সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঊনিশ শতকে দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ভারতে কিভাবে বিভিন্ন শিল্পের অগ্রগতি ঘটেছে দেখাও।

অথবা,
ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত ভারতে শিল্পের বিকাশ সংক্ষেপে বর্ননা কর

উত্তর :
ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ সরকার ভারতকে একটি কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের পর পরিস্থিতি পাল্টায় বিলম্ব হলেও এই সময় ইউরোপীয় ও ভারতীয় উদ্যোগে শুরু হয় নির্দিষ্ট কিছু শিল্পের বিকাশ

ইউরোপীয় শিল্পোদ্যোগ

বৈশিষ্ট্য

ইউরোপীয় উদ্যোগে ভারতে শিল্প- বিকাশের কয়েকটি বিশেষত্ব লক্ষ্য করা যায় যেমন –
A.  ভারতীয় উদ্যোগের বিরোধিতা কারণ, ইংল্যান্ড ও ভারতীয় ইংরেজ শিল্পপতিরা মনে করতেন যে, ভারতীয় উদ্যোগে শিল্প গড়ে উঠলে ভারতের বাজার ও কাঁচামাল তাদের হাতছাড়া হবে
B.  ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতি ভারী বা মূলধন সৃষ্টিকারী শিল্পের পরিবর্তে ইউরোপীয়রা মূলত ভোগ্যপণ্যের সঙ্গে যুক্ত শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করতেন

শিল্প বিকাশের কারণ

ভারেত ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের শিল্পোদ্যোগের পিছনে কয়েকটি কারণ ছিল –
1)  উৎপাদন ব্যয় কম কারণ, সামান্য মজুরিতে প্রচুর শ্রমিক পাওয়া যেত
2)   সস্তায় কাঁচামাল কারণ, এখানে খুব সস্তায় প্রচুর কাঁচামাল পাওয়া যেত
3)  বিপুল চাহিদা কারণ, ভারত ও প্রতিবেশী দেশে শিল্পপণ্যের বিপুল চাহিদা ছিল
4)   বেশি লাভ ইংল্যান্ডের চেয়ে ভারতে পুঁজি বিনিয়োগ অধিক লাভজনক চিল
5)  সরকারি সাহায্য ইংরেজ শিল্পপতিরা ভারতে শিল্পোস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রচুর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করত
6)   ঋণের সুবিধা ব্রিটিশ শিল্পপতিরা ভারতে শিল্পস্থাপনের ক্ষেত্রে সহজ সুদে ঋণ পেতেন

বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ

ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের উদ্যোগে ভারতে যেসব শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল সেগুলি হল –
v রেলপথ ভারতে পুঁজি বিনিয়োগের সবচেয়ে লাভজনক ক্ষেত্র ছিল রেল বিপুল লাভের সুযোগ এবং গ্যারান্টি ব্যবস্থার নিশ্চয়তা থাকায় তারা রেলে প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করে ১৯০০ সালের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার রেলপথ নির্মিত হয়
v সুতিবস্ত্র ১৮১৮ সালে ইউরোপীয় উদ্যোগে হাওড়ায় বাউড়িয়া কটন মিল প্রতিষ্ঠিত হয় দুজন ফরাসি ১৮৩০ সালে পন্ডিচেরিতে এবং জেমস ল্যান্ডন (ইংরেজ) ১৮৫৩ সালে ব্রোচে সুতোকাটা কল স্থাপন করেন ১৯২১ সালের মধ্যে ইউরোপীয় উদ্যোগে ৯ টি কাপড়ের মিল গড়ে ওঠে
v চা ও কফি শিল্প বাগিচা শিল্পে ইউরোপীয় শিল্পপতিদের প্রাধান্য ছিল ১৮২৩ সালে রবার্ট ব্রুস আসামের জঙ্গলে সর্বপ্রথম চা গাছ আবিষ্কার করেন ১৮৩৪ সালে লর্ড বেন্টিঙ্ক চা কমিটি গঠন করেন এই কমিটির তথ্যের ভিত্তিতে চা শিল্প গড়ে ওঠে  কিছু ইংরেজ বণিক ১৮৩৯ সালে আসাম টি কোম্পানি গঠন করেন ক্রমে আসাম, বাংলা, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ ও দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি অঞ্চলে চা শিল্পের প্রসার ঘটে ১৯০২ সালে ভারতে মোট চা বাগিচার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০২টি ১৮২৩ সালে বাংলায় সর্বপ্রথম কফি চাষ শুরু হয় তবে দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি অঞ্চলে কফি চাষ লাভজনক হয়ে ওঠে
v নীল ও চিনি শিল্প ইউরোপীয় উদ্যোগে ভারতে নীল, আখ প্রভৃতি আবাদভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ঘটে ১৮৩৩ সালে সনদ আইনে নীলকররা জমির ওপর মালিকনাস্বত্ব লাভ করলে নীলচাষ ব্যপকতা লাভ করে চিনি শিল্পেও ইউরোপীয়রা প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করে
v পাটশিল্প ১৮৫৫ সালে জর্জ অকল্যান্ড রিষড়ায় সর্বপ্রথম পাটকল স্থাপন করেন গঙ্গার দুই তিরে বেশ কিছু পাট কল গড়ে ওঠে ১৯১২-১৩ সালে ভারতে পাটকলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৪টি এগুলিতে প্রায় ২লক্ষ ১৬হাজার কর্মী কাজ করত
v লৌহ-ইস্পাত ও জাহাজ শিল্প ইউরোপীয় পুঁজিপতিদের উদ্যোগে এই শিল্পের তেমন প্রসার ঘটেনি ১৮২০ সালে মাদ্রাজে প্রথম লোহা ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠে এরপর ব্রিটিশ উদ্যোগে বেঙ্গল আয়রন ওয়ার্কারস কোম্পানি(১৮৭৪), বেঙ্গল আয়রণ অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি (১৮৮৯), ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি (১৯১৮) গড়ে ওঠে
v কয়লা শিল্প ১৮১৪ সালে রানিগঞ্জে সর্বপ্রথম কয়লাখনি আবিস্কৃত হয় তবে রেলপথ স্থাপনের পর কয়লা শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটে ১৯০৯ সালের মধ্যে কেবল বাংলাতেই ১১৯টি কয়লা উত্তোলক কোম্পানি গড়ে ওঠে
v সেচের যন্ত্রপাতি নির্মান শিল্প ভারতে ব্রিটিশ পুঁজি বিনিয়োগের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্ষেত্র ছিল সেচের যন্ত্রপাতি নির্মান শিল্প সিন্ধু, পাঞ্জাব প্রভৃতি অঞ্চলে সেচের যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য ব্রিটিশ বিনিয়োগ করা হয়
v ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য শিল্প ব্রিটিশ উদ্যোগে ভারতে খুব সামান্য পরিমাণে হলেও ইঞ্জিনিয়ারিং, কাগজ, চামড়া, পশম, মদ, সিমেন্ট, দেশলাই, কাচ প্রভৃতি শিল্পের বিকাশ ঘটে

ভারতীয় শিল্পোদ্যোগ

ভারতে ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের উদ্যোগে যতটা শিল্পের বিকাশ ঘটেছে, ভারতীয় উদ্যোগে ততটা নয়

ভারতীয় উদ্যোগের প্রতিবন্ধকতার কারণ

এর কারণগুলি হল – ১) লাইসেন্স পেতে হয়রানি, ২) মূলধনের স্বল্পতা, ৩) রেল মাশুলের বৈষম্য, ৪) আমদানি-রপ্তানি শুল্কে বৈষম্য, ৫) যন্ত্রবিদের অভাব, ৬) সরকারি সহযোগিতা পেতে অসুবিধা ইত্যাদি

বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ

উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতীয় উদ্যোগে বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ ও অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়
Ø বস্ত্রশিল্প রেলপথের সম্প্রসারণ, চিনের চাহিদা, স্বদেশি আন্দোলনের প্রভাবে বস্ত্রশিল্পের অগ্রগতি তরান্বিত হয় প্রধানত বোম্বাইকে কেন্দ্র করে এই শিল্পের প্রসার ঘটে ১৮৫৩ সালে পারসি শিল্পপতি নানাভাই দাভর বোম্বাইতে সর্বপ্রথম কাপড়ের কল প্রতিষ্ঠা করেন এরপর একে একে শোলাপুর, নাগপুর,সুরাট, কানপুর প্রভৃতি স্থানে কাপড়ের কল স্থাপিত হয় ১৯০৫ সালে ভারতে কাপড়ের কলের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০৬
Ø ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভারী শিল্প ইউরোপীয়দের অনীহা থাকলেও ভারতীয়রা এক্ষেত্রে কিছু মূলধন বিনিয়োগ করে ১৮৬৭ সালে কিশোরীলাল মুখোপাধ্যায় শিবপুরে লোহার কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন এরপর ১৮৯২ সালে রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি’, নওয়াল কিশোর লক্ষৌ আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন ১৯০৭ সালে জামশেদজি টাটা প্রতিষ্ঠা করেন টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি ১৯০৬ সালে স্বদেশি আন্দোলনের সময় চিদাম্বরম পিল্লাই স্বদেশি জাহাজ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে ভারতীয়দের বিনিয়োগ ছিল শতকরা ৫ ভাগ
Ø কয়লা শিল্প ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে দ্বারকানাথ ঠাকুর কার, টেগর অ্যান্ড কোম্পানি কয়লাখনির কাজে মূলধন বিনিয়োগ করেন ১৮৯৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্ধমান জেলায় ৪০টি এবং ছোটনাগপুর ও মানভূম জেলায় ৬২টি কয়লাখনি ছিল ভারতীয় মালিকানায় কয়লাখনির সন্ধানে জামশেদজি টাটা প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেন
Ø চা শিল্প ১৮৭৮ সালে জয়চাঁদ সান্যাল জলপাইগুড়ি টি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এছাড়া মতিলাল শীল, দ্বারকানাথ ঠাকুর, মির্জা ইস্পাহানি প্রমুখ ভারতীয় চা শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করেন
Ø রাসায়নিক শিল্প বিখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ১৯০১ সালে কলকাতায় ঔষধ ও রাসায়নিক দ্রব্যের কারখানা বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিকাল ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠা করেন
Ø অভ্র শিল্প ১৮৯৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী হাজারিবাগ জেলার কোডার্মা অঞ্চলের ৩১১টি অভ্র খনির মধ্যে ৬৯টি ছিল ভারতীয় মালিকানায় ৬৯টির মধ্যে ৪৬টির মালিক ছিলেন বাকুড়া-বিষ্ণুপুরের সাহানা পরিবার
Ø অন্যান্য শিল্প  এছাড়া স্বদেশি আন্দোলনের সময় দেশীয় উদ্যোগে তাঁতবস্ত্র, সাবান, চিনি, লবণ, ওষুধ, তেল, চিরুনি, দেশলাই, চামড়াজাত সামগ্রী তৈরির কারখানা গড়ে উঠতে থাকে।

উপসংহার

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ঊনিশ শতকের শেষ দিকে ভারতে শিল্পের যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে। ১৯০৫ সালে ভারতে কলকারখানার মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬৮৮টি। এই শিল্পায়নে ব্রিটিশ পুঁজির প্রাধান্য থাকলেও ভারতীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। তবে, ইউরোপীয় পুঁজি বিনিয়োগ ছিল কলকাতা কেন্দ্রীক, অন্যদিকে ভারতীয় বিনিয়োগ ছিল বোম্বাই কেন্দ্রীক।

**************

মন্তব্যসমূহ



বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই বন্দোবস্তই ‘ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ’ -এ পরিণত হবে

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়ায়

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢা

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যার মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি। (১) 

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিবাদ করলে কুয়োমি

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে ১৮৯৯ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিন সম্পর্কে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা মুক্তদ্বার নীতি নামে পরিচিত। এই নীতিতে বলা হয়, বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা অধিকৃত চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার সমান বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে হবে।

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু বর্ণহিন্দুদের এই বর্নবিদ্বেষী প্রথার বিরুদ্ধে এবং মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের হাঁটার দাবিতে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা ভাইকম সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। আন্দোলনের ব্যাপকতায় মুগধ হয়ে গান্ধিজি একে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন জয়যুক্ত হয়।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা