স্বত্ববিলোপ নীতি কী ও তার শর্তগুলো কী ছিল?
![]() |
স্বত্ববিলোপ নীতি ও তার শর্ত |
Expiration Policy and its Conditions
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য যে সমস্ত অনৈতিক সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী নীতি অবলম্বন করেছিল, তাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নীতি হল ‘স্বত্ববিলোপ নীতি’। ১৮৩৪ সালে লর্ড বেন্টিং-এর আমলে কোম্পানির ‘ডাইরেক্টর সভা’ (লন্ডনের বোর্ড অফ ডাইরেক্টর) দত্তপুত্র গ্রহণের অধিকার নিয়ন্ত্রণের কথা ঘোষণা করে এবং এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু তখন তা কার্যকর করা হয়নি।
মনে রাখতে হবে, ১) ডালহৌসিই (১৮৪৮-১৮৫৬) প্রথম কঠোরভাবে এই নীতি কার্যকর করে। ২) কিন্তু তিনি কখনই এই নীতির প্রবর্তক ছিলেন না।
স্বত্ববিলোপ নীতির মূল কথা :
এই নীতির মূল কথা হল, ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির রাজাদের কোন পুত্র সন্তান না থাকলে সেই রাজ্যগুলি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে।
স্বত্ববিলোপ নীতির শর্ত ও তার ব্যাখ্যা :
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই নীতি কার্যকর করার জন্য লড ডালহৌসি দেশীয় রাজ্যগুলিকে তিনভাগে বিভক্ত করেন।
- কোম্পানির দ্বারা সৃষ্ট দেশীয় রাজ্য,
- কোম্পানির আশ্রিত বা অধীনস্ত করদ রাজ্য এবং
- স্বাধীন দেশীয় রাজ্য।
১) কোম্পানির দ্বারা সৃষ্ট রাজ্যের ক্ষেত্রে বলা হয় :
- ক) কোম্পানির সৃষ্টি করা কোন রাজ্যের রাজার পুত্র সন্তান না থাকলে, সেই রাজ্য কোম্পানি সরাসরি দখল করবে।
- খ) এই ধরনের রাজ্যের রাজা কোন উত্তরাধিকার গ্রহণ করতে পারবে না।
২) কোম্পানির আশ্রিত করদ রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে বলা হয় :
- ক) কোম্পানির অনুমতি নিয়ে দত্ত গ্রহণ করতে পারবে।
- খ) তবে অনুমতি না মিললে, রাজ্যটির স্বত্ব কোম্পানির উপর বর্তাবে। অর্থাৎ কোম্পানি এই রাজ্য অতিগ্রহণ করবে।
৩) দেশীয় স্বাধীন রাজ্যগুলির সম্পর্কে বলা হয়,
- স্বাধীন দেশীয় রাজাদের ক্ষেত্রে কোম্পানি কোন হস্তক্ষেপ করবে না।
ডালহৌসির আগে স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ :
পূর্বেই বলা হয়েছে, লড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতির উদ্ভাবক ছিলেন না। এমনকি প্রথম প্রয়োগকারী ও নন। এই নীতি ডালহৌসির পূর্বে মস্তভি (১৮৩৯), কোলাবা ও হলায়ুন (১৮৪০), এবং সুরাটে (১৮৪২) কার্যকর হয়।
স্বত্ববিলোপ নীতির প্রভাব :
স্বত্ববিলোপ নীতির প্রভাব দুভাবে লক্ষ্য করা যায়।
প্রথমত, একদিকে এই নীতি প্রয়োগের ফলে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পরিধি বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয়ত, অন্যদিকে এই নীতি ডালহৌসি কঠোরভাবে প্রয়োগ করার ফলে ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করে।
তৃতীয়ত, দেশীয় রাজ্যগুলির এই অসন্তোষের পরিণতি হিসেবে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকদের বিশ্লেষণে ধরা পড়ে।
উপসংহার :
সুতরাং এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, স্বত্ববিলোপ নীতি হল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি চরম সাম্রাজ্যবাদী নীতি যা ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। তবে এই নীতি অচিরেই ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল যা মহাবিদ্রোহ সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
--------xx-------
প্রশ্নটি অন্য যেভাবে আসতে পারে :
- স্বত্ববিলোপ নীতি কী? এই নীতির শর্তগুলো সংক্ষেপে লেখো।
- স্বত্ববিলোপ নীতি বলতে কী বোঝো? এই নীতির মূল কথা কী?
- স্বত্ববিলোপ নীতি কে কী উদ্দেশ্যে লাগু করেন? এর ফলাফল কী হয়েছিল?
- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একটি সাম্রাজ্যবাদী নীতির নাম করো। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসারে এর ভূমিকা কী ছিল?
- স্বত্ববিলোপ নীতির শর্ত ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
এই অধ্যায়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন :
- মহাবিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ কী ছিল?
- মহাবিদ্রোহের সামাজিক কারণ কী ছিল?
- মহাবিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণ সংক্ষেপে লেখো।
- মহাবিদ্রোহের পেছনে ধর্মীয় কারণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
- মহাবিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল? এই কারণ কিভাবে মহাবিদ্রোহকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিল?
- মহাবিদ্রোহের সামরিক কারণ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন