সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি

 ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা করো। (মান - ৪)

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি,The nature of the Great Revolt of 1857
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামতগুলো হল — 

১) সিপাহী বিদ্রোহ :

অধিকাংশ ইংরেজ ঐতিহাসিক এই বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জন লরেন্স, চার্লস রেকস, টি আর হোমস্ প্রমূখ। তাঁদের যুক্তি হলো, এই বিদ্রোহের সূচনা, পরিচালনা ও প্রসারে সিপাহীরাই নেতৃত্ব দিয়েছে। এবং বিদ্রোহ শেষে তারাই সবচেয়ে বেশি শাস্তি ভোগ করেছেন।

ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের অভিমত :

তদানীন্তন ভারত সচিব আর্ল স্ট্যানলি তাঁর প্রতিবেদনে এই বিদ্রোহকে ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
  1. ঐতিহাসিক চার্লস রেকস তাঁর গ্রন্থে (Notes on the revolt in the North Western province of India) এই বিদ্রোহকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী লোভী সিপাহীদের বেআইনি অভ্যুত্থান বলে মন্তব্য করেছেন।
  2. ঐতিহাসিক টি আর হোমসের মতে, সিপাহীদের এই বিদ্রোহ ছিল আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে মধ্যযুগীয় বর্বরতার সংঘাত। 

ভারতীয় ঐতিহাসিকদের অভিমত :

একইসঙ্গে সমকালীন বিশিষ্ট ভারতীয় বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গও এই বিদ্রোহকে সিপাহীদের সামরিক বিদ্রোহ হিসেবেই নিন্দা করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—অক্ষয় কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দাদাভাই নওরোজি, সৈয়দ আহমেদ খান, রাজনারায়ণ বসু প্রমূখ।

২) জাতীয় বিদ্রোহ :

অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকরা ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের যুক্তি হল—

জাতীয় বিদ্রোহ বলার কারণ :

  1. এই বিদ্রোহে সিপাহীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও সব দেশীয় সিপাহী এই বিদ্রোহে যোগদান করেনি। অধিকাংশ সিপাহী বিদ্রোহ দমনে অংশগ্রহণ করেছে। 
  2. অন্যদিকে দেশীয় রাজন্যবর্গ, সাধারণ কৃষক, কারিগর, দিনমজুর এই বিদ্রোহে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে।
  3. সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ দিল্লি ঘোষণাআজমগড় ঘোষণার মাধ্যমে হিন্দু মুসলিম ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ থেকে ইংরেজদের বিতরণের আহ্বান জানান। 
  4. বিরজিস কাদির তাঁর ইস্তেহারে ইংরেজমুক্ত ভারত গঠনের ডাক দেয়া হয়।

ঐতিহাসিকদের মতামত : পক্ষে —

  1. অধ্যাপক সুপ্রকাশ রায় দেখিয়েছেন, এই বিদ্রোহে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের চেয়েও বেশি কৃষক অংশগ্রহণ করেছিল।
  2. অধ্যাপক রঞ্জিত গুহ এই বিদ্রোহকে নিম্নবর্গের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ বলে উল্লেখ করেছেন। 
  3. ডক্টর শশীভূষণ চৌধুরী মতে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করে।

ঐতিহাসিকদের মতামত : বিপক্ষে —

অন্যদিকে ঐতিহাসিক টমাস মেটক্যাফ, রমেশচন্দ্র মজুমদার, ডক্টর সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমূখের যুক্তি হল :
  • প্রথমত : এই বিদ্রোহ কোনো কোনো সময় সিপাহী বিদ্রোহকে ছাপিয়ে গেলেও তা জাতীয় বিদ্রোহের পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
  • দ্বিতীয়ত : কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভাব, ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা, সীমিত সংখ্যক জমিদার ও দেশীয় রাজন্যবর্গের অংশগ্রহণ, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিরোধিতা এই বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহে পরিণত হতে দেয়নি।

৩) প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম :

বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনায়ক দামোদর সাভারকার তাঁর ‘The Indian war of independence’ ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলার কারণ :

সাভারকর তাঁর গ্রন্থে দেখিয়েছেন—
  1. ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে সামনে রেখে হিন্দু মুসলিম ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এই লড়াই করেছিলেন।
  2. এই বিদ্রোহ আকস্মিক কোনো ঘটনা ছিল না। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, গোপন বৈঠক, এবং নানা অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এগুলো হয়েছিল। 
  3. প্রায় সমগ্র ভারতব্যাপী ব্যাপক জনসাধারণ বিদেশিদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

ঐতিহাসিকদের মতামত : পক্ষে —

  1. অধ্যাপক সুশোভন সরকার ইতালির কারবোনারি বিদ্রোহ  নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে স্পেনীয় জুন্টা আন্দোলন এর সঙ্গে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের তুলনা করে একে ভারতের মুক্ত যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। 
  2. অধ্যাপক ধীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় হিন্দু মুসলমানের মিলিত এই অভ্যুত্থানকে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রতিফলন বলেছেন। 
  3. ঐতিহাসিক জাস্টিন ম্যাকার্থি তাঁর ‘A History of Our Own Times’ গ্রন্থে লিখেছেন, একসময় সিপাহী বিদ্রোহ জাতীয় ও ধর্ম যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিল।
  4. দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ এবং বিরিজিস কাদিরের ঘোষণা প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত দেয়।

ঐতিহাসিকদের মতামত : পক্ষে —

১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে যাঁরা ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বলতে অস্বীকার করেছেন, মূলত তাঁরাই এবং একই যুক্তিতে এই বিদ্রোহকে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ’ বলতে রাজি নন। রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর ‘History of the Freedom Movement in India’ (Vol.1) গ্রন্থে বলেছেন, ১৮৫৭ সালে সংঘটিত তথাকথিত প্রথম জাতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধ—না প্রথম, না জাতীয়, এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামও নয়।

৪) গণবিদ্রোহ :

ঐতিহাসিকদের মতামত : পক্ষে—

উত্তর ও মধ্য ভারতে, বিশেষ করে লখনৌ, অযোধ্যা, মুজাফফরনগর, সাহারানপুর প্রভৃতি এলাকাতে জনসাধারণই প্রথম বিদ্রোহের ধ্বজা তুলে ধরেন এবং সিপাহীদের অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। 
  1. টি আর হোমসের হিসাব অনুযায়ী এই সময় শুধুমাত্র অযোধ্যায় ১.৫ লক্ষ বিদ্রোহী মারা যায়, যার মধ্যে সিপাহির সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৫ হাজার
  2. জে বি নর্টন, জি বি ম্যালেসন, জন উইলিয়াম কে, গৌতম ভদ্র প্রমূখ ঐতিহাসিকদের মতে, এই বিদ্রোহকে সফল করতে যেভাবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে ভারতের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সামিল হয়েছিল তা একটি গণমুখী আন্দোলনের এই প্রতিচ্ছবি।
অর্থাৎ অভূতপূর্ব জনসমর্থন লাভ এই বিদ্রোহকে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল।

ঐতিহাসিকদের মতামত : বিপক্ষে—

কিন্তু, কিশোরী চাঁদ মিত্র, দুর্গা দাস বন্দ্যোপাধ্যায়, স্যার সৈয়দ আহমেদ খান, রাজনারায়ণ বসু প্রমুখের মতে, এই বিদ্রোহে গণবিদ্রোহের আবশ্যিক উপাদান, যেমন আপামর জনগণের অংশগ্রহণ, নেতাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যপরিকল্পনা ইত্যাদির একান্ত অভাব ছিল।

৫) সামন্ত বিদ্রোহ :

ঐতিহাসিকদের মতামত : পক্ষে—

বিদ্রোহের উদ্দেশ্য, ঘটনা প্রবাহ, নেতৃত্ব, অংশগ্রহণ ও পরিণতির দিক থেকে বিচার করে অনেক ইতিহাসিক ও গবেষক এই বিদ্রোহকে ‘সামন্ততান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া’ বলে বর্ণনা করেছেন।
  1. ডঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদার, সুরেন্দ্রনাথ সেন, রজনীপাম দত্ত, পন্ডিত জহরলাল নেহেরু এই মতের সমর্থক। 
  2. বিদ্রোহের নেতৃত্ব সামন্ত শাসকদের হাতে থাকায় ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার এই বিদ্রোহকে ‘ক্ষয়িষ্ণু অভিজাত ও মৃতপ্রায় সামন্তদের মৃত্যুকালীন আর্তনাদ’ বলে অভিহিত করেছেন।

ঐতিহাসিকদের মতামত : বিপক্ষে—

কিন্তু, অধ্যাপক সুশোভন সরকার এই বক্তব্য অস্বীকার করেন। তার যুক্তি হলো, 
  1. অযোধ্যার বাইরে অধিকাংশ জমিদারি ইংরেজদের পক্ষে ছিলেন।
  2. অধিকাংশ সামন্ত রাজা এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেনি।
  3. তাই এই বিদ্রোহকে কোনভাবেই সামন্ত বিদ্রোহ বলা যুক্তিযুক্ত নয়।

উপসংহার :

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ দেশীয় সিপাহীরা শুরু করলেও অচিরেই তার চরিত্র বা প্রকৃতি পাল্টে যায়। দ্রুত এই বিদ্রোহ ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বা কারো কারো মতে, ‘গণবিদ্রোহ’ রূপ লাভ করে। একটা পর্যায়ে এসে ‘ইংরেজ-মুক্ত ভারত গঠনের ঘোষণা’ আসে, যা ‘প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা’ বলে অভিহিত করাই যায়। প্রসঙ্গত, ডক্টর সুশোভন সরকারের উক্তি উদ্ধৃত করে বলা যায়, “যারা ‘মারাঠা জাতীয়তাবাদ’, ‘রাজপুত জাতীয়তাবাদ’ প্রভৃতির কথা বলে গর্ব অনুভব করেন, তারা ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বলতে দ্বিধাগ্রস্ত কেন, তা প্রকৃতই বুদ্ধির অদম্য।

১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এই টানাপড়েনকে সামনে রেখে অধিকাংশ ঐতিহাসিক এই বিদ্রোহকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের ‘মহাবিদ্রোহ’ নামে অভিহিত করার চেষ্টা করেছেন।
------------xx-----------

এই প্রশ্নটিই অন্য যেভাবে আসতে পারে :

  1. ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
  2. ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে কি জাতীয় বিদ্রোহ বলা যায়?
  3. ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ কতটা গণ বিদ্রোহ ছিল বলে মনে হয়। 
  4. ১৮৫৭ সালের ব্রিটিশ বিরোধী মহাবিদ্রোহকে ‘প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বলা কতটা যুক্তিযুক্ত?

মহাবিদ্রোহ সম্পর্কে আরও কিছু প্রশ্ন :

  1. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ’ বলা যায় কি?
  2. ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন? 
  3. ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের ফলাফল আলোচনা করো।

এই অধ্যায়ের অন্যান্য প্রশ্ন দেখো এখানে

মন্তব্যসমূহ

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)
OUR BOOKS fOR WBBSE & WBCHSE


বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই...

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক...

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়...

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি ব...

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও ...

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন...

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থি...

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা...

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু ...