সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জাদুঘরের বিকাশ ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

জাদুঘরের বিকাশ ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

সুদূর অতীত কালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। যুগের অগ্রগতির সাথে সাথে অতীতকালের জাদুঘর গুলির বিবর্তন ও বিকাশ ঘটতে থাকে। বিকাশের বিভিন্ন ধারায় সেই প্রাচীন জাদুঘর গুলি আজ আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত জাদুঘরের পরিণত হয়েছে।

জাদুঘরের বিকাশ

প্রাচীন জাদুঘর :

প্রাচীন জাদুঘর গুলোকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা যায়। ১) পঞ্চদশ শতকের পূর্বের জাদুঘর। ২) পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ের জাদুঘর।

১) পঞ্চদশ শতকের পূর্বের জাদুঘর :

প্রাচীনকাল থেকে পঞ্চদশ শতকের ইতালীয় নবজাগরণের শুরু পর্যন্ত সময়কালে যে সমস্ত জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলোতে সর্বসাধারণের প্রবেশ অধিকার ছিলনা। এই সময়কার উল্লেখযোগ্য জাদুঘর গুলির মধ্যে মেসোপটেমিয়ার এননিগালডি - নান্না-র জাদুঘর বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। এটা পৃথিবীর প্রাচীনতম জাদুঘর।

এছাড়া এথেন্সের প্লেটোর জাদুঘর, এবং আলেকজান্দ্রিয়ার জাদুঘরও এই সময়ের উল্লেখযোগ্য দুটি জাদুঘর।

২) পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ের জাদুঘর :

এই সময় থেকে জাদুঘর গুলিতে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকারের সুযোগ দেয়া হয়। এই পর্বের উল্লেখযোগ্য জাদুঘর গুলি হল : ইতালির রোম শহরে অবস্থিত ক্যাপিটো লাইন মিউজিয়াম, ভার্টিকান মিউজিয়াম, ইংল্যান্ডে অবস্থিত রয়েল আরমারিস মিউজিয়াম (ইংল্যান্ডের প্রথম জাদুঘর), অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলিয়াস আ্যাসমোলীয়ান মিউজিয়াম

তবে মনে রাখতে হবে, এই জাদুঘর গুলি জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হলেও তাতে প্রবেশাধিকারের প্রক্রিয়াটি ছিল খুবই জটিল। মিউজিয়ামে প্রবেশের জন্য সাধারণ মানুষকে (নিম্নবিত্ত শ্রেণির) কমপক্ষে দু সপ্তাহ আগে লিখিত আবেদন করতে হতো। এই আবেদন অধিকাংশ সময় গ্রাহ্য হতো না।

আধুনিক জাদুঘর :

সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকারের এই জটিল প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি দিতে চালু হয় আধুনিক জাদুঘর। এই জাদুঘর গুলিকে দুটি পর্বে ভাগে ভাগ করা যায়।

প্রথম পর্বের আধুনিক জাদুঘর :

এই পর্বের উল্লেখযোগ্য জাদুঘর গুলি হল
১) লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম (১৭৫৩)। ১৭৫৯ সালে এই জাদুঘরটি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে খুলে দেয়া হয়।
২) ফ্লোরেন্সের উফ্ফিজি গ্যালারি। এটি দর্শকদের দীর্ঘকাল অনুরোধের পর ১৭৬৫ সালে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে খুলে দেয়া হয়।
৩) ফ্রান্সের লুভর মিউজিয়াম। ১৭৯৩ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় এই জাদুঘরটি জনগণের জন্য খুলে দেয়া হয়।

দ্বিতীয় পর্বের আধুনিক জাদুঘর :

ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগ থেকে বিংশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে নতুন নতুন বহু জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এই কারণে এই সময়কালকে জাদুঘরের যুগ (The Museum Age) বলে অভিহিত করা হয়।
এই পর্বের উল্লেখযোগ্য জাদুঘর গুলি হল :
১) আমেরিকার দ্যা আর্ট ইনস্টিটিউট অফ শিকাগো (১৮৭৯), 
২) কর্পোরান গ্যালারি অফ আর্ট (ওয়াশিংটন, ১৯০১)
৩) ডালাস মিউজিয়াম অফ আর্ট (১৯০৩)
৪) কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল (১৯২১)
৫) নিউইয়র্কের the মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট (১৯২৯)

মূলত ঐতিহাসিক বস্তু সামগ্রী প্রদর্শনের পাশাপাশি সেগুলি নিয়ে গবেষণা করায় ছিল এই পর্বের মিউজিয়াম গুলির গড়ে তোলার অন্যতম উদ্দেশ্য। তবে প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও শিল্পের বিকাশ বিষয়ে আলোকপাত করা।

জাদুঘরের প্রকারভেদ

জাদুঘরের সংরক্ষিত বিভিন্ন বস্তুর ধরণের ভিত্তিতে জাদুঘরকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।

১) বিশ্বকোষ জাদুঘর :

বিভিন্ন দেশের সবৃহৎ, বিশেষ করে জাতীয় জাদুঘরগুলোকে বিশ্বকোষ জাদুঘর বলে। এই জাদুঘরগুলিতে বিপুলসংখ্যক দর্শকের সমাগম হয় এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন বিষয়ের বিপুল ও অসাধারণ সংগ্রহ থাকে। যেমন ব্রিটিশ মিউজিয়াম।

২) প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর :

এই ধরনের জাদুঘর গুলোতে কেবলমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ সংগ্রহ সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়। এই ধরনের জাদুঘর গুলি কখনো খোলা জায়গায় (উদাহরণ, এগরা অফ এথেন্স) আবার কখনো অট্টালিকার অভ্যন্তরে ( উদাহরণ, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম) অবস্থিত হয়।

৩) শিল্প জাদুঘর :

শিল্প জাদুঘরে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসমলিয়ান জাদুঘর হল পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিল্প জাদুঘর।

৪) ঐতিহাসিক গৃহ যাদুঘর :

কোন প্রাচীন ঐতিহাসিক গৃহ কে কেন্দ্র করে যে জাদুঘর গড়ে ওঠে তাকে ঐতিহাসিক গৃহ যাদুঘর বলে। মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগে অবস্থিত হাজার দুয়ারী একটি ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘরের উদাহরণ।

৫) জীবন্ত জাদুঘর :

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাচীন যুগের মানুষের জীবনযাত্রা কখনো নাটকের মাধ্যমে বা অন্য কোন কৃত্রিম উপায়ে দর্শকের সামনে তুলে ধরা হয় যে মিউজিয়াম গুলোতে সেগুলোকে বলে জীবন্ত জাদুঘর। সুইডেনের ‘স্ক্যানসেন মিউজিয়াম’ ও বৃটেনের ‘কলোনিয়াল উইলিয়ামসবার্গ’ জীবন্ত জাদুঘরের উদাহরণ

৬) সমুদ্র জাদুঘর :

সমুদ্র জাদুঘর হল প্রাচীনকালের সমুদ্র জীবন সংক্রান্ত সংগ্রহশালা। প্রাচীনকালে সমুদ্রের সঙ্গে কোন মনুষ্য সমাজের সম্পর্ক কেমন ছিল তা এই জাদুঘরে তুলে ধরা হয়। ভার্জিনিয়ার মেরিনারস মিউজিয়াম ও সান ফ্রান্সিসকো র মেরিটাইম মিউজিয়াম এই ধরনের জাদুঘরের উদাহরণ ।

৭) সামরিক জাদুঘর :

এই ধরনের জাদুঘরে কোন দেশের সামরিক বাহিনী ও যুদ্ধ সংক্রান্ত নানা নিদর্শন সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়। দ্য ন্যাশনাল ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ওয়ার মিউজিয়াম এবং কানাডিয়ান ওয়্যার মিউজিয়াম হল সামরিক জাদুঘরের উদাহরণ।

৮) প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর :

এই সমস্ত জাদুঘরে পৃথিবীর প্রাকৃতিক নিদর্শন গুলি সংগ্রহ সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। এইসব নিদর্শন এর মাধ্যমে জাদুঘর গুলি বিবর্তন জীব-বৈচিত্র প্রভৃতি বিষয়ে দর্শকদের শিক্ষাদান করে। লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম এবং ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি হল প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

৯) বিজ্ঞান জাদুঘর :

বিজ্ঞান জাদুঘর হল বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন, বিজ্ঞানের অগ্রগতি ইত্যাদি বিষয়ে নিদর্শন সংগ্রহ সংরক্ষণ ও প্রদর্শনকারী মিউজিয়াম। শিকাগো মিউজিয়াম অফ সায়েন্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি হল একটি বিজ্ঞান জাদুঘর।

১০) চলমান জাদুঘর :

যখন কোন চলমান যানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ঐতিহাসিক বা দুর্লভ নিদর্শনসমূহ দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করা হয় তখন তাকে চলমান জাদুঘর বলে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের সার্ধশতবর্ষে তৈরি করা ‘সংস্কৃতি এক্সপ্রেস’ হল একটি চলমান জাদুঘরের উদাহরণ।

১১) নেট জাদুঘর : 

কোন কোন সংস্থা তাদের বিভিন্ন নিদর্শন গুলোর ছবি তুলে সেগুলোকে ইন্টারনেটে প্রকাশ করে জনসাধারণকে দেখানোর জন্য। এই ধরনের ওয়েবসাইট গুলোকে নেট জাদুঘর নামে অভিহিত করা হয়।

১২) জৈবপার ও বৃক্ষ বাগান :

জৈবপার্ক অর্থাৎ যেখানে বিভিন্ন ধরনের পশু পাখি সহ অসংখ্য বৃক্ষের সংগ্রহ সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয় সেগুলোকে জৈবপার্ক ও বৃক্ষ বাগান নামে অভিহিত করা হয়। লন্ডন জু, শিকাগো বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং কলকাতার চিড়িয়াখানা এই ধরনের জাদুঘরের উদাহরণ।

এছাড়া ক্ষণস্থায়ী জাদুঘর বিশেষ জাদুঘর স্থানীয় জাদুঘর ব্যক্তিগত জাদুঘর ইত্যাদি নামে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে।
--------xx-------

মন্তব্যসমূহ



বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই বন্দোবস্তই ‘ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ’ -এ পরিণত হবে

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়ায়

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢা

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যার মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি। (১) 

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিবাদ করলে কুয়োমি

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে ১৮৯৯ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিন সম্পর্কে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা মুক্তদ্বার নীতি নামে পরিচিত। এই নীতিতে বলা হয়, বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা অধিকৃত চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার সমান বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে হবে।

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু বর্ণহিন্দুদের এই বর্নবিদ্বেষী প্রথার বিরুদ্ধে এবং মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের হাঁটার দাবিতে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা ভাইকম সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। আন্দোলনের ব্যাপকতায় মুগধ হয়ে গান্ধিজি একে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন জয়যুক্ত হয়।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা