১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ
![]() |
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ |
Political causes of the Great Revolt of 1857
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ বিশ্লেষণ করো।
১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি স্থাপিত হয়। ১৭৭২ সালে তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এবং ঠিক একশ বছর পর ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ সরকার গুরুতর সংকটের সম্মুখীন হয়। এই সংকটের নানামুখী রূপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল রাজনৈতিক কারণ।
👉 আরও জানো : পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
মহাবিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ :
রাজনৈতিক কারণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল ব্রিটিশ সরকারের আগ্রাসন নীতি। এই নীতি তারা বিভিন্ন উপায়ে কার্যকর করেন।
১) স্বত্ববিলোপ নীতির প্রভাব :
লর্ড ডালহৌসি প্রবর্তিত স্বত্ববিলোপ নীতি দেশীয় রাজাদের দত্তপুত্রের উত্তরাধিকার অস্বীকার করে। এই নীতি প্রয়োগ করে ব্রিটিশ সরকার সাতারা, সম্বলপুর, ঝাঁসি, উদয়পুর প্রভৃতি দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশ সরকারের কুক্ষিগত করে। নানা সাহেব বাৎসরিক ভাতা বন্ধ হয় এবং পেশোয়াপদ বিলুপ্ত করা হয়।
👉 আরও জানে নাও : স্বত্ববিলোপ নীতি ও তার শর্ত কি ছিল?
২) অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি :
লড ডালহৌসি ১৭৯৮ সালে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি নামে একটি সাম্রাজ্যবাদী নীতি প্রবর্তন করেন। এই নীতির ফাঁদে পড়ে হায়দ্রাবাদ সুরাট তাঞ্জোর কর্ণাটক প্রভৃতি রাজ্য তাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়।
৩) কুশাসনের অজুহাত :
কুশাসনের অজুহাতে ব্রিটিশ সরকার একাধিক দেশিও রাজ্য দখল করে নেয়। এদের মধ্যে অযোধ্যা ও নাগপুর উল্লেখযোগ্য। নবাব ওয়াজেদ আলী শাহকে অযোধ্যা থেকে উৎখাত করেন, বিহারের জমিদার কুঁয়র সিং-এর জমিদারী বাজেয়াপ্ত করে করে, দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে লালকেল্লা থেকে সরিয়ে দেয় এবং তাঁর উত্তরসূরিকে বাদশাহ উপাধি গ্রহণ নিষিদ্ধ করে।
৪) ব্রিটিশদের নির্লজ্জ লুণ্ঠন :
দেশীয় রাজ্যগুলি বিভিন্ন অজুহাতে শুধু দখল নয়, নির্লজ্জভাবে রাজপ্রাসাদ সহ বিভিন্ন জায়গায় লুণ্ঠন চালায়। ঐতিহাসিক জন কে লিখেছেন, “নাগপুর রাজ্য দখল অপেক্ষাও এই ধরনের নির্লজ্জ লুন্ঠন ও মালপত্র বিক্রির ঘটনা সন্নিহিত প্রদেশগুলিতে অধিকতর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।”
৫) ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্যগুলির ক্ষোভ :
ব্রিটিশের আশ্রিত রাজ্যগুলির সেনাদের ভাতা কমিয়ে দিলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। দেশীয় রাজ্যের রাজ পরিবারের আশ্রিত ব্যক্তিগত, জমিদার, তালুকদার ও সেনাদল কর্মচ্যুত ও জীবিকা হীন হয়ে পড়ে। ফলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ জমে ওঠে।
৬) উপজাতিগোষ্ঠীগুলোর বিক্ষোভ :
১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করে। ফলে কৃষক জমির ওপর অধিকার হারায় এবং জমিদারের ভাড়াটে মজুরে পরিণত হয়। ফলে কোলভিল সাঁওতাল মুন্ডা সহ সাধারণ কৃষক ব্রিটিশ শাসক তথা জমিদারের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
👉 আরও জানো : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল
৭) ব্রিটিশ কর্মচারীদের অত্যাচার :
ব্রিটিশ উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা ভারতীয় কর্মচারীদের প্রতি অপমানজনক আচরণ করতো। কখনো কখনো তা শারীরিক নির্যাতনে পর্যবসিত হতো।
মন্তব্য :
উপরোক্ত কারণে দেশীয় শাসকবর্গ যেমন, তেমনি তাদের অধীনে থাকা বিভিন্ন কর্মচারী এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সাধারণ কৃষক ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নির্যাতিত ও শোষিত মানুষজন ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এই ক্ষোভই মহাবিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ। অধ্যাপক এ আর দেশাই এ কারণেই বলেছেন, “মহাবিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসনে নির্যাতিত ভারতবাসীর সম্মিলিত অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ।”
------------xx-----------
প্রশ্নটি অন্য যেভাবে আসতে পারে :
- ব্রিটিশের সাম্রাজ্যবাদী নীতি কিভাবে মহাবিদ্রোহকে প্রভাবিত করেছিল?
- স্বত্ববিলোপ নীতি, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এবং অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মহাবিদ্রোহের জন্য কতটা দায়ী?
- ভারতীয় রাজনীতিতে ব্রিটিশের আগ্রাসী হস্তক্ষেপ মহাবিদ্রোহকে অসম্ভাবী করে তুলেছিল। — তুমি কি একমত? যুক্তি দেখাও।
এই অধ্যায়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন :
- মহাবিদ্রোহের সামাজিক কারণ কী ছিল?
- মহাবিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণ সংক্ষেপে লেখো।
- মহাবিদ্রোহের পেছনে ধর্মীয় কারণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
- মহাবিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল? এই কারণ কিভাবে মহাবিদ্রোহকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিল?
- মহাবিদ্রোহের সামরিক কারণ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন