সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোরীয় সংকটের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর। এক্ষেত্রে ভারতের ভুমিকা কী ছিল?

কোরিয়া সংকট :
১৯১০ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৪৫) পর্যন্ত কোরিয়া ছিল জাপানের অধীনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হলে আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়া কোরিয়াকে ভাগাভাগি করে নেয়। উত্তর ভাগ সোভিয়েত রাশিয়া এবং দক্ষিণভাগ আমেরিকার অধিকারে যায়। প্রথমে ভাবা হয়েছিল এই বিভাজন ক্ষণস্থায়ী হবে। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই দুই পক্ষই নিজ নিজ অধিকৃত এলাকায় নিজ নিজ মতাদর্শ অনুযায়ী অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠা করলে কোরিয়া ঠাণ্ডা যুদ্ধের আবর্তে জড়িয়ে যায়। তৈরি হয় কোরিয়া সংকট। 
কোরিয়া সংকটের কারণ :
  1. মস্কো বৈঠকের ব্যর্থতা : ১৯৪৫ সালে মস্কোয় সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে ঠিক হয় উভয় পক্ষকে নিয়ে কোরিয়া বিষয়ে একটি যুগ্ম কমিশন গঠিত হবে। এই কমিশন কোরিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি অস্থায়ী স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
  2. রুশ-মার্কিন বিরোধ : ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে যুগ্ম কমিশনের এক সভায় সোভিয়েত রাশিয়া কোরিয়া থেকে রুশ-মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করে। কিন্তু আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের কারণে তারা তার বিরোধিতা করে। 
  3. জাতিপুঞ্জের উদ্যোগ ও তার ব্যর্থতা : ১৯৪৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে জাতিপুঞ্জে একটি অস্থায়ী কমিশন গঠন করা হয়। ভারতের অর্থনীতিবিদ কে.পি.এস.মেমন এর নেতৃত্বে এই কমিশন উত্তর কোরিয়ায় ঢুকতে চাইলে রাশিয়া অনুমতি দে নি।
  4. মার্কিন অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠা : এই পরিস্থিতিতে ১৯৪৮ সালে আমেরিকার মদতে ও  জাতিপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়। এর নাম হয় 'রিপাবলিক অফ কোরিয়া'। রাষ্ট্রপ্রধান হন সিগম্যান রি। ফলে কোরিয়ার সংযুক্তি গভীর সংকটে পড়ে  যায়।
  5. সোভিয়েত অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠা : এর পাল্টা হিসাবে রাশিয়া ১৯৪৮ সালের  কিম-উল-সুং এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা করেন 'পিপলস ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কোরিয়া'। ফলে কোরিয়া সংযুক্তি আরও গভীর সংকটে পড়ে। 
কোরিয়া যুদ্ধের সূচনা :
দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন একাধিপত্য সোভিয়েত রাশিয়া মেনে নিতে পারেনি। তাই ১৯৫০ সালে রুশ মদতে উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া আক্রমণ করে। ফলে দুই কোরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হয়।
⦿ আমেরিকার প্রতিক্রিয়া :
যুক্তরাষ্ট্র এটাকে সমাজতন্ত্রের আগ্রাসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাহায্যে এগিয়ে আসে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী বলে ঘোষণা করে এবং জাতিপুঞ্জের সকল সদস্য রাষ্ট্রের কাছে দক্ষিণ কোরিয়ারকে সাহায্য করার আবেদন জানান। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন সেনাপতি ম্যাক আর্থারের নেতৃত্বে জাতিপুঞ্জের পতাকা নিয়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে।
⦿ উত্তর কোরিয়ার সাফল্য :
জাতিপুঞ্জের সহযোগিতা সত্ত্বেও দক্ষিণ কোরিয়া পিছিয়ে পড়ে। উত্তর কোরিয়া ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ৯৫ শতাংশ ভুখন্ড দখল করে নেয়।
⦿ দক্ষিণ কোরিয়া দখলমুক্ত :
পরিস্থিতি সামাল দিতে আমেরিকা এই অঞ্চলে নতুন করে সেনা ও অস্ত্র মোতায়েন করে। ফলে জাতিপুঞ্জের বাহিনী গতি বাড়িয়ে দক্ষিণ কোরিয়া দখলমুক্ত করে।
⦿ দক্ষিণ কোরিয়ার সাফল্য :
সেনাপতি ম্যাক আর্থার উৎসাহিত হয়ে ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখা অতিক্রম করে উত্তর কোরিয়ার দখল করে চিন সীমান্তে পৌঁছে যায়।
⦿ চীনের পাল্টা আক্রমন : চীনের ভূখণ্ডে জাতিপুঞ্জের নামে মার্কিন আধিপত্য মাও-সে-তুং মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। ফলে চিনা বাহিনী জাতিপুঞ্জের বাহিনীকে বিতাড়িত করে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওল পর্যন্ত দখল করে নেয়।
যুদ্ধের সমাপ্তি :
এইভাবে দুই কোরিয়ার যুদ্ধ চিন-মার্কিন যুদ্ধে পরিণত হয়। আন্তর্জাতিক চাপে রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান সেনাপতি ম্যাক অর্থারকে বরখাস্ত করলে পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হয়। অবশেষে ১৯৫৩ সালে জুলাই মাসে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হয়। ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখা বরাবর দুই কোরিয়ার রাষ্ট্রসীমা নির্ধারিত হয়।
ফলাফল বা গুরুত্ব :
আপাত দৃষ্টিতে কোরিয়ার যুদ্ধ ছিল একটি নিরর্থক যুদ্ধ। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল ও গুরুত্ব ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
  1. ঐক্য অধরাই থাকে : দুই কোরিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যকে এই যুদ্ধ পূরণ করতে পারেনি। বরং উভয়ের মধ্যে অবিশ্বাস প্রবল হয়ে ওঠে। 
  2. বিভাজন স্থায়ীরূপ পায় : দুই কোরিয়ার বিভাজন মোটামুটি স্থায়ী রূপ পায়।
  3. অর্থনীতি বিধ্বস্ত : দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধ দুই কোরিয়ার অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছিল? ৪ মিলিয়ন মানুষ মারা যান।
  4. ঠান্ডা লড়াই প্রসার : এই যুদ্ধ ঠান্ডা লড়াইকে ইউরোপ ছাড়িয়ে এশিয়ার ভূখণ্ডে এনে ফেলে। আমেরিকার বিরুদ্ধে রাশিয়া চিনকে পাশে পেয়ে যায়।
  5. জাতিপুঞ্জের মর্যাদা নষ্ট : জাতিপুঞ্জে রাশিয়া অনুপস্থিত থাকায় আমেরিকা তাকে একতরফা ব্যবহার করে এই যুদ্ধে। ফলে জাতিপুঞ্জের নিরপেক্ষ চরিত্র ও মর্যাদা অনেকটা নষ্ট হয়।
  6.  রুশ-চিন  সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ : এই যুদ্ধের দ্বারা মার্কিন-চিন বিরোধ বৃদ্ধিপায় এবং রুশ-চিন  সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। 
  7. পরিবর্তিত মার্কিন নীতি : এতদিন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নীতি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন-বিরোধী। এই যুদ্ধের সময় তা হয়ে ওঠে সাম্যবাদ বিরোধী।
  8. সামরিক জোট গঠন : কোরিয়া যুদ্ধের পর আমেরিকা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও এশিয়া মহাদেশে বিভিন্ন সামরিক জোট গঠনে উদ্যোগ নেয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল 'ANZUS', 'SEATO' ইত্যাদি। এছাড়া ফিলিপিন্স, তাইওয়ান, আরও ৪৮ টি দেশের সঙ্গে আমেরিকা নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করে। 
ভারতের ভূমিকা :
কোরিয়া সংকট সমাধানে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। কখনও আমেরিকার মতের সঙ্গে সহমত হয়ে কখনও বিরোধিতা করে এই সংকটের রাশ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করেছিল।
  • কোরিয়া সমস্যা সমাধানে গঠিত জাতিপুঞ্জের অস্থায়ী কমিশন ( ANTCOK ) গঠিত হলে ভারত তার নেতৃত্ব দেয়। সভাপতি হিসাবে কে.পি.এস.মেনন বড়ো শক্তিগুলিকে কোরিয়া বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে পরামর্শ দেয়। 
  • জাতিপুঞ্জ উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী হিসাবে ঘোষণা করলে ভারত তা সমর্থন করে।
  • জাতিপুঞ্জ কোরিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সাহায্যের অনুরোধ জানালে ভারত তাকে সমর্থন জানায়।
  • ভারত শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা মেটাতে বললে আমেরিকা তাকে 'আগ্রাসনের প্রতি তোষণ' বলে অগ্রাহ্য করে। এরপর আমেরিকার নেতৃত্বে জাতিপুঞ্জ উত্তর কোরিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করলে ভারত এর বিরোধিতা করে বলে, 'মার্কিন জাতিপুঞ্জকে NATO -র বৃহত্তর সংস্করণে পরিণত করেছে।'
  • জাতিপুঞ্জ চিনকে আক্রমণকারী বলে ঘোষণা করলে ভারত তারও বিরোধিতা করে বলে, 'চিন আগ্রাসনের মনোভাব নিয়ে এই যুদ্ধে যোগ দে নি -- আত্মরক্ষার জন্য বাধ্য হয়েছে।'
  • যুদ্ধ বিরতির ক্ষেত্রে ও বন্দি বিনিময়ের ক্ষেত্রেও ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
আসল ভারত  কোরিয়া সংকটের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা চেয়েছিল। তাই তার আন্তরিক, সৎ, ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পরোক্ষভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে তাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
---------------//--------------

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)
OUR BOOKS fOR WBBSE & WBCHSE


বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই...

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক...

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়...

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি ব...

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও ...

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন...

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থি...

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা...

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু ...