সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ডিরোজিও কে ছিলেন? ইয়ংবেঙ্গল কী? ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন বলতে কী বোঝ? এই আন্দোলনের মূল্যায়ন কর।

অথবা,

নব্যবঙ্গ কাদের বলা হয়? এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য কী ছিল? এই আন্দোলনের সাফল্য ও ব্যর্থতার মূল্যায়ন কর।

অথবা,

ডিরোজিওর কয়েকজন অনুগামীর নাম লেখো। এরা ইতিহাসে কী নামে পরিচিত? তাঁদের কর্মসূচি বর্ননা কর। এ প্রসঙ্গে তাঁদের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ কর।


ডিরোজিও ও ইয়ংবেঙ্গল :

ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার সামাজিক ও সংস্কৃতিক আন্দোলনে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। তিনি ছিলেন হিন্দু কলেজের শিক্ষক। ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে হিন্দু কলেজের ছাত্রদের ( তাঁর অনুগামীদের ) নিয়ে তিনি যে সংগঠন গড়ে তোলেন বাংলার ইতিহাসে তা ( তাঁর অনুগামীরা ) 'ইয়ংবেঙ্গল' বা 'নব্যবঙ্গ' নামে পরিচিত।

নব্যবঙ্গ আন্দোলন :

পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে এসে এবং মিল, বেন্থাম, টম পেইন, রুশো, ভলতেয়ার প্রমুখ দার্শনিকদের রচনা পাঠের ফলে ডিরোজিওর অনুগামীদের মনে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনষ্কতা, মানবতাবাদ, জাতীয়তাবাদ  ইত্যাদি চেতনার জন্ম হয়। ডিরোজিওর নেতৃত্বে এই তরুণরা প্রচলিত হিন্দু ধর্ম ও সামাজিক কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু করেন তা 'নব্যবঙ্গ আন্দোলন' নামে পরিচিত।

নব্যবঙ্গ আন্দোলনের লক্ষ্য (উদ্দেশ্য ) :

জাতীয়তাবাদের মন্ত্রগুরু রাজা রামমোহন রায় ভারতে যে যুক্তিবাদের বীজ বপন করেন ডিরোজিও সেটিকে মহিরুহে পরিণত করার চেষ্টা করেন। তাঁর এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য (লক্ষ্য) ছিল --
  1. অন্ধবিশ্বাস ত্যাগ করে ছাত্রদের যুক্তিবাদী ও সত্যসন্ধানী করে তোলা।
  2. ছাত্রদের মধ্যে বিজ্ঞানমনষ্কতা ও মানবতাবাদের প্রসার ঘটানো। 
  3. প্রচলিত সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার বা কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে স্বাধীন মতামত প্রদানের ব্যবস্থা করে ছাত্রদের মনে স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটানো।
  4. নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলা। 
  5. সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা।
  6. স্বদেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটানো ইত্যাদি। 
আর এক্ষেত্রে তিনি অনেকটাই সফল হয়েছিলেন। শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর 'রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ' গ্রন্থে শিক্ষক ডিরোজিও সম্পর্কে বলেছেন, "চুম্বক যেমন লৌহকে আকর্ষণ করে, তেমনি তিনিও বালকদিগকে আকর্ষণ করিতেন।" প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন ছাত্রদের বন্ধু ও পথপ্রদর্শক।

ডিরোজিওর নেতৃত্বে আন্দোলন :

ইয়ংবেঙ্গল দলের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য ডিরোজিও বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
  • অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা : 
প্রচলিত সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার বা কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে স্বাধীন মতামত প্রদানের ব্যবস্থা করে ছাত্রদের মনে স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে ১৮২৮ সালে মানিকতলায় এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
  • বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশ :
১) ডিরোজিওর 'অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন'-এর মুখপাত্র ছিল এথেনিয়াম।
২) ১৮৩০ সালে প্রকাশিত হয় পার্থেনন পত্রিকা। এতে নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।
৩) ডিরোজিও 'ক্যালাইডোস্কোপ' পত্রিকার মাধ্যমে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন।
৪) এছাড়া 'হেসপেরাস''ক্যালকাটা লিটারেরি গেজেট' নামে দুটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এই সমস্ত পত্রিকার মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা ও স্বদেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটানোর উদ্যোগ নেন। ভারতের প্রতি গভীর দেশপ্রেমের প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর 'ফকির অব জঙ্গিরা' এবং 'ভারতবর্ষ, আমার স্বদেশের প্রতি' কবিতায়।

ডিরোজিও পরবর্তী আন্দোলন :

ডিরোজিওর মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীরা আন্দোলনের হাল ধরেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, প্যারীচাঁদ মিত্র, রামতনু লাহিড়ী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, তারাচাঁদ চক্রবর্তী প্রমুখ।
  • সংগঠন প্রতিষ্ঠা :
এঁরা যে সমস্ত সংগঠন গড়ে তোলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সাধারণ জ্ঞানোপার্জনী সভা (১৮৩৬)। রাজনৈতিক কার্যকলাপ প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁরা ১৮৪৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন 'বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি'।
  • পত্রিকা প্রকাশ :
অনুগামীদের দ্বারা প্রকাশিত কয়েকটি পত্রিকাও ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল 'জ্ঞানান্বেষণ', 'এনকোয়্যারার', বেঙ্গল স্পেকটেটর', হিন্দু পাইওনিয়ার'।

নব্যবঙ্গ আন্দোলনের কার্যকলাপ ( কর্মসূচি ) :

ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনকারীরা যে সমস্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সেগুলি হল :  খ্রিষ্টান পাদরিদের গোড়ামি, স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য, দাস প্রথা, নারীনির্যাতন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ভারতের পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থা, কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্য, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, এবং সর্বপরি সামাজিক ও ধর্মীয় কুপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।

ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা ( ব্যর্থতা ) :

কিছু অন্তর্নিহিত সীমাবদ্ধতার কারণে এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। এই কারণগুলি হল :
  1. ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের কোন গঠনমূলক কর্মসূচি ছিল না। তাঁদের কিছু চিন্তাধারা ও কর্মসূচি ছিল নেতিবাচক। ফলে তাঁরা তেমন জনসমর্থন পাননি।
  2. তাঁদের আন্দোলন শহরকেন্দ্রিক কিছু অভিজাত পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এঁদের কোনো যোগসূত্র গড়ে ওঠে নি।
  3. দেশের দুর্দশাগ্রস্থ কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের সমস্যাবলি তাঁদের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হয় নি।
  4. এই আন্দোলনের সদস্যরা সীমাহীন প্রগতিশীলতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এ ধরণের প্রগতিশীলতা সাদরে গ্রহণ করার মত সহনশীলতা তখনও সমাজে তৈরি হয় নি।
  5. তৎকালীন সমাজের একটি বড় অংশ ছিল মুসলিম। তাদের এই আন্দোলনের স্পর্শ করে নি।
  6. সর্বপরি ডিরোজিওর মৃত্যুর পর এই আন্দোলনের অনেক কর্মী চিরাচরিত ঐতিহ্যে ফিরে যায়।

ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন : গুরত্ব বা তাৎপর্য :

এই সমস্ত কারণে ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। পরবর্তী নেতৃত্বের মধ্যেও মতপার্থক্য দেখা দেয়। ডেভিড কফ তাঁদের 'ভ্রান্ত পুথিপড়া বুদ্ধিজীবী' বলে সমালোচনা করেন। ড. সুমিত সরকারও এদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে একথা ভুললে চলবে না যে তাঁদের কার্যাবলীকে আপাতদৃষ্টিতে নৈরাজ্যবাদী বলে মনে হলেও বাংলার সমাজ জীবনে তার গভীর প্রভাব পড়েছিল। বাঙালির মধ্যে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনস্কতা, ও কুসংস্কার মুক্ত মানসিকতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল।
--------------------//-------------------

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)
OUR BOOKS fOR WBBSE & WBCHSE


বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই...

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক...

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়...

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি ব...

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও ...

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন...

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থি...

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা...

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু ...