১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন?
![]() |
| ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন |
১৮৫৭ সাল। ভারতের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। বিনায়ক দামোদর সাভারকর-এর মতে, ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধ’ শুরু হয় এই বছর। ইংরেজ ঐতিহাসিকরা যাকে বলেন ‘সিপাহী বিদ্রোহ’, ভারতের জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকদের অনেকে তাকেই বলেন ‘প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম’। অন্যদিকে, যাঁরা বিতর্ক এড়াতে চান, তাঁদের কথায় এটা ছিল ‘১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ’।
মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ :
যাই-ই হোক, বহু শহীদের রক্তে রাঙানো এই মহাবিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতার পিছনে ঐতিহাসিকগণ যে সমস্ত কারণকে চিহ্নিত করেছেন, সেগুলো হল—
১) পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাব :
বিদ্রোহীরা জীবন-মরন পণ করে লড়াই করলেও এই লড়াইয়ে তারা পরাজিত হন। তার কারণ, লড়াইয়ের পরিকল্পনা ও লড়াইকারীদের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয়ের অভাব ছিল। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পারস্পরিক সমন্বয়ের এই অভাব, তাদের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।
২) সর্বভারতীয় সমর্থনের অভাব :
প্রায় সর্বশ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ ও সমর্থন থাকলেও সমস্ত মানুষের সমর্থন বিদ্রোহীরা পাননি। বিশেষ করে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি, ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষক জমিদার শ্রেণি এবং বণিক গোষ্ঠীর মানুষ এই বিদ্রোহকে নিজ নিজ স্বার্থে সমর্থন করেননি।
৩) যোগ্য নেতৃত্বের অভাব :
সাহস এবং চেষ্টার অভাব না থাকলেও সামরিক কৌশল প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে দক্ষতা লাগে, তা লক্ষ্মীবাঈ, নানা সাহেব, তাঁতিয়া টোপি সহ অনেক নেতার মধ্যেই তা সঠিক মাত্রায় ছিল না। এক্ষেত্রে লরেন্স আউট্রাম, ক্যাম্পবেল, হাভেলক প্রমূখ ইংরেজ সেনাপতি অনেকটাই এগিয়েছিলেন।
৪) আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব :
উভয় পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফারাক তৈরি করেছিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার। ইংরেজদের কাছে এই ধরনের অস্ত্রশস্ত্র ছিল পর্যাপ্ত, অন্যদিকে ভারতীয় শাসকদের কাছে তা ‘প্রায় ছিলো না বললেই চলে’।
৫) উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব :
ইংরেজদের কাছে ছিল ডাক ও তার বিভাগের মতো উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ছিল জলপথ ও রেলপথের সুবিধা। এই সুযোগ না থাকায় বিদ্রোহীরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে।
৭) আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা :
এই বিদ্রোহ মূলত পূর্ব পাঞ্জাব থেকে পশ্চিম বিহার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। অন্যদিকে, দক্ষিণ ভারত, পাঞ্জাব, রাজপুতানা, বাংলাদেশ, সিন্ধু প্রদেশ ইত্যাদি অঞ্চলে এর কোন প্রভাবই পড়েনি বললেই চলে।
৮) চীনা ব্রিটিশ বাহিনীর যোগদান :
এছাড়া, চীনে ‘তাইপিং বিদ্রোহ’ দমনে সফল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ এই সময় ভারতে প্রবেশ করে। এদের বিদ্রোহ দমনের দক্ষতা ইংরেজ কোম্পানির সাফল্যকে অনেকটাই নিশ্চিত করে তোলে।
৯) কঠোর দমন নীতি :
সর্বোপরি, কাল মার্কস এবং এঙ্গেলস তাঁদের গবেষণায় দেখিয়েছেন, কী ভয়ংকর নিষ্ঠুরতার নীতি গ্রহণ করেছিল ইংরেজ সেনারা। তাঁদের মতে, বিদ্রোহ দমনে এমন পাশবিক নীতি ইউরোপ বা আমেরিকার কোন বাহিনী কখনো প্রয়োগ করেনি।
মূল্যায়ন :
এই সমস্ত কারণে, প্রথমদিকে সাফল্য পাওয়া এই বিদ্রোহ একসময় গতি হারায় এবং এবং দিশাহীন হয়ে পড়ে। ফলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ব্যর্থতা সত্ত্বেও, একথা অস্বীকার করা যায় না যে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এর গভীর প্রভাব পড়েছিল। বিশেষ করে, মহারানীর ঘোষণাপত্রের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় ভারতীয়দের মধ্যে যে হতাশা এবং সেই সূত্রে ‘জাতীয় চেতনার’ জন্ম হয়, তাঁর পটভূমি তৈরি করে দিয়েছিল এই মহাবিদ্রোহ।
----------xx-----------
প্রশ্নটি যেভাবে ঘুরিয়ে আসতে পারে :
- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার কারণ কী ছিল?
- কোন কোন কারণে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল?
- মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার পিছনে কোন্ কোন্ কারণ ছিল?
- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ সফল হয়নি কেন?
- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে ইংরেজরা জয়লাভ করেছিল কেন?
- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে ইংরেজদের সাফল্যের পিছনে কোন কোন কারন লক্ষ্য করা যায়?

.png)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন