ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ড. সুকর্ন-র ভূমিকা আলোচনা করো।
অথবা,
কোন কোন অঞ্চল নিয়ে ইন্দোনেশিয়া গড়ে উঠেছে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইন্দোলনেশিয়ার পরিবর্তিত অবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
ইন্দোনেশিয়া :
প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বীপ-রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া অবস্থিত যা প্রায় ৩ হাজার দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। এখানকার প্রধান প্রধান দ্বীপগুলির মধ্যে অন্যতম হল সুমাত্রা, জাভা, বালি, বোর্নিও, পাপুয়া নিউ গিনি ইত্যাদি।
ডাচ উপনিবেশ :
আনুমানিক ১৫১১ সালে পর্তুগাল এখানে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। তাদের আগমনের সূত্র ধরে একে একে স্পেন ও ব্রিটিশরা পৌঁছায়। সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে স্পেন ও ব্রিটিশদের বিতাড়িত করে হল্যান্ড ( ডাচ / ওলন্দাজ ) এখানে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
ডাচ বিরোধী আন্দোলন :
ডাচ কোম্পানির শাসনের অবসানের পর ১৭৯৯ সালে ডাচ সরকার প্রত্যক্ষভাবে ইন্দোনেশিয়ার শাসনভার গ্রহণ করে। বিংশ শতকের শুরুতে ইন্দোনেশিয়ায় ওলন্দাজ-বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।
জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কারণ (প্রেক্ষাপট) :
জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরুর পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ্য করা যায়।
জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কারণ (প্রেক্ষাপট) :
জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরুর পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ্য করা যায়।
- ওলন্দাজরা ইন্দোনেশিয়ার অধিবাসীদের ওপর নির্মম আর্থিক শোষণ ও অত্যাচার চালাত।
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাম্যবাদী আন্দোলন ওই দেশের শ্রমিক শ্রেণিকে প্রভাবিত করে।
- ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনও ইন্দোনেশিয়ার জনগনের ওপর গভীর রেখাপাত করে।
- ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্ল্বও সেদেশের মানুষকে দেশপ্রেমের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হতে সাহায্য করে।
- ১৯৪৭ সালে ভারত ও ১৯৪৮ সালে বর্মার স্বাধীনতা লাভ ইন্দোনেশিয়ার অধিবাসীদের স্বাধীনতা স্পৃহাকে বাড়িয়ে দেয়।
- সর্বপরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির লাগাম আলগা হওয়াও তাদের মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে।
উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষাপটে ১৯২০ সালের পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা শুরু হয়। ইন্দোনেশিয়ায় এই পর্বে কিছু বিক্ষিপ্ত লড়াই বাধে। এগুলিকে 'Pre-Nationalist Movement' বা 'প্রাক-জাতীয়তাবাদী আন্দোলন' বলে।
সারেকত ইসলাম :
এই দলের নেতৃত্বে ওলন্দাজ শাসনের বিরুদ্ধে জাতিয়তাবাদী আন্দোলন জোরদার হয়। মুসলিম জাতীয়তাবাদী সংগঠন সারেকত ইসলাম ইন্দোনেশিয়ার স্বায়ত্বশাসনের দাবি জানায়।
কলোনিয়াল কাউন্সিল গঠন :
সারেকত ইসলামের আন্দোলনের চাপে ১৯১৮ সালে ডাচ সরকার (ওলন্দাজ সরকার ) বেশ কিছু দাবি মেনে নেয়। দাবি মেনে তৈরি হয় 'কলোনিয়াল কাউন্সিল' বা ভোক্স্রাদ। এটা ছিল উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সফলতা।
ইন্দোনেশীয় ইউনিয়ন :
হল্যান্ডে পাঠরত ইন্দোনেশিয়ার প্রবাসী ছাত্ররা এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
ইন্দোনেশীয় জাতীয়তাবাদী দল :
পরে এদের সদস্যদের নিয়ে ড. সুকর্ণ ১৯২৭ সালে গড়ে তুলেছিলেন ইন্দোনেশীয় জাতীয়তাবাদী দল। এই দল সর্বপ্রথম দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। জাতীয় দলের শক্তি বৃদ্ধিতে ভীত হয়ে ডাচ সরকার সুকর্ণ-সহ তিনজন নেতাকে কারারুদ্ধ করে। এই সময় মহম্মদ হাত্তা জাতীয় দল (PNI)কে নেতৃত্ব দেন।
দমননীতি প্রয়োগ :
জাতীয় দলের নেতৃত্বে সর্বাত্মক শ্রমিক আন্দোলন দেখা দিলে ডাচ সরকার নিষ্ঠুর দমননীতি শুরু করে। জাতীয়তাবাদী দলকে ভেঙে দেওয়া হয়। সুকর্ণের সহযোগী নেতা মহম্মদ হাত্তা ও জাহরীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়।
আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব :
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে।
জাপানি উপনিবেশ :
এই সময় জার্মানির কাছে হল্যান্ড পরাজিত হলে সেই সুযোগে জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি গ্রহণ করে। তারা দ্রুত ইন্দোনেশিয়ার দখল নেয়। এই সময় জাপানের সহযোগিতায় ড. সুকর্ণ সহযোগী সরকার গঠন করে। কিন্তু অচিরেই দেখা যায় জাপানি সাম্রাজ্যবাদী শাসনের প্রকৃত চেহারা।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে মিত্রশক্তির কাছে জাপানের পরাজয় হলে এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠলে জাপান ইন্দোনেশিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ১৯৪৫ সালে ড. সুকর্ণ ইন্দোনেশিয়ায় একটি প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠন করেন।
আন্দোলনের তৃতীয় পর্ব :
এদিকে জাপান সরে দাঁড়ালে পিটসডাম চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশ বাহিনী আপাতভাবে ইন্দোনেশিয়ার দখল নেয়। এই সময় ইন্দোনেশিয়ার আত্মনিয়ন্ত্রেনের দাবি অগ্রাহ্য করে তারা হল্যান্ডকে সুবিধা করে দেয়।
ডাচ শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা :
ফলে ব্রিটিশ মদতে সুমাত্রা ও জাভা ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে ডাচ কতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় ব্রিটিশের মধ্যস্থতায় ডাচ-ইন্দোনেশীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি শেষে ব্রিটিশ সেনাদল ইন্দোনেশিয়া ত্যাগ করে।
ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা লাভ :
কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওলন্দাজরা চুক্তি ভেঙে সুমাত্রা ও জাভা অধিকার করার চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। জাপানিদের ফেলে যাওয়া অস্ত্রের সাহায্যে জাতীয়তাবাদীরা তীব্র আক্রমন চালাতে থাকে। অন্যদিকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা প্রভৃতি দেশ জাতীয়তাবাদীদের প্রতি সহানুভূতি দেখায়। ভারতও এই সময় হস্তক্ষেপ করে। ফলে ১৯৪৯ সালে UNO র মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের মধ্যে সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম ইন্দোনেশিয়ার জন্ম হয়।
স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি হন ড. সুকর্ণ এবং প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ড. মহম্মদ হাত্তা।
সারেকত ইসলাম :
এই দলের নেতৃত্বে ওলন্দাজ শাসনের বিরুদ্ধে জাতিয়তাবাদী আন্দোলন জোরদার হয়। মুসলিম জাতীয়তাবাদী সংগঠন সারেকত ইসলাম ইন্দোনেশিয়ার স্বায়ত্বশাসনের দাবি জানায়।
কলোনিয়াল কাউন্সিল গঠন :
সারেকত ইসলামের আন্দোলনের চাপে ১৯১৮ সালে ডাচ সরকার (ওলন্দাজ সরকার ) বেশ কিছু দাবি মেনে নেয়। দাবি মেনে তৈরি হয় 'কলোনিয়াল কাউন্সিল' বা ভোক্স্রাদ। এটা ছিল উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সফলতা।
ইন্দোনেশীয় ইউনিয়ন :
হল্যান্ডে পাঠরত ইন্দোনেশিয়ার প্রবাসী ছাত্ররা এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
ইন্দোনেশীয় জাতীয়তাবাদী দল :
পরে এদের সদস্যদের নিয়ে ড. সুকর্ণ ১৯২৭ সালে গড়ে তুলেছিলেন ইন্দোনেশীয় জাতীয়তাবাদী দল। এই দল সর্বপ্রথম দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। জাতীয় দলের শক্তি বৃদ্ধিতে ভীত হয়ে ডাচ সরকার সুকর্ণ-সহ তিনজন নেতাকে কারারুদ্ধ করে। এই সময় মহম্মদ হাত্তা জাতীয় দল (PNI)কে নেতৃত্ব দেন।
দমননীতি প্রয়োগ :
জাতীয় দলের নেতৃত্বে সর্বাত্মক শ্রমিক আন্দোলন দেখা দিলে ডাচ সরকার নিষ্ঠুর দমননীতি শুরু করে। জাতীয়তাবাদী দলকে ভেঙে দেওয়া হয়। সুকর্ণের সহযোগী নেতা মহম্মদ হাত্তা ও জাহরীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়।
আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব :
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে।
জাপানি উপনিবেশ :
এই সময় জার্মানির কাছে হল্যান্ড পরাজিত হলে সেই সুযোগে জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি গ্রহণ করে। তারা দ্রুত ইন্দোনেশিয়ার দখল নেয়। এই সময় জাপানের সহযোগিতায় ড. সুকর্ণ সহযোগী সরকার গঠন করে। কিন্তু অচিরেই দেখা যায় জাপানি সাম্রাজ্যবাদী শাসনের প্রকৃত চেহারা।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে মিত্রশক্তির কাছে জাপানের পরাজয় হলে এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠলে জাপান ইন্দোনেশিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ১৯৪৫ সালে ড. সুকর্ণ ইন্দোনেশিয়ায় একটি প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠন করেন।
আন্দোলনের তৃতীয় পর্ব :
এদিকে জাপান সরে দাঁড়ালে পিটসডাম চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশ বাহিনী আপাতভাবে ইন্দোনেশিয়ার দখল নেয়। এই সময় ইন্দোনেশিয়ার আত্মনিয়ন্ত্রেনের দাবি অগ্রাহ্য করে তারা হল্যান্ডকে সুবিধা করে দেয়।
ডাচ শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা :
ফলে ব্রিটিশ মদতে সুমাত্রা ও জাভা ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে ডাচ কতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় ব্রিটিশের মধ্যস্থতায় ডাচ-ইন্দোনেশীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি শেষে ব্রিটিশ সেনাদল ইন্দোনেশিয়া ত্যাগ করে।
ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা লাভ :
কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওলন্দাজরা চুক্তি ভেঙে সুমাত্রা ও জাভা অধিকার করার চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। জাপানিদের ফেলে যাওয়া অস্ত্রের সাহায্যে জাতীয়তাবাদীরা তীব্র আক্রমন চালাতে থাকে। অন্যদিকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা প্রভৃতি দেশ জাতীয়তাবাদীদের প্রতি সহানুভূতি দেখায়। ভারতও এই সময় হস্তক্ষেপ করে। ফলে ১৯৪৯ সালে UNO র মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের মধ্যে সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম ইন্দোনেশিয়ার জন্ম হয়।
স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি হন ড. সুকর্ণ এবং প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ড. মহম্মদ হাত্তা।
---------------//------------------
স্বত্ববিলোপ নীতি কে কবে চালু করেন
উত্তরমুছুনউপসংহার কোথায়
উত্তরমুছুন