রাওলাট আইন কী? এই আইনের প্রেক্ষাপট ও শর্তগুলি উল্লেখ কর। এর বিরুদ্ধে ভারতীয়রা কী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল?
অথবা,
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড কী? এর প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই ঘটনার কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
অথবা,
রাউলাট সত্যাগ্রহ কী ? এর পটভূমি আলোচনা কর। ব্রিটিশ সরকার কীভাবে এই আন্দোলন দমন করে? ভারতীয়রা কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানায়?
উত্তর :
রাওলাট আইন কী ?
ভারতীদের ব্রিটিশবিরোধী গণ-আন্দোলন ও বৈপ্লাবিক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাটের সভাপতিত্বে পাঁচজন সদস্য নিয়ে রাওলাট কমিশন বা সিডনি কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯১৯ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় আইন সভা যে দমনমূলক আইন পাশ করে তা-ই 'রাওলাট আইন' নামে পরিচিত।
আইনের প্রণয়নের প্রেক্ষাপট (কারণ) :
১৯১৯ সালে রাওলাট আইনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এই আইন প্রণয়নের কারণ অনুধাবন করা যায়।
- 'ভারত প্রতিরক্ষা আইনে'র মেয়াদ শেষ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি হওয়া এই আইনের মেয়াদ শেষ হলে নতুন আইনের প্রয়োজন হয়।
- মুসলিমদের ক্ষোভ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক পরাজিত হয়। ব্রিটিশ সরকারের মদতে তুরস্ক ব্যবচ্ছেদ হলে ভারতীয় মুসলিমরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
- দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিদ্বেষ : দক্ষিণ আফ্রিকা সহ বিভিন্ন ব্রিটিশ ডোমিনিয়নে ভারতীয়দের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গদের অবমাননাকর আচরণ করত। এই ঘটনা ভারতীয়দের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করে।
- ব্রিটিশবিরোধী গণ-আন্দোলন : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খরা, মহামারি, বেকারত্ব বৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে ভারতীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এই ক্ষোভ ক্রমে গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়।
- বিপ্লবীদের সক্রিয়তা : এই সময় ভারতে নতুন করে বিপ্লবী আন্দোলন অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে।
এই সমস্ত কারণে ব্রিটিশ সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে যাবতীয় বিক্ষোভ ও আন্দোলনকে দমন করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার 'রাওলাট আইন' প্রণয়ন করে।
আইনের শর্তাবলী :
এই আইনের প্রধান প্রধান শর্তগুলি হল --
- প্রচারে বাধা। এই আইনে সরকার-বিরোধী সবরকম প্রচার কাজ দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হয়।
- প্রেপ্তার ও আটক। সন্দেহভাজন যেকোন ব্যক্তিকে বিনাপরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা বিনা বিচারে অনিষ্টকালের জন্য আটক বা নির্বাসন দেওয়া যায়।
- বাড়ি তল্লাশি। এই আইনে সরকার বিনাপরোয়ানায় বাড়ি তল্লাশি করতে পারবে।
- জুরি এবং সাক্ষপ্রমাণ ছাড়া বিচার। এই আইনে বিচারকরা জুরি ছাড়া ও সাক্ষপ্রমাণ ছাড়া বিচার করতে পারবেন।
- আপিলে নিষেধাজ্ঞা। এই আইনে বিচার হয় রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে কোন আপিল করা যাবে না।
- সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ। এই আইন বলবত থাকার সময় কোন সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না।
এই আইনের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বত্র তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঐতিহাসিক ডডওয়েল বলেছেন, 'এক সঙ্কটজনক মুহূর্তে রাওলাট আইন ভারতে সর্বজনীন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।'
- দেশব্যাপী প্রতিবাদ। অত্যাচারী রাওলাট আইনকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়।
- আইন পরিষদ ত্যাগ। রাওলাট আইনের প্রতিবাদে মহম্মদ আলী জিন্না, মদনমোহন মালব্য এবং মাঝার-উল-হক আইন পরিষদের সদস্যপদ ত্যাগ করেন।
- সংবাদপত্রের প্রতিবাদ। অমৃতবাজার পত্রিকা, হিন্দু, দ্য নিউ ইন্ডিয়া, বোম্বাই ক্রনিক্যাল, কেশরী প্রভৃতি পত্রিকা এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
- রাওলাট সত্যাগ্রহ। অত্যাচারী রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে গান্ধিজি এক দীর্ঘস্থায়ী সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন।এই আন্দোলন রাওলাট সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।
- জালিয়ানওয়ালাগের হত্যাকান্ড। এই আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে মানুষ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভায় যোগ দেয়। পুলিশ বিনাপ্ররোচনায় জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এই ঘটনা জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড' নামে খ্যাত।
এই আইনের প্রতিবাদে গান্ধিজিসহ অন্যান্য নেতৃত্বের দ্বারা যে ব্যাপক আন্দোলনের সূচনা হয় তা ব্রিটিশ সরকারকে আতঙ্কিত করে তোলে। ড. বিপান চন্দ্র লিখেছেন, 'সারা দেশে যেন বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ল। ভারতীয়রা আর বিদেশি শাসনের কাছে নতি স্বীকার করতে রাজি নয়।
--------------//------------
Good write and short thorey
উত্তরমুছুনগূরুত নেই
উত্তরমুছুনখুব ভালো
উত্তরমুছুনআরো চাই
উত্তরমুছুনThank you
উত্তরমুছুনঅসংখ্য ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনOrthonotik jatiobadi kake bole
উত্তরমুছুনThanks sir
উত্তরমুছুন