হান্টার কমিশনের সুপারিশ মূল্যায়ন কর
![]() |
হান্টার কমিশনের সুপারিশ মূল্যায়ন করো |
আধুনিক শিক্ষার প্রসারে হান্টার কমিশনের সুপারিশ মূল্যায়ন কর
Evaluate the recommendations of the Hunter Commission on the promotion of modern education
হান্টার কমিশন কী:
হান্টার কমিশন বা ইন্ডিয়ান এডুকেশন কমিশন হল আধুনিক ভারতের ইতিহাসে প্রথম শিক্ষা কমিশন। ভারত সরকার এই কমিশন গঠন করে ১৮৮২ সালে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অগ্রগতি পর্যালোচনা করার জন্য।হান্টার কমিশনের সদস্য :
স্যার উইলিয়ম উইলসন হান্টারকে সভাপতি করে গঠিত এ কমিশনের অন্যান্য সদস্যগণ ছিলেন আনন্দমোহন বসু, এ.ডব্লিউ ক্রফট্ (Director of Public Instruction, Bengal), ভূদেব মুখোপাধ্যায়, মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, স্যার সৈয়দ আহমদ খান প্রমুখ।হান্টার কমিশন গঠনের কারণ ( উদ্দেশ্য ) :
হান্টার কমিশনের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করলে এই কমিশন গঠনের কারণ উপলব্ধি করা যায়। এই উদ্দেশ্য গুলি হল :
- উডের প্রস্তাব পর্যালোচনা : ১৮৫৪ সালের উড-এর শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার সময় থেকে ১৮৮২ পর্যন্ত ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার পর্যালোচনা করা
- নতুন সুপারিশ জমা করা : পর্যালোচনার পর শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি অপসারণ এবং আরও অগ্রগতি ঘটানোর জন্য করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করা।
- মিশনারিদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা : ১৮৫৪ সালের ডেসপ্যাচের সুপারিশমালা বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতার যে অভিযোগ ইংল্যান্ডে মিশনারিরা করেছিলেন তার পর্যালোচনা করা। মিশনারিদের অভিযোগ ছিল, সরকার প্রাথমিক শিক্ষার উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করার ফলে কমিশনের সুপারিশের মূল অংশ থেকে উচ্চশিক্ষা বাদ পড়ে গেছে।
- মিশনারীদের ভূমিকার মূল্যায়ন : শিক্ষায় ক্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকার মূল্যায়ন করা।
হান্টার কমিশনের সুপারিশ সমূহ :
কমিশন ১৮৮৩ সালের অক্টোবর মাসে রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টে কমিশন সুপারিশ করে যে,
প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ :
- প্রাথমিক শিক্ষাকে জনগণের শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়সমূহের শিক্ষা মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রদান করা হবে এবং তা কোনক্রমেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ হবে না।
- আইনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ বিস্তৃতি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে
- স্কুলগুলিকে প্রাথমিক শিক্ষা বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে যেখানে দেশীয় স্কুল রয়েছে সেখানে সেগুলিকে সহযোগিতা প্রদান এবং সেগুলির মানোন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
- প্রাথমিক শিক্ষাকে জনশিক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থার ওই অংশ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে, যেখানে শিক্ষা খাতে নির্দিষ্টকৃত স্থানীয় অর্থের উপর এবং প্রাদেশিক রাজস্বের উপর একচেটিয়া দাবি রয়েছে।
- পৌর ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার উভয়কেই স্বতন্ত্র স্কুল ফান্ড রাখতে হবে।
- পরিদর্শন ও তত্ত্বাবধান, সম্ভবপর স্থানে নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
- গ্রামীণ পরিবারের সুবিধানুযায়ী বিদ্যালয়ে অবস্থানের সময় নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে।
- ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান প্রভৃতির ব্যবস্থা করতে হবে।
মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ক সুপারিশ :
- সমাজের সুষম অগ্রগতির জন্য প্রাথমিক শিক্ষার মতো উচ্চ শিক্ষারও সমভাবে প্রয়োজন আছে এবং এ কারণে কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়েও তেইশটি সুপারিশ করে।
- ইংরেজি মাধ্যমিক স্কুলসমূহকে স্থানীয় সহযোগিতা লাভের সাপেক্ষে সমর্থন দিতে হবে।
মূল্যায়ন :
ভারত সরকার কমিশনের দেওয়া প্রায় সকল সুপারিশই অনুমোদন করে। ফলে, ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত অগ্রসর হতে শুরু করে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কৃষি, পদার্থবিদ্যা ইত্যাদি পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষাকে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় দিকের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। নিম্নবর্ণ, নারী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষার ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছিল।---------------xx---------------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন