সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে কীভাবে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। এই ঘটনার কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

অথবা,
চিনে কিভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে? চিনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাক্ষেত্রে এর কী প্রভাব পড়ে?
অথবা,
চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের কারণ ( পটভূমি ) ব্যাখ্যা কর। এর প্রভাব আলোচনা কর। 

চিন ও পাশ্চাত্য শিক্ষা :
ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত চিন ( বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ছাড়া ) বড় ধরণের কোনো বৈদেশিক সভ্যতা-সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয় নি। ফলে চিনের সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি --- সবকিছুই অন্তর্মুখী ও পশ্চাৎপদ হয়ে পড়ে। ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটতে শুরু করে।
পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ( বুদ্ধিজীবীদের উদ্ভবের ) কারণ :
যে সমস্ত কারনে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ও আধুনিক বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় তা নিন্মরূপ :
  1. জাপানের কাছে পরাজয়ে : ১৮৯৪-৯৫ সালের যুদ্ধে ছোট্ট রাষ্ট্র জাপানের কাছে পরাজয়ের ফলে তারা বুঝতে পারে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ছাড়া চিনের অগ্রগতি সম্ভব নয়। ফলে চিনের বহু স্বাধীনচেতা বুদ্ধিজীবী পাশ্চাত্য শিক্ষাকে স্বাগত জানায়। আর এরই সূত্র ধরে চিনে ধীরে ধীরে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়।
  2. বিদেশী  ভাষা শিক্ষা : ১৮৬২ সালে চিনে সর্বপ্রথম বিদেশী ভাষা শিক্ষার কলেজ স্থাপিত হয়। নাম 'তুং ওয়েন কুয়ান'। এই কলেজে ইংরেজি, ফরাসি, রুশ, জার্মান ভাষা সহ পাশ্চাত্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ১৮৬৩-৬৬ সালের মধ্যে সাংহাই, ক্যান্টন, ফুচাও প্রভৃতি শহরে এই ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ফলে ১৮৯০ সালের মধ্যে চিনে পাশ্চাত্যের আদর্শ ও ধ্যান-ধারণা ছড়িয়ে পড়ে।
  3. মিশনারি উদ্যোগ : খ্রিষ্টান মিশনারি রবার্ট মরিসন ১৮০৫ সালে চিনে আসেন এবং ১৮৩০ সালে আমেরিকান মিশনারি এলিজা কোলম্যান চিনে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে টি. রিচার্ড, ইয়াং জে. অ্যালেন, এ পি মার্টিন প্রমুখ মিশনারি চিনে এসে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে কাজ করেন। 
  4. কাং ইউ ওয়ে-র উদ্যোগ : অষ্টাদশ শতকের ইউরোপীয় দর্শন ও রাজনৈতিক আদর্শের অনুরাগী হয়ে ওঠেন কাং ইউ ওয়ে। তিনি  টি রিচার্ড, ইয়ং জে অ্যালেন ও অন্যান্য মিশনারিদের লেখার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাঁদের সঙ্গে চিনে আধুনিক শিক্ষার প্রসারের জন্য কাজে নেমে পড়েন।
  5. মাঞ্চু সরকারের ভূমিকা : ১৯০১ সালে মাঞ্চু সরকার শিক্ষা সংস্কারের ওপর জোর দেন। ১৯০৯ সালের মধ্যে চিনে লক্ষাধিক আধুনিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। সেই সঙ্গে মেধাবী ছাত্রদের জাপান এবং পাশ্চাত্য দেশগিলিতে আধুনিক শিক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
  6. পাশ্চাত্য গ্রন্থের অনুবাদ : এই সময় চিনা ভাষাকে সরলীকরণ করেন হু-শী, চেন তু-সিউ প্রমুখ ব্যক্তি। শুরু করেন সরলভাষায় পত্রিকা প্রকাশ ও পুস্তক রচনা। পাশ্চাত্যের বহু মূল্যবান গ্রন্থ চিনা ভাষায় অনুবাদ শুরু হয়। এই সমস্ত গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে সমাজে এক শিক্ষিত সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় যাদের অনেকেই বুদ্ধিজীবী হিসাবে খ্যাতিলাভ করে। 
 এইভাবে চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে, এবং সেই সূত্রে এক বুদ্ধিজীবী শ্রেণির জন্ম হয়। আর এদের নেতৃত্বেই বিংশ শতকে চিনে প্রকৃত বৌদ্ধিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।
পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব ( বুদ্ধিজীবীদের প্রভাব ) :
  • প্রথমত : ১৮৯৮ সালে কাং ইউ ওয়ে-র নেতৃত্বে শুরু হয় সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলন শত দিবসের সংস্কার নামে পরিচিত।
  • দ্বিতীয়ত : ১৯১৬ সালে সাই উয়ান-পেই পিকিং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হলে তাঁর নেতৃত্বে নতুন বৌদ্ধিক আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। 
  • তৃতীয়ত : অধ্যাপক চেন-তু-শিউ র প্রভাবে ছাত্ররা প্রাচীন কনফুসীয় মতবাদ ত্যাগ করে যুক্তিবাদ, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজবাদ প্রভৃতি আদর্শে দীক্ষিত হয়ে ওঠে।
  • চতুর্থত : হু শি, চেন-তু-সিউ প্রমুখ গণ আন্দোলনের চেতনা বৃদ্ধির জন্য 'পাই-হুয়া' বা কথ্য ভাষায় সাহিত্য রচনার সূচনা করেন। ফলে চিনা সাহিত্যের যথেষ্ট উন্নতি হয়। চিনা সাহিত্য প্রকৃতই জনগণের সাহিত্য হয়ে ওঠে।
  • পঞ্চমত : চিনে এই সময় বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। এদের মধ্যে জাগরণ, জ্ঞানের আলো, নব তারুণ্য, নতুন জোয়ার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এইগুলি দেশবাসীকে নব মার্কসবাদ আধুনিকতা, ও বহু নতুন ভাবাদর্শে দীক্ষিত করে।
এইভাবে বুদ্ধিজীবীদের প্রভাবে বৌদ্ধিক আন্দোলনের প্রসার ঘটলে দেশের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে ওঠে। যেমন হুনান প্রদেশে মাও-সে-তুং 'নতুন গণ অধ্যয়ন সমিতি' স্থাপন করেন। এদের রাজনৈতিক ও বৌদ্ধিক কর্মকান্ডে চিনে এক ধরণের নবজাগরণ ঘটে যায়।
-------------------//--------------------

মন্তব্যসমূহ

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)
OUR BOOKS fOR WBBSE & WBCHSE


বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই...

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক...

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়...

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি ব...

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও ...

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন...

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থি...

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা...

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু ...