পরিচালিত হতো ‘কো-হং’ নামে একটি ঘনিষ্ঠ বণিকসংঘ দ্বারা। এই বণিক সংঘ ছিল মূলত ব্যক্তি মালিকানাধীন। এদের মাধ্যমেই বিদেশী বণিকদের বাণিজ্য করতে হতো।
২) প্রত্যক্ষ বাণিজ্য করা যাবে না :
বিদেশি বণিকরা চীনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে প্রত্যক্ষভাবে বাণিজ্য পণ্য কিনতে পারত না। সরকার অনুমোদিত ‘কো-হং’ বণিক সংঘের মাধ্যমেই তাদের লেনদেন চালাতে হতো।
৩) বিদেশীদের মূল শহরে প্রবেশ নয় :
বিদেশি বণিকদের ক্যান্টন বন্দরের প্রধান ফটক পেরিয়ে মূল শহরে প্রবেশ করতে পারবে না।
৪) বণিক সংঘের শর্ত মেনে বাণিজ্য :
ক্যান্টন বন্দরের দায়িত্বে থাকা ‘কো-হং’ বণিক সংঘের বণিকরা বিদেশিদের সঙ্গে বাণিজ্যের শর্ত ঠিক করত। এদের শর্ত মেনেই বিদেশি বণিকদের বাণিজ্য করতে হতো।
৫) রুদ্ধ দ্বার নীতি :
এছাড়া ক্যান্টন বাণিজ্যে অংশগ্রহণকারী বিদেশী বণিকদের নানা রকম বিধিনিষেধ মেনে চলতে হতো। যেমন,
১) চিনা ভাষা ও আদব-কায়দা শেখার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল।
২) বণিকদের চিনা ফৌজদারি ও বাণিজ্যিক আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক ছিল।
৩) বণিকরা তাদের স্ত্রী-পুত্রদের ক্যান্টন বন্দর থেকে দূরবর্তী ম্যাকাও দ্বীপে রেখে আসতে বাধ্য হত।
৪) বিদেশি বাণিজ্য কুঠিতে মহিলা ও আগ্নেয়াস্ত্রের প্রবেশ এবং দাসী নিয়োগ নিষিদ্ধ ছিল
৫) বাণিজ্যের মরশুম শেষ হলে বণিকদের ক্যান্টন বন্দর ত্যাগ করতে হতো।
চীনে বিদেশি বণিকদের প্রতি আরোপ করা এই সব কঠোর নীতি ‘রুদ্ধদ্বার নীতি’ নামে পরিচিত।
শর্ত আরোপের ফলাফল :
ক্যান্টন বাণিজ্যে নানা ধরণের কঠোর শর্ত এবং বিধিনিষেধ আরোপ বিদেশি বণিকদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। এই ক্ষোভই ক্যান্টন বাণিজ্যের অবসানের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
১) ব্যবসা বন্ধের হুমকি :
পাশ্চাত্য রাষ্ট্রগুলো ক্যান্টন বাণিজ্যের কঠোর শর্ত ও বিধে নিষেধ গুলি শিথিল করার দাবি করলে তাদের ব্যবসা বন্ধের হুমকি দেয়া হতো।
২) বল প্রয়োগের নীতি গ্রহণ :
ব্যবসা বন্ধের হুমকি সহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানের জন্য ইংল্যান্ড একাধিকবার দূত পাঠায়। ১৭৮৭ সালে চার্লস ক্যাথকার্ট, ১৭৯৩ সালে লর্ড আমহার্স্ট চেষ্টা করেও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়। ফলে ইংল্যান্ড বল প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করে।
৩) চোরাপথে আফিম ব্যবসা :
শর্তের কড়াকড়ির কারণে উনবিংশ শতকের শুরু থেকে ব্রিটিশ বণিকরা চোরাপথে ভারত থেকে চিনে আফিম রপ্তানি শুরু করে। ফলে চিন সরকারের সঙ্গে তাদের বিরোধ বাধে।
৪) প্রথম আফিম যুদ্ধ :
চোরাপথে আফিন রপ্তানি কে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া এই বিরোধ ১৮৩৯ সালে যুদ্ধের রূপ নেয়। এই যুদ্ধ প্রথম আফিম যুদ্ধ বা ইঙ্গ-চিন যুদ্ধ (১৮৩৯-১৮৪২) নামে পরিচিত।
৫) প্রথম আফিম যুদ্ধে চিনের পরাজয় :
প্রথম আফিম যুদ্ধে চীনের পরাজয়ের ফলে ক্যান্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। কারণ, ১৮৪২ সালে নানকিং সন্ধির সন্ধির শর্ত অনুযায়ী চীন ক্যান্টনবন্দর সহ বেশ কয়েকটি বন্দর বিদেশিদের জন্য খুলে দিতে বাধ্য হয়।
উপসংহার:
এভাবে বিভিন্ন শর্ত আরোপের ফলে বিদেশি বণিকদের ক্ষোভ বাড়ে এবং তার পরিণতিতে শেষ পর্যন্ত চিনের ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান ঘটে।
----------xx--------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন