সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইন্দোচিন কী? হো চি মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামের মুক্তি যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

অথবা,
ভিয়েতনামের মুক্তি যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
অথবা,
হো-চি-মিন কে ছিলেন? ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান কী ছিল?
অথবা,
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইন্দোচিনের পরিবর্তিত অবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। এ প্রসঙ্গে হো-চি-মিনের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

ইন্দোচিন 
ফরাসিরা ১৮৫৭ সালে কোচিন চিন ও কম্বোডিয়া অধিকার করে। এর পর একে একে ভিয়েতনাম, টংকিং, আন্নাম দখল করে ১৮৮৭ সালে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তোলে। ফরাসি অধিকৃত এই অঞ্চলই 'ইন্দোচিন' নামে পরিচিত।
ক) মুক্তি সংগ্রামের প্রথম পর্যায় :
  • ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ ও ইন্দোচিন :
বিংশ শতকের প্রথম দিক থেকে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ইন্দোচিনে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা ঘটে। যাঁর নেতৃত্বে এই আন্দোলন সাফল্যের দোঁড়গোড়ায় পৌঁছায় তিনি হচ্ছেন ভিয়েতনাম মুক্তি-সংগ্রামের পথপ্রদর্শক হো-চি-মিন।
  • জাপানি সাম্রাজ্যবাদ ও ইন্দোচীন :
ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির কাছে ফ্রান্স বিধ্বস্ত হলে তারা ইন্দোচিন থেকে সরে আসে। এই সুযোগে জার্মানির মিত্র দেশ জাপান সেখানে আধিপত্য গড়ে তোলে। ১৯৪৫ সালে অগস্টে জাপান মিত্র শক্তির কাছে আত্মসমর্পন করলে ভিয়েতমিন নেতা হো-চি-মিন টংকিং-এর হ্যানয় দখল করে 'ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র' প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন হো-চি-মিন
  • ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা :
১) হো-চি-মিন সরকারকে স্বীকৃতি :
১৯৪৫ সালে পিটসডম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইন্দোচিনকে দুভাগে ভাগ করা হয়। উত্তরাঞ্চল হো-চ-মিনের হাতে রাখা হয় এবং দক্ষিণাঞ্চল আবার ফরাসিদের কতৃত্বে আসে। ফরাসিরা এই সময় সমগ্র ভিয়েতনামের ওপর কতৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা শুরু করে। অবশেষে ভিয়েতমিন গেরিলা বাহিনীর আক্রমনে ফ্রান্স ব্যতিব্যস্ত হয়ে ১৯৪৬ সালে ভিয়েতমিনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্স হো-চি-মিন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।
২) বাও দাই রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা :
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ফ্রান্স এই চুক্তি ভঙ্গ করে আনম রাজবংশের বাও দাইকে ভিয়েতনামের সম্রাট বলে ঘোষণা করে। শুধু তাই নয় নভেম্বর মাসে হাইফঙ বন্দর ও সংলগ্ন অঞ্চলে বোমা ফেলে ৬০০০ অসামরিক মানুষকে হত্যা করে।
৩) দিয়েন-বিয়েন-ফু-এর যুদ্ধ :
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ভিয়েতমিনরা ফরাসি অধিকৃত টংকিং আক্রমণ করে। শুরু হয় দীর্ঘ আট বছর ব্যাপী যুদ্ধ। এই যুদ্ধের শেষ দিকে ক্রমাগত পরাজয় ঠেকাতে ফ্রান্স দিয়েন-বিয়েন-ফু নামক স্থানে একটি সশস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণ করে। খবর পেয়ে ভিয়েতমিন সেনাপতি নগুয়েন গিয়াপ এই ঘাঁটি ধ্বংস করেন। ফলে ফ্রান্স হো-চি-মিন সরকারের সঙ্গে জেনেভা চুক্তি করতে বাধ্য হন।
  • ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা  :
জেনেভা সম্মেলন :
  1. ১৯৫৪ সালে এই সম্মেলনে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়।
  2. দক্ষিণ ভিয়েতনামে বাও-দাইয়ের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট বিরোধী সরকার (ন দিন দিয়েম) ক্ষমতা লাভ করে।
  3. ভারতের নেতৃত্বে জাতিপুঞ্জের তদারকি কমিটির দ্বারা দুবছর পর নির্বাচন করে দুই অংশের সংযুক্তির বিষয় মিমাংশিত হবে - এই সিদ্ধান্ত হয়। 
বস্তুত, জেনেভা চুক্তির দ্বারা ভিয়েতনামে ফরাসি সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।

খ) মুক্তি সংগ্রামের দ্বিতীয় পর্যায় :
  • আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ ও ইন্দোচিন :
১৯৫৪ সালে জেনেভা চুক্তির দ্বারা ভিয়েতনামে যুদ্ধবিরতি হলেও ভিয়েতনাম-সমস্যার সমাধান হয় নি। কেন-না আমেরিকা নির্বাচনে হো--চি-মিনের নিশ্চিত জয়লাভ ও সাম্যবাদের প্রসার ঘটার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সামরিক হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়।
১) দিয়েম সরকার প্রতিষ্ঠা :
আমেরিকা তার অনুগ্রহপুষ্ট ন দিন দিয়েম-কে দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে --
  1. দিয়েম সরকারকে প্রচুর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য দিতে থাকে।
  2. সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্যবাদ প্রতিরোধ করার জন্য আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স ও পাকিস্তানকে নিয়ে সামরিক চুক্তি করে। এই চুক্তি 'ম্যানিলা চুক্তি' নামে পরিচিত।
  3. এছাড়া উক্ত দেশগুলিকে নিয়ে মার্কিন নেতৃত্বে 'দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা' (South-East Asia Treaty Organisation) বা 'সিয়াটো' গড়ে তোলে।
২) দিয়েম সরকারের পতন :
  1. উত্তর ভিয়েতনামে হো-চি-মিন সরকার বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ ও জনগণের মধ্যে জমি বন্টন করে মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন।
  2. অন্যদিকে দিয়েম সরকার স্বৈরাচারি ও দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ায় এই সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ বাড়ে।
  3. এই পরিস্থিতিতে হো-চি-মিন-এর  সহযোগিয়ায় দক্ষিণ ভিয়েতনামে ১৯৬০ সালে 'জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট' গড়ে ওঠে যা 'ভিয়েত কং' নামে পরিচিত। ফলে এই ফ্রন্টের সঙ্গে দিয়েম সরকারের সঙ্ঘর্ষ শুরু হয়।
  4. ১৯৬২ সালে ভিয়েত কং-দের বিরুদ্ধে মার্কিন বিমানবাহিনী যৌথ আক্রমণ শুরু করে। আক্রমণের পর দিয়েম সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল গণ আন্দোলন শুরু হয়। কিছুদিনের মধ্যেই এক সামরিক অভ্যুথানের ফলে দিয়েম সরকারের পতন ঘটে। 
৩) প্রত্যক্ষ মার্কিন হস্তক্ষেপ :
১৯৬৫ সাল থেকে ভিয়েতনামে প্রত্যক্ষ মার্কিন হস্তক্ষেপ বাড়তে থাকে। যুদ্ধে বিষাক্ত গ্যাস ও বিস্ফোরক দ্বারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। ১৯৬৮ সালে মার্কিন সেনা মাই লাই গ্রামে নির্মম হত্যাকান্ড ঘটায় যা 'মাই লাই ঘটনা' নামে পরিচিত। এর প্রতিবাদে ভিয়েত কং ও উত্তর ভিয়েতনামের সেনা বাহিনী একযোগে দক্ষিণ ভিয়েতনামের ৪৪ টি প্রাদেশিক রাজধানী শহর আক্রমণ করে।
৪) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় :
১৯৬৯ সালে হো-চি-মিনের মৃত্যুর ভিয়েতনামে মার্কিন সাম্রাজ্যের আক্রোশ চরমে পৌঁছায়।আমেরিকার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব ও-থান্ট বলেন, এই যুদ্ধ একটি বিদেশি শক্তি, বিশেষত আমেরিকানদের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ। ফলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন উপলব্ধি করেন, ভিয়েতনামে মার্কিন জঙ্গিনীতি আর চলবে না। ১৯৭৩ সালে আমেরিকা ভিয়েতনামের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে বাধ্য হয়। ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সেনা ও বিমানবাহিনী সরিয়ে নেওয়া হয়।
গ) ভিয়েতনামের ঐক্য :
১৯৭৫সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সেনাপতি ভ্যান মিন ভিয়েত কং-এর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭৬ সালে দুই ভিয়েতনাম সংযুক্ত হয়। জন্ম নেয় ঐক্যবদ্ধ 'ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র' যার প্রথম রাষ্ট্রপতি হন ফাম ভান দং। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ভিয়েতনাম ঐক্য আন্দোলন সাফল্যের দোঁড়গোড়ায় পৌঁছায় যার সীমাহীন আত্মত্যাগে তিনি হচ্ছেন ভিয়েতনাম মুক্তি-সংগ্রামের পথপ্রদর্শক হো-চি-মিন।
--------------//--------------


মন্তব্যসমূহ



বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই বন্দোবস্তই ‘ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ’ -এ পরিণত হবে

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়ায়

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢা

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি। (১)

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিবাদ করলে কুয়োমি

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে ১৮৯৯ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিন সম্পর্কে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা মুক্তদ্বার নীতি নামে পরিচিত। এই নীতিতে বলা হয়, বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা অধিকৃত চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার সমান বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে হবে।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু বর্ণহিন্দুদের এই বর্নবিদ্বেষী প্রথার বিরুদ্ধে এবং মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের হাঁটার দাবিতে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা ভাইকম সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। আন্দোলনের ব্যাপকতায় মুগধ হয়ে গান্ধিজি একে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন জয়যুক্ত হয়।