সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারতে রেলপথ স্থাপনের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর।

অথবা,

গ্যারান্টি প্রথা কী? রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য কী ছিল? ভারতের অর্থনীতিতে রেলপথের কী প্রভাব পড়েছিল?

গ্যারান্টি প্রথা

ভারতে ১৮৩২ সাল থেকে রেলপথ স্থাপনের প্রস্তাব উঠতে থাকে ১৮৫৩ সালে লর্ড ডালহৌসি সর্বপ্রথম বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন করেন ব্রিটিশ কোম্পানিগুলিকে ভারতে রেলপথ স্থাপনে উৎসাহিত করার জন্য সরকার এই সময় কয়েকটি বিষয়ে গ্যারান্টি বা প্রতিশ্রুতি দেয় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, বিনামূল্যে জমিদান ও কোম্পানিকে বিনিয়োগ করা মূলধনের ওপর ৫ শতাংশ সুদ প্রদান এই প্রতিশ্রুতিই গ্যারান্টি প্রথা নামে পরিচিত

রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য / কারণ

ভারতে রেলপথ স্থাপনে ইংরেজদের বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্য কাজ করেছিল এই উদ্দেশ্যগুলির মধ্যেই রয়েছে রেলপথ গড়ে তোলার অন্তর্নিহিত কারণ উদ্দেশ্যগুলি হল –

১) অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য –

1)  ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট কারখানাগুলিতে ভারতের কাঁচামাল সহজে ও সুলভে বন্দরে নিয়ে যাওয়া
2)   ইংল্যান্ডের কারখানায় উৎপাদিত পণ্য দ্রুত ভারতের সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া
3)  শিল্পবিপ্লবের ফলে ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের হাতে জমা উদবৃত্ত পুঁজি রেলপথ সহ অন্যান্য নানা ক্ষেত্রে লগ্নির ব্যবস্থা করা
4)   ভারতবর্ষে ইংরেজদের কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা

২) রাজনৈতিক উদ্দেশ্য –

A.  সুবিশাল ভারতীয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করা
B.  রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রন সু-প্রতিষ্ঠিত করা
C.  প্রশাসনিক কাজের দ্রুত তদারকি করা

৩) সামরিক উদ্দেশ্য –

                    I.        ভারতের বিভিন্ন অংশে বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে দ্রুত সেনাবাহিনী পাঠানো
                  II.        বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে রক্ষা করা
                III.        সেনাবাহিনির কাছে দ্রুত খাদ্যরসদ ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো

৪) বিপর্যয় মোকাবিলা –

ঔপনিবেশিক ভারতে দুর্ভিক্ষ সহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছিল নিয়োমিত ঘটনা এই সব বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য উপদ্রুত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ ও খাদ্য পৌছানোর জন্য রেল যোগাযোগ অপরিহার্য ছিল

উপসংহার

সুগত বসু ও আয়েশা জালাল তাঁদের ‘Modern South Asia’ গ্রন্থে দেখিয়েছেন, ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যেই ভারতে রেলপথ স্থাপনের কর্মকান্ড গ্রহন করা হয়েছিল অধ্যাপক জে.এম.হার্ড যথার্থই বলেছেন, এর পিছনে যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্যই ছিল, সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই

রেলপথের ফলাফল / প্রভাব

ডঃ বিপান চন্দ্র বলেছেন, ‘ভারতে রেলপথের প্রবর্তন ভারতীয় জনজীবন, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরবর্তনের সূচনা করে’। এই পরিবর্তনের সদর্থক ও নঞর্থক দুটো দিক লক্ষ্য করা যায়।

সদর্থক প্রভাব

1.   প্রশাসনিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা। রেলপথ প্রতিষ্ঠার ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে। ফলে দেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যে প্রশাসনিক ঐক্য গড়ে ওঠে।
2.  পরিবহণের উন্নতি। রেল ব্যবস্থার প্রসারের ফলে ভারতে মানুষ ও পণ্য পরিবহণেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। ফলে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা অনেক সহজ হয়।
3.  আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধি। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় কৃষিপণ্যের প্রবেশ ঘটে। ফলে, কৃষির উৎপাদন ও বাণিজ্য বাড়ে।
4.  অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বৃদ্ধি। রেলপথের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারগুলির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ফলে, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যও বৃদ্ধি পায়।
5.  রপ্তানি বৃদ্ধি। রেলের মাধ্যমে স্বল্পব্যয়ে এবং দ্রত কাঁচামাল বন্দরে পৌঁছে দেওয়া যেত। সেখান থেকে সহজে আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে যেত। পরিসংখ্যান বলছে, ১৮৬২-১৯২৮ সালের মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় ২.৫ গুণ বৃদ্ধি পায়।
6.  আমদানি বৃদ্ধি। একই কারণে ইংল্যান্ডের কারখানায় উৎপাদিত শিল্পপণ্য সহজেই দেশের বাজারে চলে আসত। তাই ১৮৬২-১৯২৮ সালের মধ্যে আমদানি বাণিজ্য ৩ গুণ বৃদ্ধি পায়।
7.  শিল্প স্থাপন। কার্ল মার্কস বলেছিলেন, ‘The railway system will become, in India, truly the forerunner of modern industry.’( ‘রেলপথ ভারতে আধুনিক শিল্পায়নের প্রকৃত অগ্রদূত হবে’।) বাস্তবক্ষেত্রে রেলপথ কাঁচামালের যোগান ও উৎপাদিত পণ্য বাজারে পৌঁছে দিয়ে আধুনিক শিল্পের বিকাশে সাহায্য করেছিল।
8.  কর্মসংস্থান। রেলপথ নির্মান, রেলকারখানা ও পরিবহণের জন্য প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হয়। ১৮৯৫ সালের হিসাব অনুযায়ী রেলে নিযুক্ত কর্মীর সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৩ হাজার।
9.  জাতীয় ঐক্য। রেল ব্যবস্থার সূত্রে ভাষা, ধর্ম ও গোষ্ঠীগত বিভেদের প্রাচীর ভেঙে দেশবাসি পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ ও মতামত আদানপ্রদান করতে সক্ষম হয়। ফলে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও জাতীয়তাবোধ গড়ে ওঠে।

কুপ্রভাব বা নেতিবাচক প্রভাব।

তবে জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকরা রেল ব্যবস্থাকে সুনজরে দেখেননি। তাঁদের নজরে বেশ কিছু নেতিবাচক দিক ফুটে উঠেছে। যেমন –
1)  সম্পদের বহির্গমন। রেলপথ নির্মানে গ্যারান্টি প্রথার কারণে বার্ষিক ৫% হারে সুদ এবং সেই সঙ্গে মুনাফা ধরলে বিপুল পরিমাণ সম্পদ ইংল্যান্ডে চলে যেতে থাকে।
2)  ভারীশিল্পে অনগ্রসরতা। রেলের যাবতীয় যন্ত্রাংশ ইংল্যান্ড থেকে আনা হত। এবিষয়ে এখানে কোন ভারীশিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
3)  কর্মসংস্থানে বৈষম্য। রেলকে কেন্দ্র করে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হলেও তার অধিকাংশ পদে ইউরোপীয়দেরই নিয়োগ করা হত। রেলে উচ্চপদ্গুলিতে ভারতীয় নিয়োগের হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ।
4)  দেশীয় শিল্প-বাণিজ্যে অবক্ষয়। রেলের মাধ্যমে বিলাতি শিল্প-পণ্য ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে ফলে দেশীয় পণ্যগুলি অসম প্রতিযোগীতার স্মমুখীন হয় দেশীয় শিল্প-বাণিজ্য মার খায়
5)  বৈষম্যমূলক রেল মাশুল পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে ভারতীয়দের বেশি মাশুল দিতে হত ফলে দেশীয় ব্যাবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়
6)   দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাব রেলপথের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশষ্যও বিদেশে রপ্তানি হতে শুরু করে ফলে ভারতে খাদ্যশষ্যের অভাব দেখা দেয় পরিণামে ঘনঘন দুর্ভিক্ষ হতে শুরু করে
7)   অন্যান্য পরিবহণের ক্ষতি রেলপথে পরিবহণ বৃদ্ধির ফলে অন্যান্য পরবহণ মাধ্যমগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই মাধ্যমে নিযুক্ত শ্রমিকরা অনেকেই বেকার হয়ে পড়ে
8)  শাসনের ফাঁস কঠিন ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতার সামান্য সম্ভাবনা দেখ দিলেই রেলপথে সেনা পাঠিয়ে তা দমন করা সহজ হয়ে যায় ফলে শাসনের ফাঁস আরও কঠিন হয় ঐতিহাসিক বুকানন বলেছেন, স্বনির্ভরতার যে বর্ম ভারতের গ্রামগুলিকে এতদিন রক্ষা করে এসেছিল, ইস্পাতের রেল সেই বর্ম ভেদ কর গ্রামজীবনের রক্ত শোষণ শুরু করে দেয়

মূল্যায়ন / মন্তব্য

সার্বিক বিচারে বলা যায়, ১) ব্রিটিশ সরকার নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই রেলপথ স্থাপন করেছিল ২) এর ফলে ভারতীয় জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছিল যথেষ্ট ৩) তবে স্বাধীনতার পর এই রেলপথের মাধ্যমে ভারত শিল্পায়নের পথেই অগ্রসর হয়

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)
OUR BOOKS fOR WBBSE & WBCHSE


বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই...

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক...

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়...

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি ব...

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও ...

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন...

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থি...

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা...

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু ...