সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারতে বিভিন্ন উদ্যোগে রেলপথের সম্প্রসারণ সম্পর্কে আলোচনা কর।


অথবা,

গ্যারান্টি প্রথা কী? ভারতে রেলপথ স্থাপনে এই প্রথার কী ভূমিকা ছিল? ভারতের অর্থনীতিতে রেলপথের গুরুত্ব উল্লেখ কর

ভূমিকা ( গ্যারান্টি প্রথা)

ভারতে ১৮৩২ সাল থেকে রেলপথ স্থাপনের প্রস্তাব উঠতে থাকে ১৮৫৩ সালে লর্ড ডালহৌসি সর্বপ্রথম বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন করেন ব্রিটিশ কোম্পানিগুলিকে ভারতে রেলপথ স্থাপনে উৎসাহিত করার জন্য সরকার এই সময় কয়েকটি বিষয়ে গ্যারান্টি বা প্রতিশ্রুতি দেয় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, বিনামূল্যে জমিদান ও কোম্পানিকে বিনিয়োগ করা মূলধনের ওপর ৫ শতাংশ সুদ প্রদান এই প্রতিশ্রুতিই গ্যারান্টি প্রথা নামে পরিচিত

রেলপথের সম্প্রসারণ :

ভারতে রেলপথ সম্প্রসারণে গ্যারান্টি প্রথা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তবে সার্বিক সম্প্রসারণে সরকারি উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে সমগ্র সম্প্রসারণ প্রক্রিয়াকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করে আলোচনা করা যায়

প্রথম পর্যায়

গ্যারান্টি প্রথা ও তার শর্ত (বৈশিষ্ট্য) :

প্রথমে কয়েকটি ব্রিটিশ কোম্পানিকে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় এই পর্যায়ে তাদের উৎসাহিত করার জন্য সরকার কিছু প্রতিশ্রুতি দেয় যা গ্যারান্টি ব্যবস্থা নামে পরিচিত এর শর্তগুলি (বৈশিষ্ট্য) হল –
                    I.        সরকার কোম্পানিগুলিকে বিনামূল্যে জমি দেবে
                  II.        কোম্পানির বিনিয়োগ করা মূলধনের ওপর সরকার ৫% হারে সুদ দেবে
                III.        সুদ পরিশোধের পর লভ্যাংশ সরকার ও কোম্পানির মধ্যে সমানভাগে ভাগ করা হবে
               IV.        ২৫ বা ৫০ বছর পর সরকার ইচ্ছা করলে রেলপথগুলি ক্রয় করতে পারবে

গ্যারান্টি ব্যবস্থার প্রয়োগ

সরকারি গ্যারান্টি পাওয়ার পর ৮ টি ব্রটিশ কোম্পানি মূলধন বিনিয়োগ করে ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত তারা মোট ৪২৫৫ মাইল রেলপথ নির্মান করে

দুর্নীতি ও তার প্রতিবাদ

লাভের গ্যারান্টি থাকায় কোম্পানিগুলি অতিরিক্ত খরচ করতে থাকে এবং বাজেটে প্রচুর ঘাটতি দেখায় ভারতের রাজস্ব থেকে এই ঘাটতি মেটানো হয় ফলে এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে বাধ্য হয়ে সরকার এই ব্যবস্থা বাতিল করে

দ্বিতীয় পর্যায়

সরকারি উদ্যোগ

এই পর্যায়ে সরকার নিজে রেলপথ নির্মানের দায়িত্ব নেয় ১৮৬৯ থেকে ১৮৮০ পর্যন্ত বেশ কিছু রেলপথ নির্মিত হয়

কোম্পানিগুলির প্রতিবাদ

সরকার দায়িত্ব নেওয়ায় কোম্পানিগুলির মুনাফা লাভের পথ বন্ধ হয়ে যায় তারা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে চাপ তৈরি করে সরকারি উদ্যোগে রেলপথ নির্মান বন্ধের উদ্দেশ্যে ঠিক এই সময় একদিকে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ অন্যদিকে আফগান যুদ্ধ শুরু হলে সরকার আর্থিকদিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে রেলপথ নির্মান বন্ধ হয়ে যায়

তৃতীয় পর্যায়

গ্যারান্টি ব্যাবস্থা পুনপ্রবর্তন

১৮৮০ সালে পুনরায় গ্যারান্টি প্রথা চালু হয় নতুন ব্যবস্থার শর্ত হল –
A.  রেলপথ নির্মান পরিকল্পনার দায়িত্ব থাকবে সরকারের হাতে কোম্পানি শুধু নির্মান ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে
B.  পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে কোম্পানি ৩.৫ শতাংশ হারে সুদ পাবে

রেলপথের প্রসার

এই পর্বে (১৯০৫ পর্যন্ত) ২৮ হাজার মাইল রেলপথ নির্মিত হয়

রেলবোর্ড গঠন

১৯০৫ সালে রেল বোর্ড গঠিত হয় এর ফলে রেল ব্যবস্থা আরও সম্প্রসারিত হয়

অ্যাকওয়ার্থ কমিটি

রেলপথের সম্প্রসারণ ও রেল প্রশাসন সংস্কারের উদ্দেশ্যে ১৯১৯ সালে অ্যাকওয়ার্থ কমিটি নিযুক্ত হয় এই কমিটি প্রতি পাঁচ বছরে ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ, রেল বাজেটের পৃথকীকরণ, বেসরকারি নিয়ন্ত্রনের অবসান ও সরকারি নিয়ন্ত্রণে রেলপথ নির্মাণের সুপারিশ করে কিন্তু সরকার এই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি

চতুর্থ পর্যায়

সরকারি উদ্দ্যোগের পুনপ্রবর্তন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে ভারতীয় নেতৃবৃন্দ রেল ব্যবস্থায় বেসরকারি উদ্যোগ, ভারতীয় যাত্রীদের প্রতি দুর্ব্যবহার, মাশুল বৈষম্য নীতির প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন এই অবস্থায়, ১৯২৫ সালে সরকার রেলের দায়িত্ব নিজের হাতে নেয়, রেল বোর্ড পুনর্গঠন করে এবং পৃথক রেল বাজেট তৈরি করে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থাই কার্যকর ছিল

গুরুত্ব / ফলাফল :

রেলপথ ভারতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক – উভয় প্রকার প্রভাব ফেলেছিল কিন্তু গ্যারান্টি প্রথা ভারতীয় অর্থনীতির উন্নতি অপেক্ষা ক্ষতিই করেছিল বেশি
ü প্রথমত, এই প্রথার ফলেই ভারতে পুঁজি এসেছিল একথা ঠিক নয় উইলিয়াম থর্নটন এ প্রসঙ্গে বলেছেন – Unguaranteed capital would have gone into India for the construction of railways had it not been for the guarantee.
ü দ্বিতীয়ত, গ্যারান্টি প্রথার ফলে নতুন করে আবার দেশের সম্পদ নিষ্কাশনের পথ সুগম হয়
ü তৃতীয়ত, সরকার যে পাঁচ শতাংশ সুদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা সমসাময়িক লন্ডনের টাকার বাজারে প্রচলিত সুদের থেকে বেশি
ü চতুর্থত, সুদের হারের নিশ্চয়তা থাকায় কোম্পানিগুলি অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগ করতে থাকে কারণ, যত বেশি বিনিয়োগ হবে তত বেশি সুদ পাওয়া যাবে ফলে ভারতীয় অর্থনীতি দুর্বল হতে থাকে
তবে একথা ঠিক, রেলপথের প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতীয় জনগণের জীবন, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক প্রভাব পড়েছিল – বিপান চন্দ্র

মন্তব্যসমূহ

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)
OUR BOOKS fOR WBBSE & WBCHSE


বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই...

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক...

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়...

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি ব...

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও ...

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন...

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থি...

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা...

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু ...