সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোন পরিস্থিতিতে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে? এই মিশনের প্রস্তাবগুলি কী ছিল? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? এর ব্যর্থতার কারণ কী ছিল?

ক্রিপস মিশন বা ক্রিপস প্রস্তাব :

১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সাঁড়াশি আক্রমনের চাপে মিত্রশক্তির অন্যতম সদস্য ব্রিটেন নাজেহাল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ভারতে জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সমর্থন এবং ভারতকে যুদ্ধরত দেশ হিসেবে ঘোষণা করার প্রয়োজন পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ১৯৪২ সালের ২৩ মার্চ ভারতে পৌঁছান। ক্রিপসের এই ভারত-আগমন 'ক্রিপস দৌত্য' বা 'ক্রিপস মিশন' নামে পরিচিত।
আর এই সময় ভারতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে যে একগুচ্ছ প্রস্তাব পেশ করেন তা 'ক্রিপস প্রস্তাব' নাম পরিচিত।

পটভূমি বা কারণ :
ক্রিপস মিশনের ভারত আগমনের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে যা তার পটভূমি বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
  1. জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা : ১৯৪১ সালের ৭ই ডিসেম্বর জাপান মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করে। এবং জাপান অতিদ্রুত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি দখল করতে করতে ভারত সীমান্তে পৌঁছে যায়। কলকাতায় বোমা বর্ষণ করে। 
  2. মিত্রশক্তির চাপ : এই পরিস্থিতিতে ভারতের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। এই সহযোগিতা পাওয়ার জন্য চিনের রাষ্ট্রপতি চিয়াং-কাই-শেক ও মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট ব্রিটেনকে ভারত সম্পর্কে মনোভাব পরিবর্তনের জন্য চাপ তৈরি করে। 
  3. ব্রিটিশ রাজনীতিকদের চাপ : এই সময় স্বায়ত্বশাসন দানের উদ্দেশ্যে কিছু ব্রিটিশ রাজনীতিবিদও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলকে চাপ দিতে থাকেন। 
  4. রেঙ্গুনের পতন : ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে জাপানের হাতে রেঙ্গুনের পতন হলে ব্রিটিশের কাছে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। 
এই পরিস্থিতিতে ১১ই মার্চ চার্চিল যুদ্ধে ভারতের পূর্ণ সহযোগিতা লাভ ও ভারতের সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলি নিয়ে আলোচনার জন্য স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ভারতে পাঠানোর কথা ঘোষণা করে।

ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব :
স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস  ১৯৪২ সালে ভারতের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের সাথে এক সপ্তাহ ধরে আলোচনার পর তাঁদের কাছে ২৯ শে মার্চ একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখেন।
  1. ডোমিনিয়ন : যুদ্ধের পর ভারতকে 'ডোমিনিয়ন'-এর মর্যাদা দেওয়া হবে। 
  2. সংবিধান সভা : ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধান সভা গঠন করা হবে। 
  3. সংবিধান সভার সদস্য : প্রাদেশিক আইনসভাগুলির নিম্নকক্ষ দ্বারা নির্বাচিত এবং দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতিনিধিরা দেশীয় রাজাদের দ্বারা মনোনীত হবেন। 
  4. সংবিধান রচনা :এই সংবিধান সভা ভারতের নতুন সংবিধান রচনা করবে।
  5. দেশীয় রাজ্য : ভারতের কোনো প্রদেশ বা দেশীয় রাজ্য এই সংবিধান গ্রহণে রাজি না হলে সেই প্রদেশ বা দেশীয় রাজ্য নিজের সংবিধান রচনা করবে। 
  6. সেনাবাহিনী : সংবিধান রচিত হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ওপর ব্রিটিশ সরকারের পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে। 
  7. ভারতীয় সম্পদ : ভারতীয়দের সহযোগিতায় ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় সম্পদ যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করবে। 
  8. কার্যনির্বাহী পরিষদ : বড়লাটের কার্যনির্বাহী পরিষদে আপাতত বেশি সংখ্যক ভারতীয় সদস্য নেওয়া হবে। 
ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া :
ভারতীয় নেতৃবৃন্দ ক্রিপস প্রস্তাব গ্রহণ করেন নি। কেবলমাত্র মানবেন্দ্রনাথ রায়ের 'র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি' একে স্বাগত জানায়।
  • কংগ্রেসের বিরোধিতা : কংগ্রেস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। কারণ 
  1. পূর্ণ স্বাধীনতার কথা না থাকা। 
  2. প্রদেশগুলিকে বিচ্ছিন্ন থাকার অধিকার প্রদান। 
  3. দেশীয় রাজাদের মনোনীত সদস্য সংবিধান সভায় থাকার সিদ্ধান্ত। 
  4. প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রণ না থাকা। 
  5. অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের কথা না থাকা। 
এই সমস্ত কারণে গান্ধিজী এই প্রস্তাবকে 'একটি ফেলপড়া ব্যাঙ্কের' চেকের সঙ্গে তুলনা করে 'দুর্ভাগ্যজনক প্রস্তাব' বলে অভিহিত করেছেন।
  • মুসলিম লিগের বিরোধিতা : মুসলিম লিগ প্রধানত দুটি কারণে বিরোধিতা করেছিল।
  1. এতে পৃথক পাকিস্তানের সুনিশ্চিত প্রতিশ্রূতি ছিল না। 
  2. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংবিধান সভা গঠিত হলে হিন্দুদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হবে। 
  • অন্যান্যদের বিরোধিতা : কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ ছাড়া অন্যান্য কয়েকটি সম্প্রদায় এই প্রস্তাবে আপত্তি করেছিল।
  1. শিখ : এরা ভেবেছিল, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঞ্জাব প্রদেশ পাকিস্তানে যোগ দিলে শিখদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। 
  2. হিন্দু মহাসভা : এরা ভারত বিভাজনের আশঙ্খা করেছিল। 
  3. অনুন্নত হিন্দু : এই প্রস্তাবের ফলে বর্ণহিন্দুদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। 
  4. খ্রিষ্টান : এই সম্প্রদায়ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিল। 
ব্যর্থতার কারণ :
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সম্প্রদায়ের বিরোধিতার কারণে এই মিশন (প্রস্তাব) ব্যর্থ হয়। এছাড়া --
  1. অধ্যাপক সুমিত সরকার লিখেছেন, 'অজস্র দ্বিমুখিতা আর ভুল বোঝাবুঝি ক্রিপস মিশনকে সর্বক্ষণ জর্জরিত করে আর শেষ অবধি ডুবিয়ে ছাড়ে। '
  2. ক্রিপস কংগ্রেস, লিগ, দেশীয় রাজা প্রভৃতির সঙ্গে আলাদা-আলাদা ভাবে আলোচনা করেছেন। ফলে আলোচনা বিশ্বাসযোগ্য হয় নি। 
  3. গান্ধিজিকে কম গুরুত্ব দেওয়ায় কংগ্রেসের বৃহৎ অংশ উৎসাহ হারায়। 
  4. ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল, ভারত-সচিব আমেরি, বড়লাট লিনলিথগো, প্রধান সেনাপতি ওয়াভেল - এরা বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করেছিলেন।
এই সমস্ত কারনে ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হয়।
--------------------//------------------

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন



বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই বন্দোবস্তই ‘ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ’ -এ পরিণত হবে

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়ায়

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢা

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি। (১)

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিবাদ করলে কুয়োমি

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে ১৮৯৯ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিন সম্পর্কে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা মুক্তদ্বার নীতি নামে পরিচিত। এই নীতিতে বলা হয়, বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা অধিকৃত চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার সমান বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে হবে।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু বর্ণহিন্দুদের এই বর্নবিদ্বেষী প্রথার বিরুদ্ধে এবং মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের হাঁটার দাবিতে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা ভাইকম সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। আন্দোলনের ব্যাপকতায় মুগধ হয়ে গান্ধিজি একে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন জয়যুক্ত হয়।