সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সার্ক কী? সার্কের উদ্দেশ্য কী ছিল? সার্ক গড়ে ওঠার পটভূমি। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে সার্ক কতটা সফল

সার্ক কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? গড়ে ওঠার পটভূমি আলোচনা করো। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে কতটা সফল হয়েছিল? (২০১৬)

সার্কের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য,  সার্কের পটভূমি, স্বার্থের সাফল্য ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন

What is SAARC? What was its purpose? Discuss the background of its development. How successful was SAARC in meeting its goals and objectives?

সার্ক কী?

সার্ক (SAARC) হলো দক্ষিণ এশিয়ার একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা। সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালের ৮ই ডিসেম্বর। প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হল ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ। পরবর্তী সময়ে অন্তর্ভুক্ত হয় আফগানিস্তান। পর্যবেক্ষক হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে চীন ও জাপানকে। এর সদর দপ্তর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু।

সার্কের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কী ছিল?

সার্কের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা ও এ বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা। সার্ক সনদের প্রথম ধারাতেই তা বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

১) উন্নয়ন :

সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে অগ্রগতি ঘটানো।

২) আত্মনির্ভরতা :

প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষা ও যৌথ উদ্যোগে আত্মনির্ভরতার শক্তি বৃদ্ধি করা।

৩) উৎসাহ প্রদান : 

আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সক্রিয় সহযোগিতায় উৎসাহ দান করা।

৪) তথ্যের আদান-প্রদান বৃদ্ধি : 

পরস্পরের সহযোগিতায় দেশের নিরাপত্তা ও উন্নতির লক্ষ্যে সদস্য দেশগুলির মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান বৃদ্ধি করা।

৫) জনকল্যাণে কাজ করা :

পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের জনগণের কল্যাণ সাধন ও তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটানো।

৬) বোঝাপড়া বৃদ্ধি করা : 

সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস বোঝাপড়া ও সাংবিধানশীলতার পরিবেশ তৈরি করা।

৭) সার্বভৌমত্ব রক্ষা :

সদস্য রাষ্ট্রগুলির ভৌগোলিক অখন্ডতা রক্ষা করা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।

৮) নিরাপত্তা বিধান করা :

প্রত্যেকটি সদস্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা এবং সমস্ত রকম সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করা।

৯) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান :

সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা।

সার্ক গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি :

সার্ক গড়ে ওঠার পিছনে একাধিক কারণ ছিল। এই কারণগুলো বিশ্লেষণ করলেই এর পটভূমি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

১) বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি :

ক) মুজিব-হত্যাজনিত পরিস্থিতি :

১৯৭৫ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে সরিয়ে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন জিয়াউর রহমান। এই পরিস্থিতিতে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন প্রতিবেশী দেশগুলির সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যাবে না।

জল বন্টন ও ভুমি সংক্রান্ত সমস্যা :

এছাড়া ভারতের সঙ্গে জল বন্টন ও ভূমি সংক্রান্ত একাধিক সমস্যার সমাধান করা দরকার ছিল। এ বিষয়ে ভারত ও নেপালসহ আঞ্চলিক দেশগুলোর সহযোগিতা একান্ত আবশ্যক। এই ভাবনা থেকেই জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগত চেষ্টায় ১৯৭৯ সালে সার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।

২) আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট :

ক) সিকিমের পরিস্থিতি :

১৯৭৫ সালে ভারত সরকার সিকিমকে ভারতভুক্ত করে নেয়। ফলে বাংলাদেশসহ ছোট ছোট প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি ভীত হয়ে পড়ে।

খ) বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা :

১৯৭৭ সালে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ভারতে ইন্দ্রা গান্ধী পরাজিত হন, পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টুকে সরিয়ে জেনারেল জিয়াউল হক ক্ষমতা দখল করেন, শ্রীলঙ্কায় শ্রীমতি বন্দর নায়কের সরকারকে উৎখাত করেন জে. আর. জয়বর্ধনে। বাংলাদেশ দু বছর আগেই (১৯৭৫) এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে এসব দেশের নতুন শাসকেরা নিজেদের প্রয়োজনেই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী হন।

গ) সত্তর দশকের অর্থনৈতিক সংকট :

১৯৭০ এর দশকে দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। ১৯৭৯ সাল নাগাদ দ্বিতীয় তৈল সংকটের ফলে যা আরও গভীর হয়। আসিয়ান (ASEAN) জোটভুক্ত দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি পারস্পরিক সহযোগিতা মাধ্যমে এই সংকট অনেকটাই কাটিয়ে ফেলে। এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট ছোট দেশ গুলিও এই ধরনের আঞ্চলিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে।

৩) আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট :

ক) গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলন :

আলোচ্য সময় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে New International Economic Order 1974, Non Aligned Summit 1976, United Nations conference 1978 এবং 1979 সালে G-7 এর বৈঠক নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির সামগ্রিক আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য সার্বিক গাঁটছাড়া বাঁধার প্রয়োজন আছে।

খ) আফগানিস্তানে সোভিয়েত অনুপ্রবেশ :

এছাড়া ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানের সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুসম্পর্কের গুরুত্ব বেড়ে যায়।

৪) সার্ক প্রতিষ্ঠা :

উপরোক্ত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান জিয়াউর রহমানের ব্যবস্থাপনায় ঢাকা শহরে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ মিলিত হয়ে সার্ক গঠন করে।

সার্কের সাফল্য ও ব্যর্থতা :

বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সার্কের প্রতিষ্ঠা হলেও বহু ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থ হয়েছে।

১) সার্কের সমস্যা বা ব্যর্থতার কারণ :

ক) রাজনৈতিক অস্থিরতা : দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে ভারত-পাক বিরোধের কারণে বহু ক্ষেত্রেই লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

খ) ভারত শ্রীলঙ্কা সম্পর্কের অবনতি : শ্রীলংকার তামিল জঙ্গিদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ঘটনায় শ্রীলংকা ভারতের মদন দেয়ার অভিযোগ তোলে। ফলে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়।

গ) ভারসাম্যহীনতা : ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সামরিক ও আর্থিক শক্তির ব্যবধান থাকায় তাদের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।

ঘ) মতপার্থক্য : সার্কের কর্মপদ্ধতি ও কার্যকলাপ সম্পর্কে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। এই মতভেদ সার্কের সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলেছে।

ঙ) সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ : তামিল জঙ্গি হানায় শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতির মৃত্যু, ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস, ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলা, বাংলাদেশে ভারত বিরোধী মৌলবাদ বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে মধ্যে সদস্য দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ এই সংগঠনকে দুর্বল করেছে।

চ) পর্যাপ্ত সহযোগিতার অভাব : পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্য নিয়ে সার্ক গঠিত হলেও অনেক সময় সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পর্যাপ্ত সহযোগিতার মনোভাব লক্ষ্য করা যায় না।

২) সার্কের সাফল্য :

সমস্যা থাকলেও সার্কের সাফল্যকে খাটো করে দেখা যায় না। নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সার্কের সাফল্য উল্লেখযোগ্য।

প্রথমত : সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক অর্থনৈতিক আদান-প্রদান ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্বিতীয়ত : সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধেও মোটামুটি সন্তোষজনক সাফল্য এসেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয়।
তৃতীয়ত : দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য সার্ক বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।
চতুর্থত : খাদ্য নিরাপত্তার বিষয় সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পঞ্চমত : শিশু কন্যাদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে স্যারভুক্ত দেশ গুলি পারস্পরিক সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
পরিশেষে, নেপালের রাজধানী কান্ড কাঠমান্ডুতে সার্কের স্থায়ী সচিবালায় প্রতিষ্ঠা করে সার্কের কর্মসূচি কে বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সার্কের মূল্যায়ন :

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় সার্ক তার লক্ষ্য পূরণে সম্পূর্ণ সমর্থ্য না হলেও তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেনি। আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মান উন্নয়নে সার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
----------xx---------

মন্তব্যসমূহ



বাংলা বই ★ দ্বাদশ শ্রেণি
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার 👆আদর্শ প্রশ্নোত্তরের একমাত্র পোর্টাল

জনপ্রিয় প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কী? এর উদ্দেশ্য কী ছিল? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তগুলি (বৈশিষ্ঠ্য) উল্লেখ কর। ভারতের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে এই ভূমি-ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এপ্রসঙ্গে ভারতের কৃষক সমাজের ওপর এই বন্দোবস্ত কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল বর্ননা কর । উত্তর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল এক ধরণের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ।   ১৭৯৩ সালে  লর্ড কর্ণওয়ালিস বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় এই ভূমি-ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তীকালে বারাণসী , উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে  এই ব্যবস্থা  চালু করা হয় । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি । কোম্পানির কর্মচারী ও ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার ডাও ১৭৭২ সালে  প্রথম  চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন । এরপর হেনরি পাত্তুলো , ড্যাক্রিস , টমাস ল প্রমুখ এই বন্দোবস্তের সপক্ষে যুক্তি দেখান । ১৭৮৬ সালে কর্ণওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন ।  তিন বছর ধরে  তিনি  বাংলার ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যপক অনুসন্ধান চালান ।  এরপর ১৭৯০ সালে দেশীয় জমিদারদের সঙ্গে দশ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন, যা ‘ দশসালা বন্দোবস্ত ’ নামে পরিচিত । সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন , ইংল্যান্ডের কর্তপক্ষ অনুমোদন করলে এই বন্দোবস্তই ‘ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ’ -এ পরিণত হবে

জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা , জাদুঘর কী ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি বর্ননা কর । অথবা , জাদুঘর বলতে কী বোঝ ? আধুনিক ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব লেখ । উঃ জাদুঘরের সংজ্ঞা বাংলা ‘ জাদুঘর ’ শব্দটির ইংরাজি প্রতিশব্দ হল মিউজিয়াম ( Museum) । ‘ মিউজিয়াম ’ শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক শব্দ Mouseion ( মউসিয়ান) , যার অর্থ হল গ্রীক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউসদের মন্দির । এই ধরণের মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার , প্রাচীন শিল্পকলা প্রভৃতির সংগ্রহশালা গড়ে উঠত । ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম -এর মতে, জাদুঘর হল একটি অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। উদাহরণ – ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিদর্শন। এখানে পৃথক পৃথক ঘরে পৃথক পৃথক বিষয়ের নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। জাদুঘরের উদ্দেশ্য , ক

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই কী : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে 'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য : 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে  এখানে ক্লিক কর এবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি : ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়ায়

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ননা কর।

পলাশির যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দি মারা যান । এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন । সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে , যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ ।   এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে । সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাবে এই বিরোধে সিরাজেরে ‘ অহমিকাবোধ ’ ও ‘ অর্থলোভ ’ দায়ী ছিল কিনা । পলাশির যুদ্ধের পটভূমি / কারণ সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি হল –   আনুগত্যদানে বিলম্ব। সিরাজ বাংলার সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি কোম্পানিগুলি উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছা করে উপঢৌকন পাঠাতে দেরি করে। এতে সিরাজ অপমানিত হন।   ষড়যন্ত্রের সংবাদ। সিংহাসনে বসার সময় থেকে ঘষেটি বেগম, সৌকত জঙ্গ ও কয়েকজন রাজকর্মচারি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিলেন। খবর আসে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইংরেজরা যুক্ত আছে এবং তাঁকে সরিয়ে অনুগত কাউকে সিংহাসনে বসানোর চক্রান্ত করছে।   কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান। ঘষেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢা

বাংলার সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার সমাজ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, ঊনবিংশ শতকে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর। অথবা, উনিশ শতকের নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল? এ প্রসঙ্গে নারীজাতির উন্নয়নে তাঁর অবদান ব্যাখ্যা কর।  বিদ্যাসাগর ও সংস্কার আন্দোলন : ঊনবিংশ শতকে ভারতে যে কজন সংস্কারকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। তাঁর মধ্যে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রবল যুক্তিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রগাঢ় মানবতাবাদ, এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতে, ' যার মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মত এবং হৃদয়বত্তা বাঙালি জননীর মত। ' বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা : বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। এক . শিক্ষা সংস্কার, দুই . সমাজ সংস্কার। তবে তাঁর এই দুই প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে ছিল নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি। (১) 

চিনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ কর। এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা কর। (২০১৬)

অথবা, বিংশ শতকে চিনে ৪ ঠা মে-র আন্দোলনের উত্থান ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। চিনের সেই সময়কার দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের নাম লেখো। অথবা, চিনের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর। এই আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।  ৪ ঠা মে-র আন্দোলন : ১৯১৪  সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনে আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চীন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর তারা কোনো সুবিচার পায় নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনা জাতীয়তাবাদী জনগণ চেন-তু-শিউ এর নেতৃত্বে  ১৯১৯ সালে ৪ ঠা মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার -এ  এক আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলন চিনের ইতিহাসে ৪ ঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের কারণ ( পটভূমি ) : এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণগুলি অনুধাবন করা যায়। ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : ১৯১১ সালে বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াত-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ইউয়ান-সি-কাই  - এর অনুকূলে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর  ইউয়ান-সি-কাই  সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিবাদ করলে কুয়োমি

তিন আইন কী?

তিন আইন কী? ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। যে আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার এই ঘোষণা জারি করে তাকে ' তিন আইন ' বলে।

'মুক্তদ্বার নীতি' (Open Door Policy) কী?

চিনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের ফলে আমেরিকা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করে এর ফলে চিনে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে ১৮৯৯ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চিন সম্পর্কে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা মুক্তদ্বার নীতি নামে পরিচিত। এই নীতিতে বলা হয়, বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা অধিকৃত চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার সমান বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে হবে।

ভাইকম সত্যাগ্রহ কী

ভাইমক বর্ণহিন্দুদের একটি মন্দির । দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরে এটি অবস্থিত। এই মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। শ্রীনারায়ণ গুরু বর্ণহিন্দুদের এই বর্নবিদ্বেষী প্রথার বিরুদ্ধে এবং মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের হাঁটার দাবিতে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা ভাইকম সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। আন্দোলনের ব্যাপকতায় মুগধ হয়ে গান্ধিজি একে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন জয়যুক্ত হয়।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল?

কোন পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) শুরু হয়? এই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো। এই মামলার ফলাফল কী হয়েছিল? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) কী? এই প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই মামলার পরিণতি কী হয়েছিল? অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের একটি উদাহরণ দাও। এপ্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। এই মামলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ব্রিটিশ সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯) হল এরকমই এক দমননীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মামলার প্রেক্ষাপট : ১) শ্রমিক-মালিক বিরোধ । ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পায়ন শুরু হলে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে মালিক শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারে শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে তুলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তায় পড়ে যা