অথবা,
বার্লিন অবরোধ কী? এই অবরোধের (সংকটের) কারণ বা পটভূমি বর্ননা কর। বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে বিশেষ করে ঠান্ডা যুদ্ধের ওপর বার্লিন সংকটের প্রভাব আলোচনা কর।
বার্লিন সংকট। মিত্রশক্তির জার্মান ভাগাভাগি। |
বার্লিন সংকট :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪৫ সালে মিত্রপক্ষের কাছে জার্মানি আত্মসমর্পন করে। ইয়াল্টা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে জার্মান ভুখন্ড মিত্রশক্তির (আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়ার) মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। জার্মান রাজধানী বার্লিন শহরও তারা ভাগাভাগি করে নেয়। বার্লিন শহরের এই ভাগাভাগি নিয়ে দেখা দেয় এক গভীর সমস্যা। কেননা, বার্লিন শহর ছিল রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চলের মাঝখানে অবস্থিত। ফলে অচিরেই পশ্চিমি দেশগুলির বার্লিন শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা নিয়ে জটিলতা বা বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধই বার্লিন সংকট নামে পরিচিত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪৫ সালে মিত্রপক্ষের কাছে জার্মানি আত্মসমর্পন করে। ইয়াল্টা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে জার্মান ভুখন্ড মিত্রশক্তির (আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়ার) মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। জার্মান রাজধানী বার্লিন শহরও তারা ভাগাভাগি করে নেয়। বার্লিন শহরের এই ভাগাভাগি নিয়ে দেখা দেয় এক গভীর সমস্যা। কেননা, বার্লিন শহর ছিল রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চলের মাঝখানে অবস্থিত। ফলে অচিরেই পশ্চিমি দেশগুলির বার্লিন শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা নিয়ে জটিলতা বা বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধই বার্লিন সংকট নামে পরিচিত।
বার্লিন অবরোধ :
বার্লিন সংকটের সূত্র ধরেই রাশিয়া পশ্চিমি শক্তিগুলিকে বার্লিন ত্যাগ করতে বাধ্য করার উদ্যোগ নেয়। এই উদ্দেশ্যে তারা ১৯৪৮ সালের ২৪ জুলাই বার্লিনে প্রবেশের সড়কপথগুলি অবরোধ শুরু করে। ফলে বার্লিনের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ অনাহার ও চিকিৎসা হীনতার মুখোমুখি হয়। এই ঘটনা বার্লিন অবরোধ নামে পরিচিত।
বার্লিন সংকট (অবরোধ )-এর কারণ (পটভূমি) :
বার্লিন সংকটের মূল কারণগুলি বিশ্লেষণ করলে এর পটভূমি অনুধাবণ করা যায়।
- রাশিয়া সমগ্র জার্মানিতে রুশ প্রভাবিত একটি কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। কিন্তু পশ্চিমি শক্তিবর্গ তাতে রাজি হয় নি।
- রাশিয়া জার্মানির কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি বাবদ যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ আদায় করতে চেয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমি শক্তিবর্গ এতে আগ্রহ দেখায় নি।
- বার্লিনের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বিষয়ে পশ্চিমি শক্তিবর্গের সঙ্গে 'নিয়ন্ত্রণ পরিষদে' রুশ প্রতিনিধির উত্তপ্ত বাকি বিনিময় ও সভা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে।
- ১ এপ্রিল থেকে বার্লিনে অবস্থিত পশ্চিমি সামরিক যানগুলি রাশিয়ার অধীনে চলে আসার ঘোষণা জারি করে রাশিয়া। ফলে পশ্চিমি দেশগুলি এর চরম বিরোধিতা করে।
- রাশিয়া তার অধীনস্ত জার্মানিতে ২৩ জুন মুদ্রা সংস্কারের ঘোষণা করে এবং সমগ্র বার্লিনে তা কার্যকর করা হবে বলে জানায়। পশ্চিমি রাষ্ট্রগিলি এর বিরোধিতা করে বার্লিনে তাদের নিজস্ব মুদ্রার প্রচলন করে।
এই সমস্ত ঘটনার প্রেক্ষাপটে বার্লিনকে কেন্দ্র করে সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমি শক্তিজোটের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। এই পরিস্থিতিতে সমগ্র বার্লিনে রুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ২৪ জুলাই রাশিয়া বার্লিনে প্রবেশের সড়কপথগুলিতে অবরোধ শুরু করে। এই ঘটনা বার্লিন অবরোধ নামে পরিচিত যা দীর্ঘস্থায়ী 'বার্লিন সংকটের' জন্ম দেয়।
বার্লিন অবরোধের প্রতিক্রিয়া:
বার্লিন অবরোধের ফলে বার্লিনের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ অনাহার ও চিকিৎসা হীনতার মুখোমুখি হয়।
Berlin Airlift |
১) Berlin Airlift : এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা দীর্ঘ এগারো মাস আকাশ পথে বার্লিনে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির জোগান দিয়ে যায়। এই ঘটনা 'Berlin Airlift' নামে পরিচিত। শেষ পর্যন্ত ১২ মে ১৯৪৯ সালে রাশিয়া অবরোধ প্রত্যাহার করে।
২) জার্মান বিভাজন : এভাবে 'বার্লিন অবরোধে'র অবসান হলেও বার্লিন সংকটের সমাধান হয়নি। অবরোধ প্রত্যাহারের পরপরই পশ্চিমি রাষ্ট্রজোট তাদের অধীনে থাকা অঞ্চলগুলিকে নিয়ে 'Rederal Republic of Germany' বা পশ্চিম জার্মানি গঠন করে। অন্যদিকে রাশিয়া তার জার্মান নীতি ত্যাগ করে তার প্রভাবিত অঞ্চলগুলিকে নিয়ে 'German Democratic Republic' বা পূর্ব জার্মানি গড়ে তোলে।
৩) বার্লিন প্রাচীর প্রতিষ্ঠা : ১৯৫৩ সালে স্টালিনের মৃত্যুর পর বার্লিন সমস্যা আবার জটিল হয়ে ওঠে। ১৯৫৮ সালে সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান নিকিতা ক্রশ্চেভ বার্লিন থেকে সমস্ত বিদেশী সেনার অপসারণ দাবি করে। এবং ১৯৬১ সালে পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের মধ্যে কংক্রিটের প্রাচীর প্রতিষ্ঠার করে পূর্ব জার্মানির বাসিন্দাদের পশ্চিম জার্মানিতে যাওয়া নিষিদ্ধ করে
দেয় সোভিয়েত সমর্থিত পূর্ব জার্মান সরকার।
এইভাবে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পশ্চিম জার্মানিতে আমেরিকার ও পূর্ব জার্মানিতে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রভাব বজায় ছিল। ১৯৯০ সালে জার্মান জনমতের চাপে ও পশ্চিমি বৃহৎ শক্তিবর্গের সহযোগিতায় দুই জার্মানি আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। ফলে বার্লিন সংকটের যবনিকাপাত ঘটে।
বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব :
বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে বিশেষ করে ঠান্ডা যুদ্ধের ওপর বার্লিন সংকটের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ করা যায়।
বার্লিন প্রাচীর প্রতিষ্ঠা |
এইভাবে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পশ্চিম জার্মানিতে আমেরিকার ও পূর্ব জার্মানিতে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রভাব বজায় ছিল। ১৯৯০ সালে জার্মান জনমতের চাপে ও পশ্চিমি বৃহৎ শক্তিবর্গের সহযোগিতায় দুই জার্মানি আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। ফলে বার্লিন সংকটের যবনিকাপাত ঘটে।
বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব :
বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে বিশেষ করে ঠান্ডা যুদ্ধের ওপর বার্লিন সংকটের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ করা যায়।
- বার্লিন সংকট রুশ রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিনের নীতির ব্যর্থতা প্রমাণ করে।
- এই সংকটকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং ঠান্ডা লড়াই আরও জোরদার হয়ে ওঠে।
- স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর সোভিয়েত রাশিয়া জার্মানি সম্পর্কে কিছুটা সহনশীল নীতি গ্রহণ করে।
- মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান যে 'রুশ আগ্রাসন'এর সম্ভাবনার কথা বলতেন, রাশিয়ার বার্লিন অবরোধের ফলে মার্কিন কংগ্রেসের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায়।
- এর ফলে মার্কিন কংগ্রেস আমেরিকাকে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক চুক্তি সম্পাদনের অনুমতি দেয়।
- এর পরিণতিতে এবং বার্লিন অবরোধের ফলে সৃষ্ট উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন সহ ১১ টি দেশ ন্যাটো (NATO) চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয়।
-----------------------------------
বার্লিন চুক্তির শর্তগুলো
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর মত উপস্থাপন করেছেন, ধন্যবাদ
উত্তরমুছুন