কোন পরিস্থিতিতে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে? এই মিশনের প্রস্তাবগুলি কী ছিল? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? এর ব্যর্থতার কারণ কী ছিল?
ক্রিপস মিশন বা ক্রিপস প্রস্তাব :
১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সাঁড়াশি আক্রমনের চাপে মিত্রশক্তির অন্যতম সদস্য ব্রিটেন নাজেহাল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ভারতে জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সমর্থন এবং ভারতকে যুদ্ধরত দেশ হিসেবে ঘোষণা করার প্রয়োজন পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ১৯৪২ সালের ২৩ মার্চ ভারতে পৌঁছান। ক্রিপসের এই ভারত-আগমন 'ক্রিপস দৌত্য' বা 'ক্রিপস মিশন' নামে পরিচিত।
১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সাঁড়াশি আক্রমনের চাপে মিত্রশক্তির অন্যতম সদস্য ব্রিটেন নাজেহাল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ভারতে জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সমর্থন এবং ভারতকে যুদ্ধরত দেশ হিসেবে ঘোষণা করার প্রয়োজন পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ১৯৪২ সালের ২৩ মার্চ ভারতে পৌঁছান। ক্রিপসের এই ভারত-আগমন 'ক্রিপস দৌত্য' বা 'ক্রিপস মিশন' নামে পরিচিত।
আর এই সময় ভারতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে যে একগুচ্ছ প্রস্তাব পেশ করেন তা 'ক্রিপস প্রস্তাব' নাম পরিচিত।
পটভূমি বা কারণ :
ক্রিপস মিশনের ভারত আগমনের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে যা তার পটভূমি বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব :
স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ১৯৪২ সালে ভারতের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের সাথে এক সপ্তাহ ধরে আলোচনার পর তাঁদের কাছে ২৯ শে মার্চ একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখেন।
ভারতীয় নেতৃবৃন্দ ক্রিপস প্রস্তাব গ্রহণ করেন নি। কেবলমাত্র মানবেন্দ্রনাথ রায়ের 'র্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি' একে স্বাগত জানায়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সম্প্রদায়ের বিরোধিতার কারণে এই মিশন (প্রস্তাব) ব্যর্থ হয়। এছাড়া --
ক্রিপস মিশনের ভারত আগমনের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে যা তার পটভূমি বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
- জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা : ১৯৪১ সালের ৭ই ডিসেম্বর জাপান মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করে। এবং জাপান অতিদ্রুত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি দখল করতে করতে ভারত সীমান্তে পৌঁছে যায়। কলকাতায় বোমা বর্ষণ করে।
- মিত্রশক্তির চাপ : এই পরিস্থিতিতে ভারতের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। এই সহযোগিতা পাওয়ার জন্য চিনের রাষ্ট্রপতি চিয়াং-কাই-শেক ও মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট ব্রিটেনকে ভারত সম্পর্কে মনোভাব পরিবর্তনের জন্য চাপ তৈরি করে।
- ব্রিটিশ রাজনীতিকদের চাপ : এই সময় স্বায়ত্বশাসন দানের উদ্দেশ্যে কিছু ব্রিটিশ রাজনীতিবিদও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলকে চাপ দিতে থাকেন।
- রেঙ্গুনের পতন : ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে জাপানের হাতে রেঙ্গুনের পতন হলে ব্রিটিশের কাছে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব :
স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ১৯৪২ সালে ভারতের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের সাথে এক সপ্তাহ ধরে আলোচনার পর তাঁদের কাছে ২৯ শে মার্চ একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখেন।
- ডোমিনিয়ন : যুদ্ধের পর ভারতকে 'ডোমিনিয়ন'-এর মর্যাদা দেওয়া হবে।
- সংবিধান সভা : ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধান সভা গঠন করা হবে।
- সংবিধান সভার সদস্য : প্রাদেশিক আইনসভাগুলির নিম্নকক্ষ দ্বারা নির্বাচিত এবং দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতিনিধিরা দেশীয় রাজাদের দ্বারা মনোনীত হবেন।
- সংবিধান রচনা :এই সংবিধান সভা ভারতের নতুন সংবিধান রচনা করবে।
- দেশীয় রাজ্য : ভারতের কোনো প্রদেশ বা দেশীয় রাজ্য এই সংবিধান গ্রহণে রাজি না হলে সেই প্রদেশ বা দেশীয় রাজ্য নিজের সংবিধান রচনা করবে।
- সেনাবাহিনী : সংবিধান রচিত হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ওপর ব্রিটিশ সরকারের পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে।
- ভারতীয় সম্পদ : ভারতীয়দের সহযোগিতায় ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় সম্পদ যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করবে।
- কার্যনির্বাহী পরিষদ : বড়লাটের কার্যনির্বাহী পরিষদে আপাতত বেশি সংখ্যক ভারতীয় সদস্য নেওয়া হবে।
ভারতীয় নেতৃবৃন্দ ক্রিপস প্রস্তাব গ্রহণ করেন নি। কেবলমাত্র মানবেন্দ্রনাথ রায়ের 'র্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি' একে স্বাগত জানায়।
- কংগ্রেসের বিরোধিতা : কংগ্রেস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। কারণ
- পূর্ণ স্বাধীনতার কথা না থাকা।
- প্রদেশগুলিকে বিচ্ছিন্ন থাকার অধিকার প্রদান।
- দেশীয় রাজাদের মনোনীত সদস্য সংবিধান সভায় থাকার সিদ্ধান্ত।
- প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রণ না থাকা।
- অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের কথা না থাকা।
- মুসলিম লিগের বিরোধিতা : মুসলিম লিগ প্রধানত দুটি কারণে বিরোধিতা করেছিল।
- এতে পৃথক পাকিস্তানের সুনিশ্চিত প্রতিশ্রূতি ছিল না।
- নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংবিধান সভা গঠিত হলে হিন্দুদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
- অন্যান্যদের বিরোধিতা : কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ ছাড়া অন্যান্য কয়েকটি সম্প্রদায় এই প্রস্তাবে আপত্তি করেছিল।
- শিখ : এরা ভেবেছিল, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঞ্জাব প্রদেশ পাকিস্তানে যোগ দিলে শিখদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
- হিন্দু মহাসভা : এরা ভারত বিভাজনের আশঙ্খা করেছিল।
- অনুন্নত হিন্দু : এই প্রস্তাবের ফলে বর্ণহিন্দুদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
- খ্রিষ্টান : এই সম্প্রদায়ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিল।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সম্প্রদায়ের বিরোধিতার কারণে এই মিশন (প্রস্তাব) ব্যর্থ হয়। এছাড়া --
- অধ্যাপক সুমিত সরকার লিখেছেন, 'অজস্র দ্বিমুখিতা আর ভুল বোঝাবুঝি ক্রিপস মিশনকে সর্বক্ষণ জর্জরিত করে আর শেষ অবধি ডুবিয়ে ছাড়ে। '
- ক্রিপস কংগ্রেস, লিগ, দেশীয় রাজা প্রভৃতির সঙ্গে আলাদা-আলাদা ভাবে আলোচনা করেছেন। ফলে আলোচনা বিশ্বাসযোগ্য হয় নি।
- গান্ধিজিকে কম গুরুত্ব দেওয়ায় কংগ্রেসের বৃহৎ অংশ উৎসাহ হারায়।
- ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল, ভারত-সচিব আমেরি, বড়লাট লিনলিথগো, প্রধান সেনাপতি ওয়াভেল - এরা বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করেছিলেন।
--------------------//------------------
ত্রপস্ মিশন এর ফলাফল
উত্তরমুছুনদারুন 👌👌👍
উত্তরমুছুন