সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ক্ষমতা হস্তান্তরের পটভূমি উল্লেখ করো। এ ক্ষেত্রে ব্রিটিশের ভূমিকা ও ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করো।

ক্ষমতা হস্তান্তর :
ভারত বিভাজনের পরিকল্পনা ব্রিটিশ সরকার অনুমোদন করার পর লর্ড মাউন্টব্যাটেন ৩ রা জুন ১৯৪৭ তাঁর ভারত বিভাজনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা 'মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব' নামে পরিচিত। কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ এই প্রস্তাব মেনে নিলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট 'ভারতের স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭' পাশ করে এবং ভারতকে স্বাধীনতা প্রদান করে। এই ঘটনা 'ক্ষমতা হস্তান্তর' নামে পরিচিত। 
ক্ষমতা হস্তান্তরের পটভূমি :
১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পর ঘটনা পরম্পরা অতি দ্রুত ব্রিটিশদের বুঝিয়ে দেয় যে ভারতবাসীর হাতে শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এগিয়ে আসছে।
  1. ভারত ছাড়ো আন্দোলন : ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এই আন্দোলন প্রমাণ করে যে মুক্তি সংগ্রামে ভারতের জয় অনিবার্য। বড়লাট ওয়াভেল ব্রিটিশ সরকারকে লেখেন, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের দিন শেষ হয়েছে।'
  2. আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রাম : আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রবল বীরত্ব ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত দেশবাসীর মনে প্রবল জাতীয়তাবাদী আশা-আকাঙ্খা জাগিয়ে তোলে। প্রবল গণবিক্ষোভ ব্রিটিশ সরকারকে উপলব্ধি করতে বাধ্য করেছিল যে ভারতে তাদের দিন ফুরিয়ে এসেছে।
  3. ওয়াভেল পরিকল্পনা : উদ্ভুত পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে লর্ড ওয়াভেল ব্রিটিশ মন্ত্রিসভাকে ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নিতে বলেন। তিনি তাঁর প্রস্তাবে শীঘ্রই ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তর ও সংবিধান রচনার প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হন। 
  4. বৃহৎ শক্তির চাপ : ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি সামনে রেখে বৃহৎ দুই শক্তি আমেরিকা ও রাশিয়া ভারতের সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রিটেনকে চাপ দিতে থাকে। একই সঙ্গে ব্রিটেনের শ্রমিক দলও চার্চিলের ওপর চাপ বাড়াতে থাকে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে। 
  5. শ্রমিক দলের ক্ষমতা লাভ : ১৯৪৫ সালে ব্রিটেনে শ্রমিক দল ক্ষমতা লাভ করলে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ভারতে 'মন্ত্রী মিশন  বা ক্যাবিনেট মিশন পাঠান ভারতের স্বাধীনতা বিষয়ে আলোচনার জন্য। 
  6. ক্যাবিনেট মিশন : ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হলেও ক্যাবিনেট মিশন জানায়, ব্রিটিশ শাসিত ও দেশিও রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা হবে এবং শাসনতন্ত্র রচনার জন্য গণপরিষদ গঠিত হবে। শাসনতন্ত্র রচিত না হওয়া পর্যন্ত ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শাসন পরিচালনা করবে।
  7. নৌবিদ্রোহ : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বশেষ আন্দোলন হল ১৯৪৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের নৌবিদ্রোহ। কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি এর দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। 
  8. গণপরিষদ গঠন : মন্ত্রীমিশনের পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৪৬ সালে গণপরিষদ গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালের জানুয়ারি মুসলিম লিগ গণপরিষদের গঠন ও কর্মধারাকে বে-আইনি ঘোষণা করলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলি ঘোষণা করেন ৩০শে জুনের মধ্যে ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
  9. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা : ১৯৪৭ সালের মার্চে মাউন্টব্যাটেন বড়লাট হয়ে আসেন। ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজ দ্রুত করার জন্য এসে তিনি বুঝতে পারেন, ভারত বিভাগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব।
  10. ভারতের স্বাধীনতা আইন : এই পরিস্থিতিতে মাউন্টব্যাটেন তাঁর প্রস্তাব পেশ করেন। এই প্রস্তাব কংগ্রেস ও লিগ  মেনে নিলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' পাশ করে এবং ভারতকে স্বাধীনতা প্রদান করে। 
এভাবে আন্তর্জাতিক চাপ ও অভ্যন্তরীন ঘটনাবলীর প্রভাবে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্টের জন্মের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া কার্যকর হয়।
ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা :
ব্রিটিশ সরকার কখনই ক্ষমতা হস্তান্তর চান নি। পরিস্থিতি তাঁদের একাজে রাজি হতে বাধ্য করেছিল।
  • ওয়াভেল পরিকল্পনা সিমলা বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পিছনে দায়ী ছিল জিন্নার অন্যায্য দাবি, যা ব্রিটিশ সরকার প্রশ্রয় দিয়েছিল।
  • কিন্তু মন্ত্রীমিশন প্রেরণের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কারণ শ্রমিক দলের প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ২০ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭, ঘোষণা করেন আগামী ৩০ সে জুনের মধ্যে ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
  • মাউন্টব্যাটেন গান্ধিজির মতই অখন্ড ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু জিন্না ও জওহরলাল নেহেরুর অনড় মনোভাবের কারণে গান্ধিজির এই ইচ্ছাকে তিনি কার্যকর করতে পারেন নি। এই পরিস্থিতিতে তিনি উপলব্ধি করেন যে ভারত বিভাগ ছাড়া উপায় নেই। তাই ঘোষণা করেন 'মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব বা 'Mountbatten Award.
ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া :
মাউন্টব্যাটেনের দেশভাগের প্রস্তাবে বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। 
  1. সর্দার ও নেহেরুর চাপে গান্ধিজি ভারত বিভাগ মেনে নিযেছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া হল : 'সর্দার ও জওহরলাল মনে করে যে, দেশ ভাগ হলে নাকি শান্তি ফিরবে। কিন্তু আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, দেশভাগের মূল্যে আমরা যে স্বাধীনতা পাচ্ছি তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।'
  2. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভারত ভাগ হল কংগ্রেসের রাজনৈতিক পরাজয়ের শামিল। 
  3. বল্লভভাই প্যাটেল মনে করেন, ভারতভাগ কংগ্রেসের পরাজয় বা নতিস্বীকার নয়, তৎকালীন পরিস্থিতিতে দেশভাগই ছিল সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ।
  4. রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেন, গৃহযুদ্ধের চেয়ে দেশভাগ ভালো। 
  5. জিন্নাও খুশি হন নি। পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগের কারণে মাউন্টব্যাটেন ঘোষিত পাকিস্তানকে তিনি 'বিকলাঙ্গ ও কীটদগ্ধ' বলে অভিহিত করেছেন।
তবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এক আবেগদীপ্ত ভাষণে বলেন, "মধ্যরাত্রির ঘন্টা যখন বাজবে, সমগ্র বিশ্ব যখন গভীর নিদ্রামগ্ন, ভারত তখন জেগে উঠবে জীবন ও স্বাধীনতার চেতনায়।"


----------------///-----------------

মন্তব্যসমূহ

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)
OUR BOOKS fOR WBBSE & WBCHSE


বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই...

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক...

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়...

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি ব...

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও ...

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন...

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থি...

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা...

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু ...