সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইন্দোনেশিয়ার বিকাশ ও জাতি গঠনের বিভিন্ন পর্যায় আলোচনা কর। এক্ষেত্রে ড. সুকর্ণের ভূমিকা কী ছিল?

অথবা,
ড. সুকর্ণ কে ছিলেন? আধুনিক ইন্দোনেশিয়ার বিকাশ ও জাতি গঠনে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।
ইন্দোনেশিয়া ও সুকর্ণ :
প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বীপ-রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া অবস্থিত যা প্রায় ৩ হাজার দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। এখানকার প্রধান প্রধান দ্বীপগুলির মধ্যে অন্যতম হল সুমাত্রা, জাভা, বালি, বোর্নিও, পাপুয়া নিউ গিনি ইত্যাদি। আনুমানিক ১৫১১ সালে পর্তুগাল এখানে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। তাদের  আগমনের সূত্র ধরে একে একে স্পেন ও ব্রিটিশরা পৌঁছায়। সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে স্পেন ও ব্রিটিশদের বিতাড়িত করে হল্যান্ড ( ডাচ / ওলন্দাজ ) এখানে  ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ডাচ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসানের পর ১৭৯৯ সালে ডাচ সরকার প্রত্যক্ষভাবে ইন্দোনেশিয়ার শাসনভার গ্রহণ করে। বিংশ শতকের শুরুতে ইন্দোনেশিয়ায় ওলন্দাজ-বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। যার সুযোগ্য নেতৃত্বে এই আন্দোলন (মুক্তি সংগ্রাম) তীব্রতর হয়ে ওঠে, এবং আধুনিক ইন্দোনেশিয়ার বিকাশ জাতি গঠন সম্পূর্ণ হয় তিনি হলেন ড. সুকর্ণ।
বিকাশ ও জাতিগঠনে বিভিন্ন পর্যায় :
অষ্টাদশ শতকের শেষ দিক থেকে জাতি-রাষ্ট্র হিসাবে আধুনিক ইন্দোনেশিয়ার বিকাশ ঘটতে থাকে। বিশ শতকের সূচনায় এখানে কমিউনিস্ট বা সাম্যবাদী ভাবধারার প্রসার ঘটলে তা আরও গতি পায়। এই বিকাশের ধারাকে তিনটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা যায়।
প্রথম পর্যায় (১৯০০-১৯৪৫) :
  1. 'মারহেনিজম তত্ত্ব' (Marhaenism) : বান্দুংয়ে পড়ালেখা করতে গিয়ে সুকর্ণ তার জীবনের রাজনৈতিক ভাবাদর্শ হিসেবে মৌলিক ইসলাম ও সাম্যবাদকে গ্রহণ করেন। তবে তার রাজনৈতিক আদর্শের কেন্দ্রে আছে ‘মারহেনিজম’ নামক তত্ত্ব, যা তিনি নিজেই তৈরি করেন। ‘মারহেন’ শব্দটির অর্থ সাধারণ মানুষ। মার্ক্সিজমের সর্বহারাদের সুকর্ণ প্রতিস্থাপিত করেন এই সাধারণ মানুষ তত্ত্ব দিয়ে।
  2. পি.এন.আই-এর পথ-চলা : উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের সাথে সাথেই নিজের সম রাজনৈতিক ভাবাদর্শের শিক্ষার্থীদের সাথে মিশতে শুরু করেন। প্রতিষ্ঠা করেন ‘আলজামিন স্টাডিক্লাব’ নামে একটি পাঠচক্র। এই পাঠচক্রের মাধ্যমে সুকর্ণ একটি বড় সংখ্যক মানুষের কাছে স্বাধীনতার ডাক পৌঁছে দিতে সক্ষম হন। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়লে পাঠচক্রটি নাম পরিবর্তন করে একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়। পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধীতা করা এবং স্বাধীনতার লক্ষ্যে ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে একই পতাকাতলে আনার উদ্দেশ্য সামনে রেখে পথচলা শুরু হয় ‘পারতাই ন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়া’ তথা পি.এন.আই.-এর।
  3. সুকর্ণের গ্রেফতারবরণ : কিন্তু দ্রুতই ডাচ গোয়েন্দাদের নিকট এ তথ্য চলে যায়। ফলে গ্রেফতার হন সুকর্ণ। বিচারকার্যে সুকর্ণ স্বপক্ষের যুক্তিতে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশাল এক জ্বালাময়ী আবেগপূর্ণ বক্তৃতা দেন। বিচারে তাকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলেও তার রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়ায় তার এই বক্তৃতা।ফলে এক বছরের মাথায়ই মুক্তি পান সুকর্ণ।
  4. সহিংস আন্দোলন শুরু : কারাবরণের সময় তাঁর দল দুটি গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে যায়।এক দল সহিংস আন্দোলন করে দ্রুত ফলাফল আনার পক্ষে ছিল। অন্য দলটির সিদ্ধান্ত ছিল ধীরে ধীরে মানুষের মাঝে মুক্তির বোধ সৃষ্টি করে স্বাধীনতা আনা। মুক্তির পর সুকর্ণ প্রথম দলটির প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং মাত্র ৬ মাসের মাথায় পুনরায় গ্রেফতার হন। ১৯৪২ সালে জাপানি সেনাবাহিনীর ডাচ কলোনি আক্রমণ করে। ডাচরা জাপানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে  সুকর্ণ মুক্তি পান। জাপানি বাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিতোশি ইমামুরা সুকর্ণকে প্রধান করে ইন্দোনেশিয়ানদের নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সুকর্ণ সানন্দে এই প্রস্তাবে রাজি হন।
  5. ‘ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা : কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই জাপানিদের বন্ধুত্বের কারণ উদঘাটন করতে সক্ষম হন সুকর্ণ। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপান মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে স্বাধীন ‘ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা করেন সুকর্ণ। নতুন সংবিধানও প্রণয়ন করেন। সাথে সাথে নিজেকে রাষ্ট্রপতি এবং বন্ধু মোহাম্মদ হাত্তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।
দ্বিতীয় পর্যায় (১৯৪৫-১৯৫০) :
  1. ডাচরা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় : তবে জাভা আর সুমাত্রা ছাড়া আশেপাশের অঞ্চলগুলো তখনো জাপান আর ডাচদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। ব্রিটিশদের সহযোগীতায় ডাচরা আবারও ইন্দোনেশিয়া কব্জা করার সুযোগ পায়। ডাচরা দ্বিতীয়বার ক্ষমতার বলয়ে ফিরে আসতে পেরে পূর্বের চেয়ে আগ্রাসী হয়ে ওঠে।বিশৃঙ্খলা চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছালে তা দাঙ্গায় রূপ নেয়, শত শত ইন্দোনেশীয় মারা যায়, নিহত হয় ৩ শতাধিক ব্রিটিশ সৈন্য। এ ঘটনার পর ব্রিটিশরা দ্রুত তল্পিতল্পা গুটিয়ে ডাচদের ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়ে ইন্দোনেশিয়া ত্যাগ করে।
  2. ‘অপারেটি প্রোডাক্ট’ ও ‘অপারেটি ক্রাই’ : স্বাধীনতাকামী ইন্দোনেশীয় জনগণকে বশে রাখতে সামরিক পদক্ষেপই গ্রহণ করে ডাচরা। ‘অপারেটি প্রোডাক্ট’ নামক সেই সামরিক অভিযানে ডাচরা জাভা সহ সুমাত্রার কৃষি জমির একটা বড় অংশই দখল করে নেয়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অভিযান বন্ধ করলেও এক বছরের মাথায় ‘অপারেটি ক্রাই’ শুরু করে ডাচরা। এ অভিযানে সমগ্র ইন্দোনেশিয়া দখল করে নেয় তারা, গ্রেফতার করে সুকর্ণ, হাত্তা সহ দেশের প্রথম সারির নেতাদের।
  3. স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার আত্মপ্রকাশ : তাদের এই সামরিক অভিযানে বিশ্বনেতারা সরব হয়ে ওঠেন। ইন্দোনেশিয়ায় যুগপৎ চলতে থাকে সুকর্ণের অনুসারী স্বাধীনতাকামীদের গেরিলা আক্রমণ। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নানামুখী চাপের মুখে ১৯৪৯ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চলে যাবার ঘোষণা দেয় ডাচরা। ফলে ঐক্যবদ্ধ, স্বাধীন, সার্বভৌম ইন্দোনেশিয়ার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই পর্বে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী মানসিকতার চূড়ান্ত আত্মপ্রকাশ ঘটে।
তৃতীয় পর্যায় (১৯৫০-১৯৯৮) :
  1. রাষ্ট্রপতি হিসেবে সুকর্ণ : ১৯৫০ সালে আগস্টের মাঝে ইন্দোনেশিয়া পুরোপুরি ডাচমুক্ত হয়ে যায়। সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে সুকর্ণের কাজকর্ম নিছক আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়। শাসন কাঠামোয় ক্ষমতার বৈষম্য নিয়ে সৃষ্টি হয় ক্ষোভ। সাম্প্রদায়িকতা আর স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয় সংঘাত।
  2. ‘গাইডেড ডেমোক্রেসি’ : দেশের পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপ হতে থাকলে সুকর্ণ অনুধাবন করলেন, গণতন্ত্র ইন্দোনেশিয়ায় ফলানো সম্ভব নয়। তিনি তাই ‘গাইডেড ডেমোক্রেসি’ নামে গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্রের পরিকল্পনা করলেন। অনানুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হাতে নিয়েই কঠোর হতে শুরু করেন সুকর্ণ। ১৯৬১ সালের মাঝেই বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে। ১৯৬৩ সালে সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে নিজেকে আজীবন রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
মূল্যায়ন :
বস্তুত, এই সময়-পর্বে  তিনি ইন্দোনেশিয়ায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক সংস্কার সাধন করেন। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু পশ্চিমা শক্তিগুলো সুকর্ণর স্বাধীনচেতা ও সাম্যবাদী মনোভাবকে পছন্দ না করায় ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীকে তার বিরুদ্ধে উসকে দেয়। ১৯৬৫ সালে জেনারেল সুহার্তো এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সুকর্ণ’র কাছ থেকে সকল ক্ষমতা কেড়ে নেন। দুবছর পর সুকর্ণ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। 
-----------------//-------------------

মন্তব্যসমূহ

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)
OUR BOOKS fOR WBBSE & WBCHSE


বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই...

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক...

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়...

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি ব...

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও ...

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন...

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থি...

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা...

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু ...