ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য নির্নয় করো। এই আন্দোলনে মহিলাদের অংশগ্ৰহণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
১৯৪২ সালের ২৬ শে এপ্রিল। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী 'হরিজন' পত্রিকায় 'ভারতছাড়ো' আন্দোলনের পরিকল্পনা পেশ করেন। এই বছর ১৪ ই জুলাই ওয়ার্ধা অধিবেশনে ভারতছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। শুরু হয় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বশেষ বৃহত্তর গণআন্দোলন। এই আন্দোলনের নেতা হিসেবে গান্ধিজি ঘোষণা করেন, অবিলম্বে ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগ করতে হবে, অন্যথায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও কংগ্রেস প্রত্যক্ষ সংগ্রামে নামবে।
আন্দোলনের পটভূমি :
তবে এই আন্দোলনের পটভূমি তৈরি ছিল আগে থেকেই।
১) ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি ভারতীয়দের সমর্থথন ও সহযোগিতার আশায় হাজার 942 সালে 23 শে মার্চ ক্রিপস মিশন কিছু প্রস্তাব নিয়ে ভারতে আসেন। কিন্তু এই প্রস্তাবে ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি না থাকায় এই মিশন ব্যর্থ হয়। ফলে গান্ধীজীর মনেে তীব্র ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয়। তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন, ' পূর্ণ স্বাধীনতাা অপেক্ষা কম কোন কিছুতেই আমি সন্তুষ্ট হবো না।'
২) জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা : ১৯৪২ সালের প্রথম থেকেই জাপান একে একে সিঙ্গাপুর মালয় ও ব্রহ্মদেশ কে প্রধানত করে এবং মার্চ মাসে রেঙ্গুন এর পতন হয়। এই পরিস্থিতিতে ভারতে জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনাা দেখা। মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মতে, জাপানি আক্রমণের এই সম্ভাবনাই গান্ধীজিকে গণআন্দোলনেের দিকে ঠেলে দেয়।
৩) দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। ১৯৪০-৪১ সালে এই বৃদ্ধির হার প্রায় ১৩.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ব্রিটিশ সরকারের ওপর কংগ্রেস ও সাধারণ মানুষ তীব্র্ অসন্তোষ প্রকাশ করে, যা গণআন্দোলনের চেহারা নেয়।
৪) তীব্র দমননীতি : এই গণ আন্দোলন দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর ওপর অকথ্য নির্যাতন ও সীমাহীন অত্যাচার শুরু করে। ফলে ভারতীয়রা অত্যন্ত বিক্ষিপ্ত হয়ে মুক্তির পথ খুঁজতে শুরু করে।
৫) স্বাধীনতার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা : ব্রিটিশ সরকারের স্বাধীনতা প্রদানের ক্ষেত্রে ঔদাসীন্য এবং সাংবিধানিক সংস্কারের অনাগ্রহ ভারতীয়় নেতৃবৃন্দকে অসন্তুষ্ট করে তোলে। ভারতবাসী যেকোনো মূল্যে স্বাধীনতালাভকে নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর হয়ে উঠেছিলেন। ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী লিখেছেন, " ভারত ছাড়ো আন্দোলনে গান্ধি যতটা নেতা, ততটাই জনগণের ইচ্ছার দাস।"
৬) পোড়ামাটির নীতি : জাপানি আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল পূর্ব ভারতে পোড়ামাটির নীতি গ্রহণ করে। ফলে এই এলাকায় প্রচুর খাদ্যশস্য ধ্বংস হয় এবং খাদ্য সংকট দেখা দেয়। তাদের এই নীতিও ভারতবর্ষেকে ক্ষুব্দ করে তুলেছিল।
৭) গান্ধীজীর অনমনীয় মনোভাব : অসহযোগ, আইন অমান্য প্রভৃতি আন্দোলন সত্বেও ব্রিটিশ সরকারের উদাসীনতা এবং ভারতের নিরাপত্তার বিষয়ে ব্রিটিশদের সদিচ্ছার অভাব গান্ধীজিকে যারপরনাই ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। তার এই অনমনীয় ক্ষোভ ভারতছাড়ো আন্দোলনের মতো একটি গণআন্দোলনের পটভূমি তৈরি করেছিল। জহরলাল নেহরু এ প্রসঙ্গে বলেছেন, " গান্ধীজিকে ইতিপূর্বে আর কখনো এতটা ব্রিটিশবিরোধী হতে দেখা যায়নি।"
এই পটভূমিতে 7 ই আগস্ট বোম্বাইয়ে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সভা বসে। আটই আগস্ট ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। আন্দোলনের মূলমন্ত্র ঘোষিত হয় "করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে।"
আন্দোলনে নারী সমাজের ভূমিকা :
আন্দোলনের শুরু হতেই, ব্রিটিশ সরকার কঠোর দমননীতির শুরু করে। গান্ধিজি, নেহেরু, মৌলানা আজাদ সহ প্রথম সারির সমস্ত নেতাকে কারারুদ্ধ করে। ফলে আন্দোলন পুরোপুরি নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, নেতা হীন এই আন্দোলন বিদ্যুৎ গতিতে গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয়। ঐতিহাসিক ডঃ বিপানচন্দ্র লিখেছেন, " জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটা প্রবল আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল। নেতৃত্বহীন এবং সংগঠনের জনতা যেভাবে খুশি সেইভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শনে মেতে উঠেছিল।"
এই স্বতস্ফূর্ত আন্দোলনে ভারতের নারী সমাজ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। স্কুল কলেজের ছাত্রীরা ব্যাপক পরিমাণে আন্দোলনে শামিল হয়। অরুনা আশরাফ আলী, সুচেতা কৃপালনী প্রমূখ নেত্রী গোপনে মেয়েদের সংগঠিত করেন।
গান্ধী বুড়ি নামে পরিচিত ৭৩ বছরের মাতঙ্গিনি হাজরা তমলুকের সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা তুলতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। মেদিনীপুর জেলার বিদ্যুৎ বাহিনী ও ভাগিনি সেবা শিবির নামে দুটো স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী এই আন্দোলনকে অন্য মাত্রায় পৌঁঁছে দেয়।
আসামের 13 বছরের কনকলতা বড়ুয়া, পাঞ্জাবের গৃহবধূ ভোগেশ্বরী ফুকননী এই আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন।
Thank you so much for help me
উত্তরমুছুনখুবিই ভালো,ধর্ণবাদ স্যার।
উত্তরমুছুন